Print Date & Time : 14 August 2025 Thursday 7:34 pm

আগাম জাতের শীতকালীন সবজি চাষে পিছিয়ে যশোরের চাষিরা

মীর কামরুজ্জামান মনি, যশোর: আগাম জাতের শীতকালীন সবজি চাষে পিছিয়ে পড়েছে যশোরের চাষিরা। কয়েক দিন আগের রেকর্ড বৃষ্টির কারণে সদ্য রোপণকৃত সবজির চারা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। ফলে এ বছর সময়মতো আগাম জাতের শীতকালীন সবজির সরবরাহ বাড়তে সময় লাগবে বলে জানিয়েছে কৃষক ও কৃষি বিভাগ।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দেশের সবজি জোন হিসেবে পরিচিত যশোর জেলায় প্রায় সারাবছরই নানা জাতের সবজি চাষ হয়। তবে শীতের আগাম মুহূর্তে আগাম জাতের শীতকালীন সবজি চাষ করে কৃষক আগেভাগেই বাজারে তোলেন। এরই ধারাবাহিকতায় জেলার সাতমাইল, চুড়ামনকাটি, বারিনগর, হৈবতপুর, কাশিমপুর, বন্দবিলা, লেবুতলা, নোঙরপুর, ইছালি ইউনিয়নসহ বিভিন্ন এলাকার মাঠজুড়ে চাষ করা হয় বাঁধাকপি, ফুলকপি, শিম, মুলা, লালশাক-পালংশাক, সবুজ শাকসহ নানা ধরনের সবজি। এসব সবজির চারার সিংহভাগই উৎপাদিত হয় যশোর সদরের চুড়ামনকাটির আব্দুলপুরের বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে। কয়েক দিন ধরে কৃষকরা মাঠে সবজি চাষে ব্যস্ত হয়ে পড়লেও গত রোববার এ অঞ্চলে অতিমাত্রার বৃষ্টিপাত হয়। মাত্র ১৪ ঘণ্টার ব্যবধানে জেলায় ২২৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। রেকর্ড এ বৃষ্টিতে বিস্তীর্ণ মাঠের সবজি ক্ষেত ও সবজির চারা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় কৃষক নতুন করে আবার সবজি চাষ শুরু করেছে।

জেলার সদর উপজেলার নোঙরপুর মাঠের কৃষক শরিফুল ইসলাম বলেন, বিগত কয়েকটি বছরে তারা বৈরী আবহাওয়ার কারণে তারা সবজি উৎপাদন করে তেমন একটা লাভবান হতে পারেননি। এ বছর আবহাওয়া ভালো হওয়ায় সামনে শীত মৌসুমে সবজি চাষে ভালো সম্ভাবনা দেখছিলেন তারা। কিন্তু ভারী বৃষ্টিতে তারা মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। তিনি বলেন, আমার দুই বিঘা জমির বাঁধাকপি ক্ষেতে পানি জমে নষ্ট হয়ে গেছে। এখন আবার নতুন করে চাষ শুরু করেছি।

একই এলাকার চাষি নওশের আলী বলেন, এমনিতে সার-কীটনাশক ও শ্রমিক খরচের পাশাপাশি সবজির বীজের দাম বেশি হওয়ায় চাষে বাড়তি খরচ গুনতে হয়েছে আমাদের। এখন আবার নতুন করে সবজি রোপণ করে কবে বাজারে তুলব সেই চিন্তায় আছি। তিনি বলেন, আর কয়েক দিন সময় পেলে আমরা পুরোদমে সবজি উৎপাদন শুরু করতে পারতাম। বৃষ্টির কারণে সেই স্বপ্ন ধূলিসাৎ।

এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. সুশান্ত কুমার তরফদার বলেন, যশোরে এই মুহূর্তে ছয় হাজার ১১৫ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের সবজি রয়েছে। এছাড়া ১৭৬ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ রয়েছে। এর মধ্যে ৩০৫ হেক্টর সবজি ও ৫৩ হেক্টর গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের ক্ষেত বৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে গেছে। এর বাইরে যেসব সবজি ক্ষেত রয়েছে, তা আংশিক ক্ষতি হলেও শেষমেষ সেগুলো রক্ষা হবে বলে তিনি দাবি করেন। তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন এলাকায় বন্যা হলেও যশোর এক্ষেত্রে মুক্ত আছে। ফলে আশা করা যায়, সামনে বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে কৃষক তার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে।