Print Date & Time : 8 July 2025 Tuesday 2:09 am

আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ আকিজ তাকাফুল লাইফের বিরুদ্ধে

বীর সাহাবী: আকিজ তাকাফুল লাইফ ইন্স্যুরেন্স পিএলসির বিরুদ্ধে বিমা আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই চলছে প্রতিষ্ঠানটি। বঙ্গবন্ধু শিক্ষা বিমা পলিসি চালু না করা, নিয়োগ ছাড়াই চাকরি, কোম্পানির প্রথম বছরে অতিরিক্ত ও অস্বাভাবিক ব্যবস্থাপনা ব্যয়সহ বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে কোম্পানিটির বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)।

‘বঙ্গবন্ধু শিক্ষা বিমা’ পলিসিটি চালু করা নিয়ে আকিজ তাকাফুল লাইফের রয়েছে ধোঁয়াশা। কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নতুন এই পণ্যের ডিজাইনের কাজ চলছে বললেও শেয়ার বিজের অনুসন্ধানে তার কোনো কার্যক্রম চোখে পড়েনি। শিক্ষাব্যবস্থায় বিমার ভূমিকা জোরালো করতে আইডিআরএ থেকে এ-সংক্রান্ত তথ্য নির্ধারিত ছকে প্রতি মাসের ৭ তারিখে জমা দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়। এছাড়া এই বিমা পলিসি দ্রুত বাস্তবায়নে সব কোম্পানি এগিয়ে এলেও এখন পর্যন্ত আকিজ তাকাফুল লাইফ ইন্স্যুরেন্স এ নির্দেশনা আমলে নেয়নি বলে অভিযোগ করেছেন একাধিক গ্রাহক।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ব্যবসা শুরুর প্রথম বছরেই অস্বাভাবিক ব্যয় করেছে আকিজ তাকাফুল লাইফ। কোম্পানিটি ২০২১ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৫৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা প্রিমিয়াম সংগ্রহ করে। কিন্তু সে সময় ১ কোটি ৩৯ লাখ ৪৫ হাজার টাকা ব্যয় করে। মাত্র ছয় মাসেই অতিরিক্ত ব্যয় করে ১ কোটি ৫ লাখ ৩০ হাজার টাকা। এমন মাত্রাতিরিক্ত ব্যয়ের কারণে কোম্পানির লাইফ ফান্ড সে বছর নেগেটিভ হয়েছিল ৬ লাখ ২০ হাজার টাকা। এখনও সেই অতিরিক্ত ব্যয় প্রবণতা রয়ে গেছে। ফলে এখানে গ্রাহকের সঞ্চিত আমানত কতটুকু সুরক্ষিত তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এতে মেয়াদপূর্তির পর গ্রাহকের টাকা পরিশোধে প্রতিষ্ঠানটি হিমশিম খাবে এবং সার্বিকভাবে বিমা সেক্টরে নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করবে বলে খাতসংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন।

আইডিআরএতে এক গ্রাহকের দেয়া অভিযোগে বলা হয়, ‘প্রতিষ্ঠার পর থেকেই কোম্পানিতে অযাচিত হস্তক্ষেপ করছে আকিজ গ্রুপের কর্মকর্তারা। বিমা কোম্পানিটির হিসাব বা প্রশাসন বিভাগের ছোট ছোট নোট অনুমোদন করতেও গ্রুপ কর্মকর্তাদের সিদ্ধান্ত প্রয়োজন হয়। পিএলসি হয়েও প্রাইভেট কোম্পানির মতো পরিচালনা করা হচ্ছে এই বিমা কোম্পানিকে। খোদ কোম্পানির সিইও একক সিদ্ধান্তে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেন না। এতে অধস্তন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অসহায় হয়ে পড়ছেন। ফলে ব্যাহত হচ্ছে কোম্পানির স্বাভাবিক কার্যক্রম।’

অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, বিমা আইন লঙ্ঘন করে এখন পর্যন্ত সিইও নিয়োগ দেয়নি

