দেশে সড়ক দুর্ঘটনা যেন কমছেই না। গত মাসে ৪৪২ দুর্ঘটনায় ৪৩২ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। সংগঠনটির দেয়া তথ্যমতে, ৪০৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৭৮ জন নিহত ও ৭৯৪ আহত হয়েছেন। এর মধ্যে ১৪২টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৪৬ জন নিহত হয়েছেন। এই সময়ে ১১টি নৌযান দুর্ঘটনায় ১৭ জন নিহত, ৯ জন আহত এবং ৬ জন নিখোঁজ রয়েছেন। এছাড়া ২৮টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ৩৭ জন নিহত এবং ১৯ জন আহত হয়েছেন।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশন ৯টি জাতীয় দৈনিক, সাতটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের দুর্ঘটনাবিষয়ক প্রতিবেদনটি পুরোপরি সঠিক, তা বলা যায় না। কেননা সব দুর্ঘটনার তথ্য পত্রিকায় প্রকাশিত হয় না। তাই বলা যায়, দুর্ঘটনার প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশিই হবে।
সড়ক দুর্ঘটনার বিষয়ে মন্ত্রী, হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টে নির্দেশনার আছে। আছে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা। বিদ্যমান আইন ও নির্দেশনা যথারীতি পরিপালিত হলে দুর্ঘটনা কমত বলেই ধারণা।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএ’র তথ্যমতে, দেশে ফিটনেসবিহীন যানবাহনের সংখ্যা পাঁচ লাখের কাছাকাছি। ভুয়া চালক আছেন প্রায় ২০ লাখ। এটি বলা বোধকরি, অত্যুক্তি হবে না, যে পরিবহন মালিকদের উদাসীনতার কারণেই সড়ক দুর্ঘটনা হচ্ছে। কেন তারা ফিটনেসবিহীন গাড়ি সড়কে নামান, অদক্ষদের চালক হিসেবে নিয়োগ দেন। আমাদের ট্রাফিক পুলিশও কম দায়ী নয়। নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন চলাকালে সড়কে গাড়ির কাগজপত্র ও চালকদের লাইসেন্স পরীক্ষা করে শিক্ষার্থীরা। তারা অনেক গাফিলতি ও ফাঁকফোকর পেয়েছে। তারপর নানা কৌশলে শিক্ষার্থীদের নিবৃত্ত করা হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে দাবড়ে চলছে ফিটনেসবিহীন গাড়ি।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউট (এআরআই) কয়েক বছর আগে বলেছে, ৯০ শতাংশ দুর্ঘটনার পেছনে অতিরিক্ত গতি ও চালকের বেপরোয়া মনোভাব দায়ী। মহাসড়কে কম গতির ছোট যানবাহন চলাচলেও দুর্ঘটনা ঘটে। ২০১৫ সালে মহাসড়কে যানবাহনের সর্বোচ্চ গতিসীমা ৮০ কিলোমিটার নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। ওই বছর জাতীয় মহাসড়কে সিএনজিচালিত থ্রিহুইলার, হিউম্যান হলার, নছিমন, করিমন ও ভটভটি প্রভৃতি ধীরগতির যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়, কিন্তু আইনের প্রয়োগ হয় না। সরকারেরই কোনো কোনো মন্ত্রী পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের পক্ষ নিয়ে ধর্মঘটের ডাক দেন বলে অভিযোগ রয়েছে। মূলত এ কারণেই সড়কে শৃঙ্খলা ফিরেছে না বলে সাধারণ মানুষের ধারণা।
সড়ক দুর্ঘটনার কিছু কারণ এখন শিশুদের জানা। যেমনÑনির্দিষ্ট লেন ধরে গাড়ি না চালিয়ে সড়কের মাঝ দিয়ে গাড়ি চালানো, ফিটনেসবিহীন গাড়ি চালানো, মাদক সেবন করে গাড়ি চালানো, চালকদের বেপরোয়া গতিসহ ভুলপথে বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানো, যথেচ্ছ ওভারটেকিং প্রভৃতি। দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো সহজ বিষয়গুলো গণপরিবহন মালিক ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার কর্তাব্যক্তিরা দেখেও দেখেন না। চালকদের দক্ষতা বিচার করে ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয়া এবং এ ক্ষেত্রে যেন কোনো দুর্নীতি না ঘটে, সেটিও নিশ্চিত করা আবশ্যক। সুস্পষ্ট রাজনৈতিক অঙ্গীকার থাকলেই আইনের যথাযথ প্রয়োগ সম্ভব এবং তাতে সড়ক দুর্ঘটনা কমবে বলেই প্রত্যাশা।