Print Date & Time : 18 July 2025 Friday 6:23 pm

আজকের দিনে

শিক্ষাবিদ ও স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম শহিদ মুহম্মদ শামসুজ্জোহা ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বাঁকুরা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বাঁকুরা জিলা স্কুল থেকে ১৯৪৮ সালে ম্যাট্রিক এবং ১৯৫০ সালে বাঁকুরা ক্রিশ্চিয়ান কলেজ থেকে আইএসসি পাস করেন। এরপর তিনি পূর্ব পাকিস্তানে চলে আসেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন শাস্ত্রে ভর্তি হন। রসায়ন শাস্ত্রে তিনি ১৯৫৩ সালে বিএসসি (সম্মান) এবং ১৯৫৪ সালে এমএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন শামসুজ্জোহা ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় অংশ নেন। লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজ থেকে তিনি ১৯৫৭ সালে পুনরায় বিএসসি (সম্মান) এবং ১৯৬৪ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। মুহম্মদ শামসুজ্জোহা ১৯৬১ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ডেভেলপমেন্ট অফিসার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন এবং একই বছর উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের প্রভাষক পদে যোগ দেন। ১৯৬৬ সালে তিনি রিডার পদে উন্নীত হন। ১৯৬৫ সালে তিনি শাহ মখদুম হলের আবাসিক শিক্ষক এবং ১৯৬৬ সালে প্রাধ্যক্ষ পদে নিযুক্ত হন। ১৯৬৮ সালের ১ মে থেকে মৃত্যুকাল পর্যন্ত তিনি রাবির প্রক্টরের দায়িত্ব পালন করেন। মুহম্মদ শামসুজ্জোহা ছিলেন ১৯৪৭ থেকে ১৯৬৯-এর ভেতরে প্রথম শহিদ হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। ১৯৬৯ সালের জানুয়ারিতে পাকিস্তানি বাহিনী ছাত্রনেতা আসাদকে হত্যা করে এবং ১৫ ফেব্রুয়ারি নিহত হন সার্জেন্ট জহুরুল হক। এসব হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে রাবি ছাত্ররা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন এবং ১৭ ফেব্রুয়ারি পুলিশি হামলায় বহু ছাত্র আহত হন। ১৮ ফেব্রুয়ারি রাবির ছাত্ররা প্রধান ফটকের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। স্থানীয় প্রশাসন ওইদিন বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন নাটোর-রাজশাহী মহাসড়কে ১৪৪ ধারা জারি করে। বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা সামরিক বাধা উপেক্ষা করে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ড. জোহা অকুস্থলে ছুটে যান এবং উত্তেজিত ছাত্রদের ডরমিটরিতে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা চালান। তিনি সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন এবং বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি না চালানোর অনুরোধ করেন। তার অনুরোধ উপেক্ষা করে সেনাবাহিনী মিছিলের ওপর গুলিবর্ষণ করে এবং ড. জোহা গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তাকে হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পূর্বে ড. জোহা তার ছাত্রদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, আমি বলছি গুলিবর্ষণ হবে না। যদি গুলি করা হয় তবে কোনো ছাত্রের গায়ে লাগার আগে তা আমার গায়ে লাগবে। ড. জোহা তার কথা রেখেছিলেন। তাকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে সমাহিত করা হয়। তার মৃত্যু আইয়ুববিরোধী গণআন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ করে। ড. শামসুজ্জোহার মৃত্যুতে সমগ্র দেশে বিক্ষোভের জোয়ার প্রবাহিত হয় এবং এর ফলে আইয়ুব সরকারের পতন ত্বরান্বিত হয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দেশের জন্য শামসুজ্জোহার সর্বোচ্চ ত্যাগের সম্মানে তার নামানুসারে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি আবাসিক হলের নামকরণ করে জোহা হল। [সংগৃহীত]