আজকের দিনে

সাহিত্যিক, সাংবাদিক, রাজনীতিক সত্যেন সেনের জন্মদিন আজ। ১৯০৭ সালের ২৮ মার্চ মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার সোনারঙ গ্রামে তার জন্ম। তার চাচা ক্ষিতিমোহন সেন ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতপূর্ব আচার্য। সত্যেন সেন সোনারঙ হাইস্কুল থেকে এন্ট্রান্স পাস (১৯২৪) করে কলকাতা যান এবং সেখানকার একটি কলেজ থেকে এফ.এ ও বি.এ পাস করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএ (ইতিহাস) শ্রেণিতে ভর্তি হন। কিন্তু যুগান্তর দলের সদস্য হিসেবে সন্ত্রাসবাদী রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার কারণে তিনি ১৯৩১ সালে গ্রেপ্তার হয়ে কারাবরণ করেন এবং জেলে থেকেই বাংলা সাহিত্যে এম.এ পাস করেন। জেল থেকে মুক্তিলাভের (১৯৩৮) পর বিক্রমপুরে ফিরে তিনি কৃষক আন্দোলনে যোগ দেন এবং আমৃত্যু বামপন্থি আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এক পর্যায়ে তিনি বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির নেতা নির্বাচিত হন। সত্যেন সেন ১৯৪৯, ১৯৫৪, ১৯৫৮ ও ১৯৬৫ সালে রাজনৈতিক কারণে গ্রেপ্তার হয়ে বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করেন।

সত্যেন সেন ১৯৫৪ সালে দৈনিক  সংবাদ-এ সহকারী সম্পাদক হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে তার সাংবাদিক জীবন শুরু হয়। তিনি প্রগতি লেখক ও শিল্পী সংঘের সংগঠক এবং উদীচী (১৯৬৯) সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ছিলেন রবীন্দ্রসংগীত ও গণসংগীতের সুকণ্ঠ গায়ক এবং গণসংগীত রচয়িতা। সত্যেন সেন সাহিত্যচর্চা শুরু করেন পরিণত বয়সে এবং অতি অল্পসময়ের মধ্যে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ রচনা করেন। তার রচিত গ্রন্থ সংখ্যা প্রায় চল্লিশ। উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গ্রন্থ: উপন্যাস ভোরের বিহঙ্গী, অভিশপ্ত নগরী, পদচিহ্ন, পাপের সন্তান, কুমারজীব, বিদ্রোহী কৈবর্ত, ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামে মুসলমানদের ভূমিকা, শিশুসাহিত্য পাতাবাহার, অভিযাত্রী, বিজ্ঞান আমাদের এই পৃথিবী, এটমের কথা, জীবনী মনোরমা মাসীমা, সীমান্তসূর্য আবদুল গাফফার খান ইত্যাদি। চিরকুমার সত্যেন সেন বামপন্থি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থেকে প্রগতিশীল ও গণমুখী চেতনা দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়ে সাহিত্যসাধনা করেন। তার রচনায় ঐতিহ্য, ইতিহাস, দেশের মাটি ও মানুষের শ্রেণি-সংগ্রাম প্রাধান্য পেয়েছে। তিনি উপন্যাসের জন্য ‘বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার’ (১৯৭০) লাভ করেন। ১৯৮১ সালের ৫ ডিসেম্বর পশ্চিমবঙ্গের  শান্তিনিকেতন এ তার মৃত্যু হয়। [সংগৃহীত]