আগামী নির্বাচনে ফাইনাল খেলা হবে: ওবায়দুল কাদের

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে উদ্দেশ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘আন্দোলন-আন্দোলন করতে করতে গলা শুকিয়ে যায়… মরা নদীতে জোয়ার আসে না; জোয়ার কি আসবে কখনও? নেতাকর্মীরা ছাড়া আপনাদের সঙ্গে দেশের মানুষ যোগ দেয়নি। ফয়সালার কথা কোন মুখে বলেন? আমি বলেছিÑহবে হবে, ফয়সালা হবে। ফয়সালা হবে আগামী নির্বাচনে, ফাইনাল খেলা। তখন দেখা যাবে, কে হারে কে জেতে।’

গতকাল শনিবার কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে (কেআইবি) বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতাকালে ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন।

এ সময় সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘টেমস নদীর ওপার থেকে দণ্ডিত অর্থপাচারকারী অপরাধী হাঁকডাক দিচ্ছে। সেই ডাকে টেমস নদীতে ঢেউ উঠেছে কি না, জানি না; তবে পদ্মা-মেঘনা-যমুনায় ঢেউ নেই। বিএনপির শুকনো নদীতে জোয়ার আর আসবে না। চিৎকার যত পারেন করেন, ফয়সালা হবে নির্বাচনে। হুমকি দিয়ে লাশ ফেলতে চান? লাশ ফেলার দুষ্টচক্রে আবদ্ধ হচ্ছেন।’

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘মির্জা ফখরুল, আপনাকে সতর্ক করে দিতে চাই। আপনাদের হাতে অনেক রক্তের দাগ। ২১ হাজার আওয়ামী লীগ কর্মী, আহসানুল্লাহ মাস্টার, এএমএস কিবরিয়াÑএদের রক্ত আপনাদের হাতে। আমরা আপনাদের কাউকে হত্যা করিনি। হত্যার ষড়যন্ত্রের রাজনীতিতে আমরা বিশ্বাসী নই। হত্যাচেষ্টা হয়েছে আমাদের নেত্রীর ওপর, কিন্তু খালেদা জিয়াকে কেউ মারতে যায়নি।’

ওবায়দুল কাদের প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘কারা বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের আইনের মধ্য দিয়ে অব্যাহতি দিল? মির্জা ফখরুল, আপনি যতই কথা বলেন, এই প্রশ্নের জবাব আজও দেননি। বারে বারে প্রশ্ন করতে চাইÑকেন খুনিদের পুরস্কৃত করা হলো, নিরাপদে বিদেশ পাঠানো হলো, তাদের চাকরি দিল আমাদেরই দূতাবাসে? আজকে এ প্রশ্নের জবাব তারা দেবে না, কারণ তারা সত্যের মুখোমুখি হতে ভয় পায়।’

এ সময় বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের লাশের প্রসঙ্গ টেনে আওয়ামী লীগের অন্যতম এ শীর্ষ নেতা বলেন, ‘চট্টগ্রাম থেকে লাশ এনে চন্দ্রিমাতে জানাজা পড়লেন, কে লাশ দেখেছে? একটা ছবি দেখাতে পারবেন? একটা ছবি আপনার কাছে চাই, মৃত লাশের একটা ছবি দেখান।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমার পতাকা পতপত করে ওড়ে বঙ্গবন্ধু তোমার নামে, আমি আন্দোলনে উজ্জীবিত হই। আমার জাতীয় সংগীতÑআমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি… এটিও পেয়েছি, বঙ্গবন্ধু, তোমার কারণে। আজ তুমি বাংলার মাটিতে আমাদের মাঝে নেই। পলাশী ষড়যন্ত্রে নবাব সিরাজউদ্দৌলার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল মীরজাফর আলী খান, সেনাপতি রায়দুর্লভ… ক্লাইভের সৈন্য সাড়ে তিন হাজার আর নবাবের ৪৫ হাজার। সেনাপতি, প্রধান সেনাপতি বিশ্বাসঘাতকতা করল, সৈন্যরা দুপুরের পর অস্ত্র হাতে দাঁড়িয়ে রইল, যুদ্ধ শেষ। বিশাল পতন ঘটলো বাংলার নবাবের। সেই ষড়যন্ত্র পঁচাত্তরেও হলো। সেই ষড়যন্ত্রে মীরজাফরের বেশে খন্দকার মোশতাক, সেই ষড়যন্ত্রে জিয়াউর রহমান। সত্য মোছা যাবে না। সত্যের বন্যা অপ্রতিরোধ্য। এ বিশ্বাসঘাতককে ইতিহাস ক্ষমা করবে না।’

তিনি বলেন, ‘একটা পরিবারকে ধ্বংস করে দিল। মাসুম শেখ রাসেল, মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামাল, শেখ জামাল, তাদের নবপরিণিতা বধূ। সেদিনের সকালের সূর্যের রঙের সঙ্গে মিশে গেল ওদের হাতের মেহেদি।’

ইতিহাস অনেক সত্যের জবাব দেবে বলে উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ব্রিটিশ লেখক অ্যান্থনির বিবরণে পাওয়া যায়, তখন কারা কী করেছিল। কোথায় কোথায় বৈঠক করেছিল। সিআইএর ঢাকা স্টেশনের চিফ, মার্কিন রাষ্ট্রদূতের কী ভূমিকা ছিলÑএসব নিয়ে অনেক কথা আছে।

এ সময় তরুণদের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ছাত্রলীগ করবেন কোন আদর্শে? সেই আদর্শের বিবর্তনের ইতিহাস জানতে হবে। তা না হলে অসম্পূর্ণ হয়ে থাকবেন। কতজনকে বঙ্গবন্ধু টেলিফোনে কী বলেছিলেনÑসম্পূর্ণ বিষয়টি জাতির জানা। তিনি কিছু বললেন, কিছু বলেননি। অনেক নির্মম সত্য সবসময় বলা যায় না। সে সত্যও বেরিয়ে আসবে। শুধু দেখলাম, নিরাপত্তা অফিসার কর্নেল জামিল ছুটে এসেছেন বঙ্গবন্ধুকে রক্ষা করতে, আর কেউ আসেননি। সোবহানবাগ মসজিদের কাছে তাকে ঘাতকেরা হত্যা করে। এজন্য রাজনৈতিক নেতাও সেদিন ওই সংকটের সময়ে সাড়া দেননি। ৩২ নম্বরে রক্তপাতের জবাব দিতে আসেননি। এটা আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্বের ব্যর্থতা।’