আজ সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার দিন। ১২ বছর পেরিয়ে গেছে, তবু সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলায় সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার পায়নি পরিবার। মাছরাঙা টেলিভিশনের সাবেক বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার ও এটিএন বাংলার সিনিয়র রিপোর্টার মেহেরুন রুনি হত্যাকাণ্ডের এক দশক পেরিয়ে গেলেও হত্যাকারীদের এখনও শনাক্ত বা গ্রেপ্তার করা যায়নি। ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ভোরে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারে ভাড়া বাসায় তাদের শিশুছেলের সামনে খুন হন এই সাংবাদিক দম্পতি। পরদিন ভোরে তাদের ক্ষত-বিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ওই দিন রুনির ভাই নওশের আলী রোমান বাদী হয়ে শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেপ্তার করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু আজ ১২ বছর পেরিয়ে গেছে, তদন্তের কোনো ধরনের অগ্রগতি নেই। এমনকি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আদালত থেকে ১০৫ বার সময় নেয়া হয়েছে। সর্বশেষ গত ২৩ জানুয়ারি ঢাকা মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ২৭ ফেব্রুয়ারি পরবর্তী দিন ধার্য করেন।
সাগর-রুনি হত্যার ঘটনায় প্রথমে এই মামলা তদন্ত করছিল শেরেবাংলা নগর থানার পুলিশ। চার দিন পর মামলার তদন্তভার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়। তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার ৬২ দিনের মাথায় ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল হাইকোর্টে ব্যর্থতা স্বীকার করে ডিবি। এরপর আদালত র্যাবকে মামলা তদন্তের নির্দেশ দেন। গণমাধ্যকর্মীরা সাগর-রুনির পরিবারের ন্যায্য বিচার পাওয়া নিয়ে আশ্বস্ত হতে পারছে না। সাংবাদিক দম্পতির একমাত্র ছেলে মাহির সরওয়ার মেঘ জানে না কেন তার বাবা-মাকে হত্যা করা হয়েছে। সাগর-রুনির স্বজনরাও হতাশ। সাংবাদিক সাগর সরওয়ারের মা সালেহা মনিরের ভাষ্য‘কষ্টের কথা আর কত বলে পারা যায়! প্রতি বছর দিনটি এলে চারপাশ থেকে ফোন আসে। পত্রিকা অফিসগুলো থেকে প্রতিক্রিয়া জানতে চায়। প্রশ্ন হচ্ছে, আর কত, কত দিন অপেক্ষা? বিচার পাওয়া তো দূরের কথা, খুনিই তো চিহ্নিত হলো না। কিন্তু এখনও বিশ্বাস করি সরকার চাইলে এখনও বিচার হওয়া সম্ভব।’ সেই হতাশা নিয়ে তিনি বলেন, ‘রুনির মা বিচার না দেখে চলে গেছে, এবার আমার পালা। আমিও চলে যাব। বিচার পাব না। ছেলের কবরও আর দেখা হবে না। কত কত বিচার এই সরকার করল। আমার ছেলে আর ছেলের বউয়ের হত্যার বিচার পেলাম না। এই যে বারবার মামলা পেছানো হচ্ছে, এই বিচার আদৌ হবে কি না, তা নিয়ে আমি অনিশ্চিত। আমার নিরপরাধ ছেলে চলে গেল। মেঘ থাকত নানির কাছে। সেই নানিও চলে গেল। আমিও চলে যাব একদিন। মেঘের আপনজন কমতে শুরু করেছে।’ [সংগৃহীত]