Print Date & Time : 2 September 2025 Tuesday 1:39 pm

আজ বুয়েট শিক্ষার্থী শহিদ ফারদিনের জন্মবার্ষিকী

নিজস্ব প্রতিবেদক : আজ ২৫ মে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র এবং বুয়েট ডিবেট ক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফারদিন নূর পরশের ২৬তম জন্মদিন। স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার শাসনামলের চাঞ্চল্যকর ও অমীমাংসিত হত্যাকাণ্ডগুলোর একটি ফারদিন হত্যাকাণ্ড।

২০২২ সালের ৪ আগস্ট রাজধানীর ডেমরার কোনাপাড়ার বাসা থেকে বুয়েট ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে নিখোঁজ হয়েছিলেন ফারদিন নূর। এর চারদিন পর নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে পাওয়া গিয়েছিল এই তুখোড় বিতার্কিকের মরদেহ। ফারদিন ছিলেন বাংলাদেশ টেলিভিশনের জাতীয় বিতর্ক প্রতিযোগিতার নিয়মিত প্রতিদ্বন্দ্বী এবং ২০২২-এর ডিসেম্বরে স্পেনের মাদ্রিদে অনুষ্ঠিত ‘ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটিজ ডিবেটিং চ্যাম্পিয়নশিপে বুয়েটের প্রতিনিধিত্ব করার কথা ছিল তার। এছাড়াও উদ্ভাস-উন্মেষের ইন্সট্রাক্টর ছিলেন ফারদিন নূর পরশ।

ফারদিনের লাশের পোস্ট মর্টেমকারী চিকিৎসকের ভাষ্য ছিল, ‘ভিকটিমের মাথার চারপাশে এবং বুকের বামপাশে বেশ কিছু আঘাতের চিহ্ন পেয়েছেন এবং এটি অবশ্যই হত্যাকাণ্ড’। এর সূত্রে ধরে ফারদিনের পিতা সাংবাদিক নূরউদ্দিন রানা রামপুরা ডেমরা থানায় একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের মামলা করেন।

এই হত্যাকাণ্ডের আড়াই বছর পেরিয়ে গেলেও অধিকতর তদন্তের দায়িত্বে থাকা ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি) আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি।
বর্তমানে ফারদিন হত্যা মামলাটি ‘গুম সংক্রান্ত কমিশন অব ইনকোয়ারি’-তে ১৭২৮ নম্বর অনুসন্ধান হিসেবে তালিকাভুক্ত আছে। অন্যদিকে সিআইডি কর্মকর্তা মশিউর রহমান ফারদিনের পিতার করা মামলাটির অধিকতর তদন্ত কাজের দায়িত্বে আছেন।
চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের রহস্য অনুসন্ধানে নেমে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র‌্যাব) ও ডিবি প্রথমে এটি হত্যাকাণ্ড হিসেবে চিহ্নিত করে তদন্তের অগ্রগতিতে গণমাধ্যমকে একেক সময় একেক তথ্য পরিবেশন করলেও পরবর্তী সময়ে ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান থেকে সরে এসে উভয় সংস্থাই ফারদিন নূর হতাশাজনিত কারণে আত্মহত্যা করেছে বলে গণমাধ্যমকে জানায়।
তদন্ত সংস্থার বরাতে ফারদিন ছিলেন জঙ্গি, প্রেমিক, মাদকসেবী, মাদক কারবারি অতঃপর পুলিশের সোর্স সন্দেহে ডেমরা চনপাড়ায় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বজলুর রায়হান ও সন্ত্রাসী সিটি শাহীন গংকে চিহ্নিত করে গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়েছিল।

এই প্রতিবেদনে বাদীর নারাজির পরিপ্রেক্ষিতে মহামান্য আদালত চাঞ্চল্যকর এই মামলাটির অধিকতর তদন্ত ভার সিআইডি’র ওপর ন্যস্ত করে। এর দু’বছর পেরিয়ে গেলেও সিআইডি ‘আত্মহত্যার প্রতিবেদনের স্বপক্ষে’ কিংবা
ফারদিনকে কেন কারা কীভাবে হত্যা করেছে এর কোনো কিছুই সুরাহা করতে পারেনি।

ফারদিন নূর-এর পিতার ভাষ্যমতে, বুয়েটের আবরার ফাহাদ ও ফারদিন নূর পরশের হত্যার মোটিভ একই সূত্রে গাঁথা। তিনি জানান, লেজুরবৃত্তির ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়ার কারণেই ফারদিনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।

ফ্যাসিস্ট হাসিনার শাসনামলে শিক্ষাঙ্গনগুলোতে সন্ত্রাসী ও খুনি চরিত্রে আবির্ভূত হয়েছিল ছাত্রলীগ। আবরার হত্যাকাণ্ড তার উজ্জ্বল প্রমাণ। বুয়েট কাম্পাস অভ্যন্তরে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের সিসিটিভি ফুটেজ সাধারণ শিক্ষার্থীদের হাতে চলে যাওয়ায় এ নিয়ে তদন্ত প্রহসনের কোনো সুযোগ ছিল না।

শেয়ার বিজের প্রতিবেদককে সংক্ষুব্ধ পিতা জানান, ২০২৪-এ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ফ্যাসিস্ট হাসিনার সরকারের পতন হয়েছে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করেছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এবং সম্প্রতি নিষিদ্ধ হয়েছে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম কিন্তু লেজুরবৃত্তির ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে নেতৃত্ব দেয়া শহিদ ফারদিন নূর পরশ হত্যা রহস্য উন্মোচিত হয়নি। তদন্তের নামে প্রহসনের নাটক দেখা ছাড়া যেন কিছুই করার নেই বলে হতাশা প্রকাশ করলেন এই শোকাহত পিতা।