 কোম্পানিটি। ২০২১ সালের ২৭ জুন প্রতিষ্ঠার পর আকিজ তাকাফুলে অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে যোগদান করেন আলমগীর চৌধুরী। সে সময় প্রতিষ্ঠানটিতে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা না থাকায় তাকে মুখ্য নির্বাহীর চলতি দায়িত্ব (সিসি) দেয়া হয়। তখন থেকে বর্তমান

সময় পর্যন্ত প্রায় দুই বছর ধরে সিইওর চলতি দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন তিনি। অথচ বিমা আইনে সব দিক বিবেচনায় নিয়ে সর্বোচ্চ ছয় মাস পর্যন্ত মুখ্য নির্বাহীর চলতি দায়িত্ব পালনের সুযোগ আছে।

সিইওর চলতি দায়িত্ব পালন করা আলমগীর চৌধুরীর শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তাকে সিইও হিসেবে অনুমোদন দিতে গত বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর আইডিআরএকে চিঠি দেন কোম্পানির চেয়ারম্যান শেখ শামীম উদ্দিন। সেখানে সিইওর সর্বশেষ শিক্ষাগত যোগ্যতা দেখানো হয় ২০০৪ সালে বিতর্কিত দ্য ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা থেকে মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনায়  স্নানকোত্তর ডিগ্রি। একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবস্থাপনার ওপর অনার্স ডিগ্রি অর্জন করেন ২০০৩ সালে। কিন্তু এর ১৬ বছর পর গত ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ সালে স্বদেশ লাইফে দাখিল করা জীবনবৃত্তান্তে শিক্ষাগত যোগ্যতা দেখানো হয়েছে ১৯৯৪ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.কম ডিগ্রি অর্জন। দুই বছর আগে দাখিল করা জীবনবৃত্তান্তে তিনি অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জনের তথ্য গোপন করেছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তবে কি তিনি মাত্র দুই বছরেই তিনি ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা থেকে চার বছরের অনার্স ও এক বছরের মাস্টার্স ডিগ্রি সম্পন্ন করেছেনÑএটা একটা বড় প্রশ্ন।

এসব অভিযোগের ব্যাপারে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে তৎপর হয়েছে আইডিআরএ। এরই মধ্যে নিয়ন্ত্রণ সংস্থার কর্মকর্তা আবদুর রহিম মাসুদ এবং শাসমুল আলমের সমন্বয়ে একটি তদন্ত দল গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে।

এসব বিষয় নিয়ে আকিজ তাকাফুল লাইফ ইন্স্যুরেন্স পিএলসির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (চলতি দায়িত্ব) আলমগীর চৌধুরী শেয়ার বিজকে বলেন, যেসব অভিযোগ উঠেছে সব ভিত্তিহীন। কে বা কারা আমাদের কোম্পানির নামে ষড়যন্ত্র করছে।

তিনি বলেন, আমাদের কোম্পানি নতুন। আগের বছর ব্যবস্থাপনা ব্যয় যা হয়েছে; তা অস্বাভাবিক বলার সুযোগ নেই। আমরা ২০২১ সালের নভেম্বরে অপারেশন শুরু করেছি। সেই হিসেবে বছরের মাত্র দেড় মাস আমাদের কার্যক্রম চলেছে। ২০২২ সালে আমাদের ব্যবস্থাপনা ব্যয় অনেক কমে গেছে। চলতি বছরের অনুমোদিত সীমার মধ্যেই ব্যবস্থাপনা ব্যয় থাকবে।

শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়ে তিনি বলেন, যেসব কোম্পানিতে বি.কম পাসের সার্টিফিকেট দিয়ে আবেদন করলেই ক্রাইটেরিয়া ফুলফিল হয়েছে, সেখানে সেটি জমা দেয়া হয়েছে। তবে সিইও হওয়ার জন্য আমি ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লার সনদ দিয়েছি। এটাও আমি লেখাপড়া করেই অর্জন করেছি।