দেশে শিশুদের জন্য বেশ কয়েকটি দিবস উদ্যাপন করা হয়। শিশু বিষয়ে একাধিক দিবস থাকায় অনেকে বিভ্রান্ত হন। জাতীয় কন্যা শিশু দিবস: কন্যা শিশুর প্রতি লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য রোধ, তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও সুষ্ঠু বিকাশের বিষয়টিকে বৃহত্তর সামাজিক আন্দোলনে রূপ দেয়ার লক্ষ্যে ২০০০ সালে একটি সরকারি আদেশের মাধ্যমে ৩০ সেপ্টেম্বরকে ‘জাতীয় কন্যা শিশু দিবস’ হিসেবে পালনের ঘোষণা দেয়া হয়। সেই থেকেই প্রতি বছর যথাযোগ্য মর্যাদায় সারাদেশব্যাপী দিবসটি পালিত হচ্ছে।
কন্যা শিশু দিবস: শিশুদের বিভিন্ন মৌলিক অধিকার, সুরক্ষা এবং শিশুর উন্নয়ন ও বিকাশে সংশ্লিষ্ট সবাইকে অধিকতর উদ্যোগী ও এই বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকার প্রতি বছর অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার ‘বিশ্ব শিশু দিবস ও এর পরের ৭ দিন ‘জাতীয় শিশু অধিকার সপ্তাহ’ পালন করে থাকে। সপ্তাহব্যাপী আয়োজিত এ অনুষ্ঠানের একটি দিন বিশেষভাবে নির্ধারিত থাকে কন্যাশিশুদের জন্য।
আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবস: বাংলাদেশে জাতীয় কন্যা দিবস ছাড়াও জাতিসংঘের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতি বছর ১১ অক্টোবর ‘আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়। মেয়েদের শিক্ষার অধিকার পুষ্টি সহায়তা ও ন্যায় অধিকার, চিকিৎসা সুবিধা ও বৈষম্য থেকে সুরক্ষা নারীর বিরুদ্ধে হিংসা ও বলপূর্বক বাল্যবিবাহ বন্ধে কার্যকর ভূমিকা পালনের উদ্দেশ্যে এ দিবসের সূচনা হয়। ২০১২ সালে সারা বিশ্বব্যাপী এ দিবসটি পালন করা শুরু হলেও বাংলাদেশে এর পরের বছর অর্থাৎ ২০১৩ সাল থেকে ‘বিশ্ব কন্যা শিশু দিবস’ পালন করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, শিশুদের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও সচেতনতা সৃষ্টির জন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বছরের একাধিকবার বিভিন্ন নামে শিশু দিবস পালন করা হয়। এর পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশগুলো বিভিন্ন সময় নিজেদের মতো করে পালন করে জাতীয় শিশু দিবস। কেউ যদি নিজের সন্তানের ছবি যে কোনো দিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করতে চান; তা ব্যক্তিগত ব্যাপার। তবে সেখানে জাতীয় কন্যা দিবস, ‘আন্তর্জাতিক কন্যা দিবস’, ‘বিশ্ব কন্যা শিশু দিবস’ এই জাতীয় শব্দ উল্লেখ না করাই বাঞ্ছনীয়। এর ফলে বিভ্রান্তি তৈরি হয়। কন্যা-জায়া-জননীরা অন্ধকারাচ্ছন্ন, কুসংস্কার, পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা ও ধর্মীয় আবরণে হাজার হাজার বছর ধরে যেরকম নির্যাতিত-নিপীড়িত হয়েছিল, অধিকার বঞ্চিত হয়েছিল তা বর্তমান বিশ্বে অনেকটাই কমে এসেছে। অনেক ক্ষেত্রেই নারীরা নিজের অধিকার আদায়, গ্রহণযোগ্যতা ও সক্ষমতা প্রদর্শন করছে। তথাপি বিশ্ব বাস্তবতায় কন্যাশিশুর শারীরিক যতœ, একটি নিরাপদ, সমতাভিত্তিক সমাজ ও তাদের প্রাপ্য ন্যায্য অধিকারগুলো এখনও পুরোপুরি অর্জিত হয়নি। এখনও দেশে দেশে নানাভাবে মেয়ে শিশুদের বঞ্চিত করা হয়; তাদের খাদ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, পোশাকসহ নানা মৌলিক চাহিদা থেকেই বঞ্চিত করা হয়। ক্ষেত্রবিশেষে কন্যাশিশু বঞ্চিত হয় নিজের ঘরে, নিজের বাবা-মা ও নিকটাত্মীয়দের কাছ থেকে। তাই কন্যাশিশুর জন্য একটি সমতাভিত্তিক নিরাপদ বিশ্ব গড়ে তোলার ক্ষেত্রে জনসচেতনতার বিকল্প নেই। বিশ্ব হোক সব কন্যাশিশুর জন্য নিরাপদ।
মনিরুল ইসলাম শ্রাবণ
ব্রাহ্মণবাড়িয়া