আজকের দিনে

মোহাম্মদ নাসির আলী বাংলাদেশের একজন শিশুসাহিত্যিক। তিনি সাধারণত ছোটদের জন্য লিখেছেন এবং সাহিত্যচর্চায় প্রতিষ্ঠা লাভ করেন শিশুসাহিত্যিক হিসেবে। ছোটদের জন্য শিক্ষামূলক গল্প, প্রবন্ধ ও জীবনকথা রচনায় দক্ষতার পরিচয় দেন।

ঢাকা জেলার বিক্রমপুরের দাহদা গ্রামের এক মধ্যবিত্ত পরিবারে মোহাম্মদ ইজ্জত আলী ও কসিমুন্নেসার সংসারে ১৯১০ সালের ১০ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন মোহাম্মদ নাসির আলী। জন্ম ধাইদায় হলেও নাসির আলীর শৈশব কেটেছে বাবার বাসস্থান রাজবাড়ী শহরে। তার শিক্ষাজীবনের শুরুও সেখানেই। তবে কিছুদিন পর তিনি চলে আসেন গ্রামের বাড়ি বিক্রমপুরে। সেখানে থেকেই পড়াশোনা করতে থাকেন।

মোহাম্মদ নাসির আলী তেলিরবাগ কালীমোহন দুর্গামোহন ইনস্টিটিউট থেকে ১৯২৬ সালে স্বর্ণপদকসহ এন্ট্রান্স পাস করেন। জগন্নাথ কলেজ থেকে ১৯২৮ সালে তিনি কৃতিত্বের সঙ্গে আইএ পাস করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৩১ সালে বি.কম পাস করেন।

তিনি ১৯৩৩ সালে কলকাতা হাইকোর্টে অনুবাদক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৫২ সালে তিনি অধুনালুপ্ত দৈনিক আজাদের শিশু-কিশোর বিভাগে মুকুল মাহফিল পরিচালনা করেন এবং বাগবান ছদ্মনামে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীকালে তিনি একটি পত্রিকার শিশুবিভাগের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ঢাকায় এসে হাইকোর্টের চাকরিতে যোগদান করেন এবং ১৯৬৭ সালে অবসরগ্রহণ করেন। তবে এর আগেই তিনি ১৯৪৯ সালে বন্ধু আইনুল হক খানের সঙ্গে যৌথভাবে নওরোজ কিতাবিস্তান নামে প্রকাশনা সংস্থা গড়ে তোলেন, যা এখনও পুস্তক প্রকাশনার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

শিশুতোষ বইয়ের লেখক হিসেবেই নাসির আলী বেশি পরিচিত। তার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৪০টিরও বেশি। তবে তিনি অনেক শিক্ষামূলক গল্প, প্রবন্ধ ও জীবনী লিখেছেন। হাস্যরস সৃষ্টিতে তিনি যথেষ্ট দক্ষ ছিলেন। তার উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে রয়েছেÑআমাদের কায়েদে আজম (১৯৪৮), মণিকণিকা (১৯৪৯), শাহী দিনের কাহিনী (১৯৪৯), ছোটদের ওমর ফারুক (১৯৫১), আকাশ যারা করলো জয় (১৯৫৭), আলী বাবা (১৯৫৮), টলস্টয়ের সেরা গল্প (১৯৬৩, ২য় সংস্করণ), ইতালীর জনক গ্যারিবল্ডি (১৯৬৩), বীরবলের খোশগল্প (১৯৬৪), সাত পাঁচ গল্প (১৯৬৫), বোকা বকাই (১৯৬৬), যোগাযোগ (১৯৬৮), লেবু মামার সপ্তকাণ্ড (১৯৬৮), আলবার্ট আইনস্টাইন (১৯৭৬), মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা (১৯৭৬) প্রভৃতি।

শিশুসাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য নাসির আলী বেশ কয়েকটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কারে সম্মানিত হন। তিনি ১৯৬৭ সালে শিশুসাহিত্যে বাংলা একাডেমি পুরস্কার, ১৯৬৮ সালে ইউনেস্কো এবং একই বছর ইউনাইটেড ব্যাংক অব পাকিস্তান পুরস্কার লাভ করেন। বই প্রকাশনার ক্ষেত্রে অবদানের জন্য ১৯৭৮ সালে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র ও ১৯৮৫ সালে ইসলামিক ফাউন্ডেশন তাকে স্বর্ণপদকে (মরণোত্তর) ভূষিত করে।

মোহাম্মদ নাসির আলী ১৯৬৯ সালে প্রকাশনা সম্পর্কে করাচি থেকে ইউনেস্কো ট্রেনিং গ্রহণ করেন। তাছাড়া তিনি ভালো ছবি আঁকতে পারতেন। ফটোগ্রাফিতেও তার প্রশংসনীয় দক্ষতা ছিল। মোহাম্মদ নাসির আলী ১৯৭৫ সালের ৩০ জানুয়ারি হƒদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।

[সংগৃহীত]