Print Date & Time : 8 July 2025 Tuesday 3:08 am

আকুর দায় সমন্বয়ের পর ফের কমল রিজার্ভ

নিজস্ব প্রতিবেদক: এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) আমদানি বিল পরিশোধের পর বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ ফের কমেছে। নভেম্বর-ডিসেম্বর সময়ের আমদানি দায় বাবদ আকুতে পরিশোধ করা হয়েছে প্রায় ১২৮ কোটি ডলার (১ দশমিক ২৮ বিলিয়ন ডলার)।

গত সোমবার এ দায় সমন্বয়ের পর রিজার্ভ কমে বিপিএম-৬ অনুযায়ী দাঁড়িয়েছে ২০ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলারে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব হিসাবে তা দাঁড়িয়েছে ২৫ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত পূরণের জন্য বিভিন্ন ব্যাংক থেকে গত মাসে ডলার কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পাশাপাশি কিছু বৈদেশিক ঋণ যোগ হওয়ার কারণে রিজার্ভ বেড়েছিল। ওই সময়ে বিপিএম-৬ অনুযায়ী গ্রস রিজার্ভ ১৯ দশমিক ১৬ বিলিয়ন থেকে বেড়ে ২১ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলারে ওঠে।

এর আগে সর্বশেষ গত সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সময়ে আকুর দায় বাবদ ১২১ কোটি ডলার পরিশোধ করে বাংলাদেশ। এবার দায় কিছুটা বেড়েছে। মূলত এলসি খোলা আগের মাসগুলোর তুলনায় বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে দায় বেড়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। এর আগে গত জুলাই-আগস্ট সময়ে আকুর দায় বাবদ ১৩১ কোটি ডলার পরিশোধ করে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ৩ জানুয়ারি আইএমএফ স্বীকৃত বিপিএম-৬ পদ্ধতি অনুযায়ী তাদের কাছে গ্রস রিজার্ভের স্থিতি ছিল ২১ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলার। এরপর আকু বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ গত সোমবার তা কমে দাঁড়ায় ২০ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলারে।

অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব হিসাবে ৩ জানুয়ারি রিজার্ভ স্থিতি ছিল ২৬ দশমিক ৯৯ বিলিয়ন ডলার। আকুর দায় পরিশোধের পর তা কমে ২৫ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়ায়।

জানা যায়, বিভিন্ন উদ্যোগের পরও ডলার দর নিয়ন্ত্রণ ও রিজার্ভের পতন ঠেকানো যাচ্ছে না, যে কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যস্থতায় ২০২২ সালের ১১ সেপ্টেম্বর থেকে ডলারের দর ঠিক করে আসছে ব্যাংকগুলো। শুরুতে রেমিট্যান্সে ১০৮ এবং রপ্তানিতে ৯৯ টাকা করা হয়। পর্যায়ক্রমে উভয় ক্ষেত্রে ডলার কেনার দর অভিন্ন করা হয়েছে। প্রতি মাসে অল্প অল্প করে ডলারের দর বাড়ানো হয়। এতে ডলারের দর আমদানিতে হয় ১১১ টাকা আর রেমিট্যান্স ও রপ্তানিতে ১১০ টাকা ৫০ পয়সা। তবে নভেম্বরের শেষ দিক থেকে ডলারের দর কমানোর পথে হাঁটছে এবিবি ও বাফেদা। দুই দফায় ডলারের দর কমিয়ে এখন আমদানিতে ১১০ টাকা ও রেমিট্যান্স-রপ্তানিতে ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়।

ডলারের দর নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি রিজার্ভ থেকে প্রচুর ডলার বিক্রি করে আসছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাস (জুলাই-ডিসেম্বর) সময়ে ৬৭০ কোটি (৬ দশমিক ৭ বিলিয়ন) ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সময়ে বেসরকারি কিছু ব্যাংক থেকে এক বিলিয়ন ডলারের বেশি কেনা হয়।

আকু হলোÑকেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর মধ্যে একটি আন্তঃআঞ্চলিক লেনদেন নিষ্পত্তি ব্যবস্থা। এর মাধ্যমে এশিয়ার ৯টি দেশের মধ্যে যেসব আমদানি-রপ্তানি হয়, তা প্রতি দুই মাস পর নিষ্পত্তি হয়। তবে অন্য দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের লেনদেন তাৎক্ষণিকভাবে সম্পন্ন হয়। আকুর সদস্য দেশগুলো হচ্ছেÑবাংলাদেশ, ভারত, ইরান, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, ভুটান ও মালদ্বীপ।

দেনা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় সম্প্রতি এ তালিকা থেকে বাদ পড়েছে শ্রীলঙ্কা। আকুর বাকি দেশগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোকে দুই মাস পরপর লেনদেনের অর্থ পরিশোধ করতে হয়। এসব দেশের মধ্যে ভারত পরিশোধের তুলনায় অন্যান্য দেশ থেকে বেশি ডলার আয় করে। বাকি দেশগুলোর বেশিরভাগকে আয়ের চেয়ে বেশি ডলার খরচ করতে হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, আকুর সদস্য দেশগুলো থেকে যে পণ্য আমদানি হয়, তার মূল্য হিসেবে ব্যাংকগুলো প্রতি সপ্তাহে ডলার বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দেয়। প্রতি দুই মাস পরপর ব্যাংকগুলোর পক্ষে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ দায় পরিশোধ করে থাকে। তখন রিজার্ভ হঠাৎ কমে যায়, এরপর আবার বাড়ে।