Print Date & Time : 29 July 2025 Tuesday 3:54 pm

আগামী অর্থবছর চাল আমদানি তিনগুণ বাড়াবে সরকার

ইসমাইল আলী: চলতি বছর ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। চাল উৎপাদনে রেকর্ডের পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংকও। যদিও দাম কমে যাওয়ায় এর সুফল পাচ্ছে না কৃষক। তাই সরকারি পর্যায়ে চলতি অর্থবছর অতিরিক্ত ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করা হয়েছে। চাল রফতানির চিন্তাভাবনাও চলছে। এরই মধ্যে আগামী অর্থবছরের জন্য সরকারিভাবে চাল আমদানি তিনগুণ বৃদ্ধির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
এদিকে আগামী অর্থবছর দেশের অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে চাল সংগ্রহ কিছুটা কমানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে এ ধরনের প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়েছে। যদিও বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানি অনুৎসাহিত করতে গত মাসে এ খাতে শুল্ক বৃদ্ধি করা হয়।
আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে সরকারিভাবে চাল আমদানির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে দুই লাখ মেট্রিক টন, যদিও চলতি অর্থবছর চাল আমদানির সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে মাত্র ৫০ হাজার মেট্রিক টন। এতে আগামী অর্থবছর চাল আমদানি বাড়বে দেড় লাখ মেট্রিক টন বা ৩০০ শতাংশ।
এদিকে চলতি অর্থবছর দেশের অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে সরকারের চাল সংগ্রহের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২১ লাখ ৩১ হাজার মেট্রিক টন। যদিও আগামী অর্থবছরের জন্য তা কিছুটা কমিয়ে ২১ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে ২০১৯-২০ অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে ১১ হাজার মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ কমানো হবে।
চলতি অর্থবছর চাল আমদানিতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৯৩ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছর এ খাতে ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ৮২৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ চাল আমদানিতে ব্যয় বাড়বে ৬৩৫ কোটি টাকা বা প্রায় ৩২৯ শতাংশ। এদিকে আগামী অর্থবছর দেশের অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে চাল সংগ্রহে ব্যয় ধরা হয়েছে আট হাজার ২৪ কোটি টাকা। আর চলতি অর্থবছর এ খাতে ব্যয় ধরা আছে আট হাজার ১০৭ কোটি টাকা।
তথ্যমতে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দেশে দুই দফা বন্যার কারণে বোরো ও আমন ধানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। ওই পরিস্থিতিতে প্রায় ১০ লাখ টনের মতো চাল আমদানি করেছিল সরকার। ফলে গত অর্থবছর সরকারি পর্যায়ে চাল আমদানি বেড়ে গিয়েছিল। ওই সময় বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানির ওপরও শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছিল। পাশাপাশি এলসি খোলার ক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা দেওয়া হয়েছিল, যদিও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাওয়ায় গত বছর নভেম্বরে চাল আমদানিতে ২৮ শতাংশ শুল্ক পুনর্বহাল করে সরকার। এতে চাল আমদানি কমলেও বন্ধ হয়নি।
এদিকে চলতি অর্থবছর ধানের বাম্পার ফলনের পরও বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানি অব্যাহত ছিল। এতে কৃষকরা বঞ্চিত হয়। ফলে গত ২২ মে সরকার চাল আমদানিতে শুল্ক আরও বৃদ্ধি করে। এক্ষেত্রে রেগুলেটরি ডিউটি (নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক) তিন শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। আর আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ ও অগ্রিম আয়কর পাঁচ শতাংশ বহাল রাখা হয়েছে। ফলে সব ধরনের চাল আমদানিতে ৩৩ শতাংশের জায়গায় শুল্ককর ৫৫ শতাংশ করা হয়েছে।
সূত্রমতে, ২০১৭ সালের বন্যায় ফসলহানির পর সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল চালের ঘাটতি হবে ১০ লাখ টন। কিন্তু গত দুই বছরে দেশে প্রায় ৬০ লাখ টন চাল আমদানি হয়েছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, সরকারি-বেসরকারিভাবে চলতি অর্থবছর ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) দুই লাখ টন চাল আমদানি হয়েছে। আমদানির অপেক্ষায় রয়েছে আরও তিন লাখ ৮০ হাজার টন চাল।
বাড়তি উৎপাদন ও আমদানির চাল বাজারে চাপ তৈরি করায় দাম অনেকটাই কমে যায় ধানের। এতে ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় বিপদে পড়েন কৃষকেরা। এ নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ কর্মসূচিও পালিত হয়েছে। এজন্য সরকারিভাবে চলতি অর্থবছর আরও আড়াই লাখ টন বোরো ধান অতিরিক্ত সংগ্রহের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
সরকারি-বেসরকারি হিসাব বলছে, দেশে ২৫ থেকে ৩০ লাখ টন চাল উদ্বৃত্ত রয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে ১০-১২ টন চাল রফতানির বিষয়টি বিবেচনাও করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে সরকারিভাবে কেন চাল আমদানি বৃদ্ধি করা হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অর্থনীতিবিদরা।
এদিকে চাল আমদানির লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হলেও আগামী অর্থবছরের জন্য গম আমদানির লক্ষ্যমাত্রা কিছুটা কমানো হয়েছে। এক্ষেত্রে ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য পাঁচ লাখ টন গম সরকারিভাবে আমদানির প্রস্তাব করা হয়েছে। যদিও চলতি অর্থবছরে গমের সংশোধিত আমদানি লক্ষ্যমাত্রা সাড়ে পাঁচ লাখ টন। এছাড়া গমের অভ্যন্তরীণ সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হয়েছে। আগামী অর্থবছর অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে গম সংগ্রহ করা হবে এক লাখ ৯৫ হাজার মেট্রিক টন। যদিও চলতি অর্থবছর অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে গমের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ৫০ হাজার মেট্রিক টন।