নাট্যকার, সাহিত্যিক, সাংবাদিক বিধায়ক ভট্টাচার্যের, (১৯০৭-১৯৮৬) ১৯০৭ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার জিয়াগঞ্জে জš§। ‘বগলারঞ্জন’ তার প্রকৃত নাম হলেও রবীন্দ্রনাথ প্রদত্ত ‘বিধায়ক’ নামেই তিনি সমধিক পরিচিত। তার সাহিত্যিক ছদ্মনাম ছিল ‘যশোধর মিশ্র’ ও ‘মানস দাস’। স্থানীয় এডওয়ার্ড করোনেশন হাই ইনস্টিটিউশন (বর্তমান রাজা বিজয় সিং বিদ্যামন্দির) থেকে ১৯২৮ সালে এন্ট্রান্স পাস করে তিনি সাংবাদিক হিসেবে অমৃতবাজার পত্রিকা ও যুগান্তর পত্রিকায় চাকরি করেন। পরে তিনি নিজে রূপায়ণ, মঞ্চরূপা ও ছবিওয়ালা নামে তিনটি পত্রিকা সম্পাদনা করেন। কিছুদিন তিনি শান্তিনিকেতনে শিক্ষকতাও করেন। নজরুলগীতির শিল্পী হিসেবেও তিনি পরিচিত ছিলেন।
বিধায়ক ভট্টাচার্য ছোটগল্প, উপন্যাস ও নাটকÑএই তিন মাধ্যমেই সাহিত্যচর্চা করেন; তবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন নাট্যকার হিসেবেই। তার নাটকে সামাজিক ও পারিবারিক আবহ এবং আবেগধর্মী ঘটনা ও সংলাপ প্রাধান্য পেয়েছে। তিনি পঁচিশটিরও বেশি নাটক রচনা করেন। সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলোÑমেঘমুক্তি, মাটির ঘর, বিশ বছর আগে, রক্তের ডাক, তুমি ও আমি, চিরন্তনী (১৯৪২), রাজপথ, খবর বলছি, ক্ষুধা, এন্টনি কবিয়াল, নটী বিনোদিনী, খেলাঘর, তাহার নামটি রঞ্জনা, উজান যাত্রা, কান্না হাসির পালা ইত্যাদি। শরৎচন্দ্রের কয়েকটি উপন্যাসেরও তিনি নাট্যরূপ দেন। যেমন বিপ্রদাস, বৈকুণ্ঠের উইল প্রভৃতি। তার উপন্যাসের মধ্যে রয়েছেÑচাকা ঘুরছে, বৃদ্ধ বিধাতা, রাত্রি যাদের দিন প্রভৃতি।
বিধায়ক ভট্টাচার্যের প্রথম নাটক মঞ্চস্থ হয় ১৯৩৮ সালে কলকাতার রঙমহল থিয়েটারে; নাটকটির নাম মেঘমুক্তি। প্রথম প্রদর্শনীতেই এটি দর্শকপ্রিয়তা অর্জন করে। পরে মঞ্চস্থ তার অন্যান্য নাটকও বিপুল জনপ্রিয়তা পায়। তার লেখা কাহিনি নিয়ে ফতেহ লোহানী ঢাকায় তৈরি করেন আকাশ আর মাটি (১৯৫৯) নামে একটি ছায়াছবি।
সাহিত্য ও সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদানের জন্য বিধায়ক বহু সম্মানে ভূষিত হন। তিনি ভাটপাড়া থেকে ‘মধুসংলাপী’ ও নিখিল ভারত বঙ্গসাহিত্য সম্মেলন থেকে ‘সাহিত্য মহাস্নাতক’ (১৯৬১) উপাধি লাভ করেন। এছাড়া কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ‘সুধাংশুবালা পুরস্কার’ (১৯৬৭) এবং বঙ্গীয় রঙ্গমঞ্চের শতবার্ষিকী উপলক্ষে ‘শতবার্ষিকী পুরস্কার’ লাভ করেন। ১৯৮৬-তে তিনি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সংগীত নৃত্য নাটক ও দৃশ্যকলা আকাডেমির পুরস্কার পান। ১৯৮৬ সালের ১৫ নভেম্বর তার মৃত্যু হয়। [সংগৃহীত]