নিজস্ব প্রতিবেদক: খাদ্য নিরাপত্তা বা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পর বর্তমান সরকার নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের দিকে গুরুত্বারোপ করেছে। অন্যদিকে স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণের বিষয়ে জনসচেতনতাও তৈরি হয়েছে। ফলে নিরাপদ সবজি চাষ বর্তমানে দেশজুড়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। কৃষকদের নিরাপদ চাষে উৎসাহিত করার পাশাপাশি সঠিক বাজার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে তাদের পণ্যের সঠিক মূল্য প্রাপ্তি এবং ভোক্তাদের জন্য নিরাপদ সবজি ও ফল প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে। এলাকাভিত্তিক কৃষকের বাজার এ ক্ষেত্রে একটি কার্যকর সমাধান।
নেদারল্যান্ডস সরকারের সহায়তায় গতকাল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও), কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের সম্মিলিত উদ্যোগে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২৬নং ওয়ার্ডে কৃষকের বাজার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথা বলেন।
আজিমপুর রোডে স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানার সামনে আয়োজিত কৃষকের বাজারে প্রতি শুক্রবার সকাল ৭টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত সাভারের ভাকুর্তা থেকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কর্তৃক যাচাইকৃত ১০ নিরাপদ চাষি তাদের উৎপাদিত সবজি এবং ফলমূল বিক্রি করবেন।
কৃষকের বাজারটি উদ্বোধন করেন আয়োজনের প্রধান অতিথি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২৬নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাসিবুর রহমান মানিক এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর নিলুফার রহমান। উদ্বোধনী আয়োজনে ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের সিনিয়র প্রজেক্ট ম্যানেজার জিয়াউর রহমানের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন সাভারের ভাকুর্তা ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বজলুর রশীদ, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার ঢাকা ফুড সিস্টেম প্রকল্পের ন্যাশনাল প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর জয়নাল আবেদীন ও ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের পরিচালক গাউস পিয়ারী। আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২৬নং ওয়ার্ডের ওয়ার্ড সচিব মানিক বিশ্বাস, ঢাকা ফুড সিস্টেম প্রকল্পের ঢাকা দক্ষিণের সিটি কো-অর্ডিনেটর শরীফা পারভীন এবং স্থানীয় এলাকাবাসী।
হাসিবুর রহমান মানিক বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পর আমরা এখন নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতের লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছি। নিরাপদ খাদ্য প্রাপ্তি আমাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। কৃষকের বাজার এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কার্যকর অবদান রাখবে বলে আমাদের বিশ্বাস। কৃষকের বাজার কার্যক্রমটি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা এবং কৃষকদের যেন স্থানীয় হকার বা দোকানিদের কাছ থেকে কোনো ধরনের অনিরাপদ পরিস্থিতির শিকার না হতে হয়, সে বিষয়ে সিটি মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের নেতৃত্বে কাউন্সিলর কার্যালয় থেকে সার্বিক সহযোগিতা থাকবে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২২, ২৩ ও ২৬নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর নিলুফার রহমান বলেন, ২৬নং ওয়ার্ড একটি জনবহুল এলাকা। ১০ কৃষক দ্বারা এলাকাবাসীর নিরাপদ খাদ্যের চাহিদা পূরণ করা কঠিন। তাই কার্যক্রমটি আরও সুবিস্তৃত করা প্রয়োজন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সব ওয়ার্ডে কৃষকের বাজার গড়ে তোলা হলে জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।
বজলুর রশীদ বলেন, সবজি চাষে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার এবং কীটনাশক ব্যবহারের ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। পাশাপাশি মাটি, পানি, বায়ু দূষিত হয় এবং জীববৈচিত্র্যের ক্ষতিসাধন হয়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর দেশব্যাপী কৃষকদের সবজি চাষে জৈব সার প্রয়োগ এবং পোকা দমনে ফেরোমেন ফাঁদ, আঠালো ফাঁদ প্রভৃতি ব্যবহারে উৎসাহী করছে। কৃষকদের বাজার ব্যবস্থাপনায় সেভাবে অংশগ্রহণের সুযোগ না থাকায় তারা পণ্যের সঠিক মূল্য প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কৃষকের বাজারের মতো উদ্যোগগুলো কৃষকদের লাভবান করবে।
জয়নাল আবেদীন বলেন, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা বিশ্বব্যাপী নিরাপদ খাদ্য ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করছে। ঢাকা ফুড সিস্টেম প্রকল্পের আওতায় আমরা এলাকাভিত্তিক কৃষকের বাজার স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। কাউন্সিলর কার্যালয়ের সহযোগিতা ছাড়া এ কার্যক্রম সফল করা সম্ভব নয়। কৃষকদের টয়লেট, পানিসহ প্রয়োজনীয় সুবিধাদি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য কাউন্সিলর মহোদয়কে অনুরোধ জানাই।
গাউস পিয়ারী বলেন, নিরাপদ খাদ্য গ্রহণের বিষয়ে আমাদের জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে। বিশেষত ভবিষ্যৎ প্রজšে§র সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতে নিরাপদ খাদ্যের বিকল্প নেই। পাশাপাশি ছাদবাগান তৈরিতেও আমাদের জনগণকে আগ্রহী করে তুলতে হবে। এতে একদিকে যেমন নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্যের চাহিদা পূরণ হবে, তেমনি নগর অঞ্চলে তাপমাত্রা হ্রাসেও ভূমিকা রাখা সম্ভব হবে।