আগ্রাসী ব্যাংকিং প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিন

প্রচলিত ধারার ব্যাংক ১০০ টাকা আমানতের বিপরীতে ৮৭ টাকা এবং ইসলামি ধারার ব্যাংক ৯২ টাকা ঋণ দিতে পারে। একে ব্যাংকিং পরিভাষায় বলে অ্যাডভান্স ডিপোজিট রেশিও (এডিআর) বা ঋণ-আমানত অনুপাত সীমা। এই সীমা লঙ্ঘন করে যদি কোনো ব্যাংক ঋণ বিতরণ করে তাহলে সেই ব্যাংক নানা ঝুঁকির সম্মুখীন হয়। এতে দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতির শিকার হন সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের আমানতকারীরা। আগ্রাসী ঋণ বিতরণের কারণে ব্যাংকের দেউলিয়া হয়ে পড়ার পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। কাজেই এ ধরনের ব্যাংকিং কার্যক্রম কোনোভাবেই চলতে পারে না। এমন পরিস্থিতিতে যেসব ব্যাংক আগ্রাসী ব্যাংকিং করবে এবং আইন দ্বারা নির্দিষ্ট বিধিবিধান অনুসরণ করবে না, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

দৈনিক শেয়ার বিজে গতকাল ‘সীমা লঙ্ঘন করে আগ্রাসী ঋণ বিতরণ ১১ ব্যাংকের’ শিরোনামে প্রধান প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনের তথ্য মতে, যেসব ব্যাংক এডিআর সীমা লঙ্ঘন করে ঋণ বিতরণ করেছে তাদের মধ্যে কয়েকটি গৃহীত আমানতের ১০০ শতাংশের ওপরে ঋণ বিতরণ করেছে। বিশেষ করে ব্যাংকগুলো ইসলামিক ব্যাংকিং উইংয়ে এ ধরনের নিয়ম লঙ্ঘনের নজির সবচেয়ে বেশি। ইসলামী ধারার ব্যাংকিং কার্যক্রমে গৃহীত আমানতের ৯২ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ বিতরণ করা যায়। কিন্তু যেসব ব্যাংকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে এডিআর সীমা লঙ্ঘনের, সেসব ব্যাংকের ইসলামিক ব্যাংকিং উইংসমূহ ৯৫ থেকে ১২৪ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ বিতরণ করেছে। এতে করে ব্যাংকগুলোয় আমানতকারীদের অর্থের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যাচ্ছে। এই মুহূর্তে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচিত এ বিষয়ে জোরালো পদক্ষেপ নেয়া। অন্যথায় ব্যাংকগুলো বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে।

বাংলাদেশে ব্যাংকের দেউলিয়া হওয়া বা দেউলিয়ার পর্যায়ে চলে যাওয়ার একাধিক নজির রয়েছে। এসব ব্যাংক ঝামেলায় পড়ার প্রধান কারণ হচ্ছে আগ্রাসী ব্যাংকিং এবং ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চাপে পড়ে নি¤œমানের ঋণ বিতরণ। এ প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন ব্যাংক থেকে পরিচালকরাও অর্থ হাতিয়ে নেন। একসময় ওরিয়েন্টাল ব্যাংকে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে ব্যাংটিকে বাঁচাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সেটিকে অধিগ্রহণ করে। পরে এটি নাম পরিবর্তন করে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক নামে কার্যক্রম শুরু করলেও নানা অব্যবস্থাপনার কারণে ব্যাংকটি আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। অনেকটা একই ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল সাবেক ফারমার্স ব্যাংকের ক্ষেত্রে। সে ব্যাংকের আগ্রাসী ঋণ বিতরণের মাধ্যমে অর্থ লোপাটের ঘটনা ঘটেছে। পরে ব্যাংকটির নাম পরিবর্তন করে পদ্মা ব্যাংক নামকরণ করা হয় এবং রাষ্ট্রায়ত্ত চারটি ব্যাংক ও বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সেখানে পুনঃঅর্থায়ন করা হয়। আর কোনো ব্যাংকের ক্ষেত্রে যাতে এ ধরনের পরিণতি ঘটে, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে কঠোর হস্তে অনিয়ম দমন করতে হবে। কোনো ধরনের সুপারিশ ও চাপের কাছে নতি স্বীকার না করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসন অক্ষুণœ রেখে আইন অনুযায়ী, পদক্ষেপ নিতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের দায়িত্বের বিষয়ে সচেতন হয়ে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করবে বলেই আমাদের প্রত্যাশা।