হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী (১৮৯২-১৯৬৩) রাজনীতিক ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। তিনি ১৮৯২ সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর জেলার এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জš§গ্রহণ করেন। সোহ্রাওয়ার্দী অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি (সম্মান) ও বিসিএল ডিগ্রি লাভ করেন এবং পরে লন্ডনের গ্রেইজ ইন থেকে ব্যরিস্টার-অ্যাট-ল সম্পন্ন করেন। ১৯২০ সালে ইংল্যান্ড থেকে ভারতে ফিরেই তিনি রাজনীতিতে অংশ নেন।
হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী ১৯২১ থেকে ১৯৫৮ সালের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভা ও পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্য ছিলেন। তিনি তার রাজনৈতিক জীবনে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত থেকেছেন। সেসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ১৯২৪ সালে কলকাতা করপোরেশনের ডেপুটি মেয়র, ১৯৩৭ সালের নির্বাচনোত্তর ফজলুল হক কোয়ালিশন মন্ত্রিসভার শ্রম ও বাণিজ্যমন্ত্রী, ১৯৪৩-১৯৪৫ সালে খাজা নাজিমউদ্দীন মন্ত্রিসভায় বেসামরিক সরবরাহ মন্ত্রী, ১৯৪৬-৪৭ সালে অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী, পাকিস্তান আমলে ১৯৫৪-৫৫ সালে মোহাম্মদ আলীর মন্ত্রিসভায় আইনমন্ত্রী এবং ১৯৫৬-৫৭ সালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। ১৯২৬ সালে তিনি ইনডিপেনডেন্ট মুসলিম পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৯ সালে পরবর্তী নির্বাচনের সময় তিনি বেঙ্গল মুসলিম ইলেকশন বোর্ড একটি সংগঠন গড়ে তোলেন। ১৯৩৭ সালের নির্বাচনের আগে সোহ্রাওয়ার্দী কলকাতায় ইউনাইটেড মুসলিম পার্টি নামে একটি দল গঠন করেন এবং নিজে এই দলের সম্পাদক হন। ১৯৩৭-৪৩ সালে বঙ্গীয় মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক থাকাকালে সোহ্রাওয়ার্দী সমগ্র প্রদেশে দলকে সংগঠিত করার কাজে আত্মনিয়োগ করেন। ১৯৪৬ সালের নির্বাচনে বাংলায় মুসলিম লীগের বিস্ময়কর বিজয়ের রূপকারও ছিলেন তিনি। সেই নির্বাচনে মুসলিম লীগ ১২১টি সংরক্ষিত আসনের মধ্যে জিতেছিল ১১৪টি আসনে। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পাকিস্তানের প্রথম ও প্রধান বিরোধী দল আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও সোহ্রাওয়ার্দীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। ১৯৫৪ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে মুসলিম লীগ যুক্তফ্রন্টের কাছে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়। এ পাকিস্তানে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (এনডিএফ) গঠন করে তিনি ১৯৬২-৬৩ সালের আইয়ুব-বিরোধী সম্মিলিত জোটের আন্দোলনে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। নতুন পাকিস্তান রাষ্ট্রের কর্ণধারদের সঙ্গে কখনোই তার সুসম্পর্ক ছিল না। সে কারণে ১৯৪৯ সালে ‘সোহ্রাওয়ার্দী পাকিস্তানের স্থায়ী বাসিন্দা নন’ এ অজুহাতে লিয়াকত আলী খানের সরকার পাকিস্তানের গণপরিষদ থেকে সোহ্রাওয়ার্দীর সদস্যপদ খারিজ করে দেয়।
সোহ্রাওয়ার্দী সাংবিধানিক শাসনে দৃঢ় বিশ্বাসী ছিলেন; আর এ কারণেই তিনি ১৯৫৪ সালে দলীয় আপত্তি উপেক্ষা করে মোহাম্মদ আলীর মন্ত্রিসভায় আইনমন্ত্রী হিসেবে যোগ দেন। তিনি পাকিস্তানের ১৯৫৬ সালের সংবিধান প্রণয়নে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
সোহ্রাওয়ার্দী লেবাননের বৈরুতের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকাকালে ১৯৬৩ সালের ৫ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন।