আজকের দিনে

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর অকুতোভয় বীর সেনানী মুক্তিকামী আপামর জনসাধারণের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশমাতৃকাকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে জল, স্থল ও আকাশপথে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে অপ্রতিরোধ্য আক্রমণ চালিয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধকে ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধারা ১৫ নভেম্বর থেকে পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধের গতি আরও বাড়িয়ে দেয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে যৌথ বাহিনী ১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বর যশোরের বয়রা এলাকা থেকে অভিযান শুরু করে। মিত্রবাহিনী, মুক্তিবাহিনী এবং সেনাবাহিনীর সমন্বয়ে পরিচালিত এই যৌথ অভিযান যুদ্ধের ফলাফলকে ত্বরান্বিত করে, যা আমাদের মুক্তিযুদ্ধকালীন চলমান অন্যান্য যুদ্ধের জন্য নতুন মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত। যুদ্ধ-পরবর্তী বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধে সামরিক বাহিনীর অবদানকে সাধারণ জনতার আত্মত্যাগের সঙ্গে একীভূত করে রাখা এবং ২১ নভেম্বরের গুরুত্ব ও তাৎপর্য সমুন্নত রাখতে গত শতকের আশির দশকের মাঝামাঝি থেকে সম্মিলিতভাবে সশস্ত্র বাহিনী দিবস পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এর আগে ২৫ মার্চ সেনা, ১০ ডিসেম্বর নৌ এবং বিমানবাহিনী ২৮ সেপ্টেম্বর আলাদাভাবে দিবস পালন করত। ২১ নভেম্বর সশস্ত্র বাহিনী দিবস। সশস্ত্র বাহিনীর প্রত্যেক সদস্যের কাছে এ দিনটি অত্যন্ত তাৎপর্যময়। আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে ২১ নভেম্বর বিশেষ গৌরবময় স্থান দখল করে আছে। ১৯৭১ সালের এই দিনে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর অকুতোভয় সদস্যরা সম্মিলিতভাবে দখলদার পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সমন্বিত আক্রমণের সূচনা করে। বাংলার আপামর জনতা আর সশস্ত্র বাহিনীর বাঙালি সদস্যদের সম্মিলিত ও পরিকল্পিত আক্রমণে মুক্তিযুদ্ধে যোগ হয় এক নতুন মাত্রা। এভাবেই দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ আর ৩০ লাখ শহিদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে ১৬ ডিসেম্বরে অর্জিত হয় আমাদের মহান স্বাধীনতা। মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তিনজন বীরশ্রেষ্ঠসহ ১ হাজার ৫৩৩ জন সেনাসদস্য শাহাদত বরণ করেন এবং ২৯১ জন সেনাসদস্য খেতাবপ্রাপ্ত হন। মুক্তিযুদ্ধে নৌবাহিনীর দুঃসাহসিক অভিযানে বহুসংখ্যক নৌ-সদস্য শাহাদত বরণ করেন। তাদের বীরত্ব ও আত্মত্যাগের স্বীকৃতিস্বরূপ শহিদ রুহুল আমিন, ইআরএ-১, কে বীরশ্রেষ্ঠ খেতাব প্রদান করা হয়। এছাড়া পাঁচজনকে বীর উত্তম, আটজনকে বীর বিক্রম এবং ৭ জনকে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করা হয়। মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমানকে মুক্তিযুদ্ধের সর্বোচ্চ খেতাব বীরশ্রেষ্ঠ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। এছাড়া ছয়জনকে বীর উত্তম, একজনকে বীর বিক্রম এবং ১৫ জনকে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করা হয়। জাতি মহান মুক্তিযুদ্ধে সশ্রস্ত্র বাহিনীর  গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকাকে গভীর  শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে।