Print Date & Time : 12 September 2025 Friday 9:10 am

আগামী বছর যেন হজের খরচ না বাড়ে

কয়েকদিন ধরেই আলোচনা হচ্ছে, এবার নির্ধারিত কোটার যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। হজের খরচ অনেক বেড়ে যাওয়ায় চলতি বছর নয় দফা সময় বাড়িয়েও হজের কোটা পূরণ করা যায়নি। সর্বশেষ খবর: সাড়ে ৩ হাজার হজ কোটা ফেরত যাচ্ছে। এমন প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে গতকালের পত্রপত্রিকায়। 

নিকট অতীতে এমন হয়নি। ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, দুই-তিন হাজার এটা কোনো বিষয় না। অন্যান্য দেশ কতজন পাঠিয়েছে আর কতজন খালি থেকেছে; তা তখন বুঝতে পারবেন। আমাদের হজযাত্রী যাচ্ছে পার্সেন্টেজ অনুসারে, সারা বিশ্বে আমরা সর্বোচ্চ থাকব। হজ এজেন্সিগুলোর সংগঠন হাব-এর নেতারাও একই অভিমত ব্যক্ত করেছেন।

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে চলতি বছরের ২৭ জুন (৯ জিলহজ) পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। গত ৮ ফেব্রুয়ারি হজের নিবন্ধন শুরু হয়। কোটা পূরণে এখনও ছয় হাজার ৭০৭ জন বাকি থাকলেও  হজ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িতদের বাদ দিয়ে সাড়ে তিন হাজারের কোটা খালি থাকবে।

ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন, পার্থিব জীবন সুন্দর করার ক্ষেত্রে হজের ভূমিকা অনন্য। হজের মাধ্যমে মানুষ আত্মশুদ্ধি অর্জন করে। হজপালন শেষে একজন মুসলিম আল্লাহপ্রেম, ভ্রাতৃত্ববোধ ও সম্প্রীতির বার্তা নিয়ে বিশ্বের প্রান্তে প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েন। সব ধরনের অন্যায়-অপরাধ থেকে মুক্ত হয়ে শুদ্ধ-সুন্দর জীবনযাপনের প্রয়াস চালান। যথানিয়মে ধর্মকর্ম পালনে নাগরিকদের সহায়তা করা রাষ্ট্রের দায়িত্বের অংশ। কিন্তু বর্তমানে খরচ অন্য বছরের তুলনায় অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ায় হজ করার সামর্থ্য হারিয়েছেন অনেকে। 

সরকার এবার যে হজ প্যাকেজ নির্ধারণ করেছে; তাতে দেখা যাচ্ছে অন্যান্য বছরের তুলনায় প্যাকেজপ্রতি খরচের পরিমাণ বেড়েছে এক লাখ টাকারও বেশি। দিন দিন খরচ বাড়বে; সেটি অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু তা যেন অতিরিক্ত না বাড়ে, সরকারকে সে ব্যবস্থা নিতে হবে। হজের নির্ধারিত কোনো খরচ নেই। সৌদি সরকারের নির্দিষ্ট কিছু ফি ছাড়া বিভিন্ন দেশ বিমান ভাড়াসহ হজের ব্যয় নির্ধারণ করে থাকে। বাংলাদেশে একসময় হজের খরচ চার থেকে পাঁচ লাখ টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও দুই বছর ধরে তা বাড়ছে। আমরা মনে করি, হজের মতো একটি আবশ্যকীয় পবিত্র ইবাদতকে বাড়তি আয়ের উৎস বানিয়ে ফেলা এবং মুসলমানদের জন্য হজ পালনকে কঠিন করে তোলা কোনোভাবেই ঠিক নয়। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বিরুদ্ধে অভিযোগ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানটি প্রতি বছর যথেচ্ছ ভাড়া বাড়ায়। ফলে হজের খরচ বেড়ে যায়। বিমান ছাড়া অন্য কোনো এয়ারলাইনসে হজে যাওয়ার সুযোগ না থাকায় তারা মূলত ভাড়া বাড়ানোর সুযোগ পাচ্ছে। সরকারের উচিত হবে তীর্থযাত্রীদের বিড়ম্বনা কমাতে একচেটিয়া ব্যবসা বন্ধ করা। প্রতিযোগিতা থাকলে হয়তো বিমানও উড়োজাহাজ ভাড়া কমিয়ে দিত। শুধু উড়োজাহাজ ভাড়া নয়, সরকারের উচিত হবে কোন কোন খাতে খরচ কমানোর সুযোগ আছে, সেসব খরচ কমিয়ে হজযাত্রাকে সবার জন্য সহজ করে তোলা। এবার যা হওয়ার হয়ে গেছে। এখন থেকেই উদ্যোগ নিলে আগামী বছর হজব্যবস্থাপনা হজযাত্রীবান্ধব করা অসম্ভব নয় ।