আজ বিশ্ব আর্থ্রাইটিস দিবস। ১৯৯৬ সাল থেকে বিশ্ব ‘ওয়ার্ল্ড আর্থ্রাইটিস ডে’ দিবসটি ‘আর্থ্রাইটিস অ্যান্ড রিউমেটিজম ইন্টারন্যাশনাল’-এর তত্ত্বাবধানে পালন করে আসছে। বহু প্রাচীনকাল থেকে এই রোগটির অস্তিত্ব থাকলেও ৪৫০০ খ্রিষ্টপূর্ব থেকেই এটি পুস্তক বা নথিভুক্ত হওয়া শুরু করে এবং আকারে সবার মাঝে ছড়িয়ে পড়তে এবং সংক্রমিত হতে শুরু করে। ১৮৫৯ সালের দিকে রোগটিকে তার বর্তমান ‘আর্থ্রাইটিস’ নামকরণ করা হয়। ‘আর্থ্রাইটিস ফাউন্ডেশন’ আটলান্টা’Ñএর তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে মানুষের অক্ষমতার প্রথম এবং প্রধান কারণ হলো আর্থ্রাইটিস। বর্তমানে শুধু যুক্তরাষ্ট্রে ৭০ লক্ষাধিক বেশি লোক এখন আরথ্রাইটিসে আক্রান্ত। আমাদের দেশে প্রায় ২৫ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনো ধরনের বাত ও জটিল বাতরোগে আক্রান্ত। আর্থ্রাইটিস বলতে সাধারণত গিরার প্রদাহ বোঝানো হয় যা সন্ধিবাত নামেও পরিচিত। প্রকৃতপক্ষে, ‘আর্থ্রাইটিস’ একক রোগ নয়; এটি অনেকগুলো রোগের প্রধান লক্ষণ। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়, যা পুরুষদের চেয়ে নারীদের ক্ষেত্রে চারগুণ বেশি।
আর্থ্রাইটিস হয়ে গেলে রোগীকে অবশ্যই দ্রুত একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। চিকিৎসক রোগের লক্ষণ, রোগীর ইতিহাস, পারিবারিক ইতিহাস, রোগীর প্রদাহের বিস্তারিত এবং শারীরিক পরীক্ষা এবং জয়েন্টের এক্স-রে, রক্তের বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে রোগ শনাক্ত করেন। এ ক্ষেত্রে প্রধানত রিউম্যাটোলজিস্ট ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ এবং চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ও ফিজিক্যাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি। বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, যথাসময়ে রোগ নির্নয় এবং সঠিক চিকিৎসা মাধ্যমে আর্থ্রাইটিসের খুব উত্তম নিয়ন্ত্রণ করা সহজ। মনে রাখতে হবে, ব্যথার জন্য অযাচিত কিছু ব্যথানাশক ওষুধ বা স্টেরয়েড সেবন করলেও রোগী দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হয়ে থাকে। বেশির ভাগ আরথ্রাইটিসের মূল চিকিৎসা হলো রোগ নিয়ন্ত্রণকারী অ্যান্টিরিউম্যাটিক ড্রাগ। এগুলো তৎক্ষণাৎ ব্যথা না কমালেও রোগকে নিয়ন্ত্রণ করে। এসব ওষুধ দীর্ঘদিন সেবন করা প্রয়োজন। পাশাপাশি নিয়মিত পরীক্ষা করে তাদের কার্যকারিতা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা প্রয়োজন মনে রাখা প্রয়োজন এই ওষুধ ব্যবহারের আগে ভ্যাকসিনেশন বা টিকা এবং ইনফেকশন যেমন সুপ্ত যক্ষ্মা (খধঃবহঃ ঞই) নির্ণয় এবং সেটির চিকিৎসা প্রয়োজন হয়। অন্যথায় জীবনসংশয়ী মারাত্মক জীবাণু সংক্রমণে মৃত্যও হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
ওজন হ্রাস এবং ব্যায়াম এবং শারীরিক থেরাপি আর্থ্রাইটিস নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্ট সার্জারির প্রয়োজন হতে পারে। আর্থ্রাইটিসের চিকিৎসার দ্রুত গ্রহণ করলে এই রোগের সঠিক নিয়ন্ত্রণ এবং অনেকাংশে রোগীর কার্যক্ষমতা এবং জীবনযাপনের মান রক্ষা করা যায়।
ডা. শামীম আহমেদ