আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু (১৮৫৮-১৯৩৭) পদার্থবিজ্ঞানী ও উদ্ভিদবিজ্ঞানী। জগদীশচন্দ্র বসু ১৮৫৮ সালের ৩০ নভেম্বর ময়মনসিংহ জেলায় জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতা ভগবানচন্দ্র বসু ইংরেজ সরকারের একজন ডেপুটি কালেক্টর ছিলেন। বসু পরিবারের আদি নিবাস ছিল মুন্সীগঞ্জের রাঢিখাল গ্রামে। জগদীশচন্দ্রের প্রাথমিক শিক্ষা ফরিদপুরে। তার ১১ বছর বয়সে বসু পরিবার কলকাতায় চলে যায়। সেখানে হেয়ার স্কুলে ভর্তি হন। পরে সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুল থেকে ১৮৭৫ সালে এন্ট্রান্স পরীক্ষা পাস করেন। ১৮৭৯ সালে একই কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে স্নাতক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তাকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য ইংল্যান্ডে পাঠানো হয় এবং পরবর্তী বছরগুলোতে তিনি পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে অধ্যয়ন করেন। তবে প্রথমে এক বছর চিকিৎসাশাস্ত্রে অধ্যয়ন করেন। কিন্তু স্বাস্থ্যগত কারণে ডাক্তারি পড়া বাদ দিয়ে কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রাইস্ট কলেজে ভর্তি হন। সেখানে তিনি প্রাকৃতিক বিজ্ঞানে ট্রাইপজ পরীক্ষায় অংশ নিয়ে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। প্রায় একই সময়ে ১৮৮৪ সালে তিনি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। ভারতে ফেরার পর জগদীশচন্দ্র বসু কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে সহকারী অধ্যাপক পদে নিযুক্ত হন। বিনা তারে শব্দ প্রেরণের ‘ক্রিস্ট্যাল রিসিভার’ যন্ত্র তিনি আবিষ্কার করেন তার সাহায্যে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে প্রায় এক মাইল দূরে অবস্থিত তার বাসভবনে সাংকেতিক শব্দ পাঠাতে সক্ষম হন। তার গবেষণা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলাফল বিশ্বের প্রধান বিজ্ঞান সাময়িকীগুলোতে প্রকাশিত হয়। এসব গবেষণা কর্মের ওপর ভিত্তি করেই ১৮৯৬ সালে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ডিএসসি ডিগ্রি প্রদান করে। ১৮৯৯ থেকে ১৯০৭ পর্যন্ত সময়ব্যাপী জগদীশ বসু জীব ও জড়ের উদ্দীপনায় সাড়া দেয়ার ক্ষমতা নিয়ে গভীর অধ্যয়ন ও গবেষণায় ব্যাপৃত থাকেন। জগদীশচন্দ্র বসু ১৯১৫ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যাপনা থেকে অবসর গ্রহণ করেন। এরপর তিনি এমিরিটাস প্রফেসর পদ লাভ করেন। ১৯১৭ সালে উদ্ভিদ-শরীরতত্ত্ব নিয়ে গবেষণার জন্য তিনি কলকাতায় ‘বসু বিজ্ঞান মন্দির’ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯১৬ সালে জগদীশচন্দ্র বসু ‘নাইট’ উপাধিতে ভূষিত হন। ১৯২০ সালে তিনি রয়্যাল সোসাইটি অব লন্ডনের ফেলো নির্বাচিত হন এবং ১৯২৮ সালে ভিয়েনা একাডেমি অব সায়েন্সের করেসপন্ডিং সদস্যপদ লাভ করেন। বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু পথিকৃতের ভূমিকা পালন করেন। তার বিজ্ঞানবিষয়ক প্রবন্ধাবলি অব্যক্ত নামক গ্রন্থে সংকলিত। ১৯৩৭ সালে ভারতের গিরিডিতে মৃত্যুবরণ করেন।
[সংগৃহীত]