Print Date & Time : 12 September 2025 Friday 1:31 pm

আজকের দিনে

 

উপমহাদেশের গণসংস্কৃতি আন্দোলনের প্রবাদ প্রতিম শিল্পীসংগ্রামী হেমাঙ্গ বিশ্বাসের জন্ম ১৯১২ সালের ১৪ ডিসেম্বর হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার মিরাশী গ্রামে।

হবিগঞ্জ মিডল ইংলিশ স্কুল এবং ডিব্র–গড়ের জর্জ ইনস্টিটিউটে শিক্ষা শেষে হবিগঞ্জ সরকারি স্কুল থেকে ১৯৩০ সালে দুই বিষয়ে লেটার নিয়ে কৃতিত্বের সঙ্গে প্রবেশিক পাস করে ভর্তি হন সিলেটে মুরারীচাঁদ কলেজে। কলেজছাত্র হেমাঙ্গ বিশ্বাস জড়িয়ে পড়েন স্বদেশি আন্দোলনে। এ কারণে তাকে ৬ মাস কারাভোগ করতে হয় এবং বহিষ্কৃত হতে হয় কলেজ থেকে। স্বদেশি আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণের অপরাধে ১৯৩২ সালে আবার গ্রেপ্তার হয়ে প্রায় তিন বছর কারাভোগ করেন। তখনই আক্রান্ত হন মারাত্মক যক্ষ্মা রোগে। বন্ড দিয়ে জেলমুক্তির রাষ্ট্রীয় প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেও মৃত্যু নিশ্চিত ভেবে ব্রিটিশ সরকার তাকে মুক্তি দিয়ে দায়মুক্তি নিয়েছিল। যাদবপুর যক্ষ্মা হাসপাতালে দীর্ঘ তিন বছর চিকিৎসা শেষে সুস্থ হন। ১৯৩৯ সালে কংগ্রেস সভাপতি নেতাজি সুভাষ বসু হবিগঞ্জে এলে তাকে বিপুল সংবর্ধনা দেয়া হয়। সংবর্ধনাপত্র পাঠ করেন হেমাঙ্গ বিশ্বাস। চা-বাগানের শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি আদায়ের আন্দোলন এবং ডিকবয় তেল কোম্পানির শ্রমিক হত্যার প্রতিবাদে সংঘটিত আন্দোলনে হেমাঙ্গ বিশ্বাসই নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। কমিউনিস্ট মতাদর্শের কারণে জমিদার পিতা তাকে বাড়ি থেকে বিতাড়িত করলে তিনি চলে যান শিলংয়ে। আমৃত্যু হেমাঙ্গ বিশ্বাস আর ফিরে যাননি পরিবার-শ্রেণির কাছে।

১৯৪৬ সালে আসাম প্রদেশ গণনাট্য সংঘ গঠিত হলে তিনি সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং পরপর তিনবার ওই পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৪৭-এ গণনাট্য সংঘ এবং কমিউনিস্ট পার্টির কর্মীরা দেশভাগের শিকার হন। দেশভাগের নিষ্ঠুর পরিণতিতে হেমাঙ্গ বিশ্বাসের ব্যঙ্গাত্মক গান-মাউন্টব্যাটন মঙ্গলকাব্য দেশজুড়ে সাড়া ফেলেছিল। ১৯৪৮ সালে তেলেঙ্গানা ও তেভাগা কৃষক বিদ্রোহ দমনে স্বাধীন ভারতে কমিউনিস্ট পার্টিকে নিষিদ্ধ করা হয়। হাজার হাজার কমিউনিস্ট নেতাকর্মীদের নিষ্ঠুরভাবে দমন-পীড়ন এবং গণগ্রেপ্তার করা হয়। ১৯৫১ সালে হেমাঙ্গ বিশ্বাস গ্রেপ্তার হলেও অসুস্থতার কারণে ছাড়া পেয়ে যান। ১৯৫৭ সালে সুচিকিৎসার জন্য কমিউনিস্ট পার্টির উদ্যোগে তাকে চীনে পাঠানো হয়। টানা তিন বছর চীনে চিকিৎসাধীন থাকাবস্থায় চীনা ভাষাও রপ্ত করেছিলেন। চীনা ভাষায় তার অনেক গানও রয়েছে। চীন থেকে ফিরে ১৯৫৯ সালে চট্টগ্রামের মেয়ে রাণু দত্তকে বিয়ে করেন। ১৯৬৯ সালে নকশাল বাড়ি আন্দোলনের প্রতি তিনি প্রকাশ্যে সমর্থন প্রদান করেছিলেন। ১৯৭১ সালে হেমাঙ্গ বিশ্বাস গঠন করেন ‘মাস সিঙ্গার্স’ নামক গণসংগীতের গানের দল এবং আমৃত্যু এই দল নিয়েই ঘুরে বেড়িয়েছেন ভারতজুড়ে এবং দেশ-বিদেশে। ২২ নভেম্বর ১৯৮৭ আজন্ম বিপ্লবী-অবিচল মতাদর্শিক হেমাঙ্গ বিশ্বাস কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।

আমাদের জাতীয়তাবাদী এবং মানবমুক্তি আন্দোলন-সংগ্রামে হেমাঙ্গ বিশ্বাসের অনেক গান আমাদের এখানে গাওয়া হয়েছিল এবং এখনও গাওয়া হয়ে থাকে।

নাটক, যাত্রা এবং চলচ্চিত্রে সুর দিয়েছেন, সংগীত পরিচালনা করেছেন। উৎপল দত্তের কল্লোল ও তীর নাটক উল্লেখযোগ্য।