আজ কবি নবীনচন্দ্র সেনের (১৮৪৭-১৯০৯) জন্মদিন। তিনি ১৮৪৭ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের নোয়াপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। নবীনচন্দ্র সেন চট্টগ্রাম স্কুল থেকে এন্ট্রান্স (১৮৬৩), কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে এফএ (১৮৬৫) এবং জেনারেল অ্যাসেমব্লিজ ইনস্টিটিউশন থেকে বিএ (১৮৬৮) পাস করেন। ওই বছরই তিনি কলকাতার হেয়ার স্কুলে কিছুদিন শিক্ষকতা করার পর ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট পদে নিয়োগ লাভ করেন এবং ১৯০৪ সালে অবসরে যান।
নবীনচন্দ্র সেনের ভূমিকা একদিকে যেমন বাংলা সাহিত্যের প্রধানতম কবি হিসেবে, তেমনি তার ভূমিকা প্রশাসক হিসেবে, আবার সংগঠক হিসেবেও তার ভূমিকা অনেক। ‘বেহারে যখন তিন বৎসর শেষ হইয়া বদলি আসন্ন হইল, তখন স্বামী-স্ত্রী দুজনেই ভাবিলাম যে বহু বরস বিদেশে উড়িষ্যা বাঙ্গালা বেহার ঘুরিয়া কাটাইলাম। যদি বাড়ির নিকটে ফেনী সাব-ডিভিশনটি পাইতে পারি বড় সুবিধা হয়। শ্রীভগবান সেই আশা আজ পূর্ণ করিলেন। মনে কত আনন্দই হইয়াছে। আমি পার্শনেল এসিসটেন্ট থাকিতে ১৮৭৫ সালে এ সাবডিভিশন খোলা হইয়াছিল। এই স্থানটি চট্টগ্রাম, নোয়াখালী ও কুমিল্লা হইতে বহু দূরে, অথচ তিন জেলার রাস্তার সঙ্গম স্থলে অবস্থিত। এখানে দিনে ডাকাতি হইত। আমার চেষ্টায় সাব-ডিভিশন খোলা হয় এবং এই স্থানটি নির্বাচিত হয়। এ কারণে এ স্থানটির উপর আমার একটুক আন্তরিক স্নেহ ছিল।’ ‘আমার জীবন স্মৃতিকথা’র একাংশে মহাকবি নবীনচন্দ্র সেন এমনভাবেই লিখেছিলেন ফেনীতে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে তার কর্মরত সময়ের স্মৃতি। নবীনচন্দ্র সেন দুই দফায় প্রায় ৯ বছর ফেনীতে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর হিসেবে কর্মরত ছিলেন। আধুনিক ফেনীর গোড়াপত্তন মূলত হয়েছিল তার হাত ধরেই। ছাত্রজীবন থেকেই নবীনচন্দ্র কবিতা রচনা শুরু করেন। প্যারীচরণ সরকার সম্পাদিত এডুকেশন গেজেটে তার কবিতা প্রকাশিত হতো। তার প্রথম কাব্যসংকলন অবকাশরঞ্জিনী প্রকাশিত হয় ১৮৭১ সালে। ১৮৭৫ সালে তার পলাশীর যুদ্ধ মহাকাব্য প্রকাশিত হলে তিনি ব্রিটিশ সরকারের রোষানলে পড়েন। রৈবতক, কুরুক্ষেত্র ও প্রভাস কাব্যত্রয়ী নবীনচন্দ্রের কবিপ্রতিভার শ্রেষ্ঠ প্রকাশ। এগুলোর নায়ক কৃষ্ণ এবং এতে যথাক্রমে কৃষ্ণের আদি, মধ্য ও অন্তলীলা বর্ণিত হয়েছে। নবীনচন্দ্রের এই তিনটি কাব্যও মহাকাব্যের লক্ষণাক্রান্ত। কাহিনীর বিশালতা এবং বহুমুখী বৈচিত্র্যের কারণে গ্রন্থত্রয়ের কাব্যবন্ধন অনেকটা শিথিল ও দুর্বল। নবীনচন্দ্রের আরও কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ: আমার জীবন, খ্রিষ্ট, ক্লিওপেট্রা, ভানুমতী, প্রবাসের পত্র প্রভৃতি। তিনি ভগবদ্গীতা ও চণ্ডির কাব্যানুবাদ করেন। তার আত্মজীবনী আমার জীবন গ্রন্থখানি উপন্যাসের মতো সুখপাঠ্য এবং সমকালীন সমাজ, রাজনীতি ও প্রশাসন সম্পর্কিত একটি প্রামাণ্য দলিল।
মাইকেল মধুসূদন দত্তের অনুসারী মহাকবি হিসেবে অধিক পরিচিত হলেও নবীনচন্দ্র অনেক উল্লেখযোগ্য গীতিকবিতা ও আখ্যানকাব্যও রচনা করেছেন। স্বাজাত্যবোধ ও স্বদেশানুরাগ তার কাব্যের মৌলিক আবেদন। ১৯০৯ সালের ২৩ জানুয়ারি তার মৃত্যু হয়। [সংগৃহীত]