Print Date & Time : 10 September 2025 Wednesday 6:48 am

আড্রিয়াটিক উপকূলের চিত্র বদলে দিয়েছে ক্রোয়েশিয়ার নতুন সেতু

শেয়ার বিজ ডেস্ক: ক্রোয়েশিয়ার দীর্ঘ প্রতীক্ষিত পেলজেসাক সেতুর উদ্বোধন হয়েছে গত মঙ্গলবার। দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হওয়ায় আনন্দে উদ্বেল দেশটির মানুষ। বসনিয়ার উপকূল ধরে দক্ষিণ অ্যাড্রিয়াটিক অঞ্চলের সঙ্গে ক্রোয়েশিয়ার বাকি অংশের সঙ্গে যুক্ত করেছে সেতুটি। খবর: সিএনএন।

পেলজেসাক সেতুতে অর্থায়ন করে ক্রোয়েশিয়া সরকার ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। এটি আনুষ্ঠানিক খুলে দেয়া হয়েছে। ক্রোয়েশিয়ার মূল ভূখণ্ড কোমার্না ও পেলজেসাক উপদ্বীপের ব্রিজেস্তা গ্রামের সঙ্গে এটি সংযুক্ত। সেতুটি চালু হওয়ায় সহজে জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র দুব্রোভনিকে বেড়াতে যেতে পারবেন পর্যটকরা। ২ দশমিক ৪ কিলোমিটার দীর্ঘ (দেড় মাইল) সেতুটি মহা ধুমধামে মানুষের চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়। এরপর শত মানুষ হেঁটে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে সেতুটি পার হন। পরে মোটরসাইকেল আরোহীরা সেতুটির এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যাতায়াত শুরু করেন। দেশটির মানুষরা এদিন আনন্দে উদ্বেল হয়ে ওঠেন। যদিও এর আগে এই সেতু নির্মাণ নিয়ে বিস্তর সমালোচনা হয়। এর নির্মাণকাজ শুরু হলে বসনিয়ার কর্তৃপক্ষও সমালোচনা করে। তারা জানায়, সমুদ্রে তাদের নাগরিকদের যাতায়াতে সমস্যায় ফেলবে এই সেতু। তাছাড়া চীনের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন একটি প্রতিষ্ঠান এর নির্মাণকাজের দায়িত্ব পেলে সমালোচনা গতি পায়।

এর আগে এ যাতায়াত তাদের জন্য সুখকর ছিল না। বিশেষ করে ক্রোয়েশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের ডালমাটিয়া অঞ্চল থেকে মূল ভূখণ্ডে যাতায়াতের জন্য নাগরিক ও পর্যটকÑউভয়কে বসনিয়া-হার্জেগোভিনার মধ্য দিয়ে অতিক্রম করতে হতো। এজন্য সীমান্তে ইমিগ্রেশন হয়ে দুই অঞ্চলের মানুষকে যাতায়াত করতে হতো, যা বেশ সময়সাপেক্ষ ছিল। এ কারণে অ্যাড্রিয়াটিক অঞ্চলটি প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। অথচ এখন থেকে মাত্র ৩০ মিনিটে দুই অঞ্চলের মানুষ একে অন্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারবেন বলে ইইউ ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা হয়েছে।

পেলজেসাক সেতুর কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালের ৩০ জুলাই। আরও আগে ২০০৭ সালে এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। পরে কয়েকবার নকশায় পরিবর্তন আনা হয়। এর প্রায় ২০ বছর আগে ১৯৯৭ সালে পেলজেসাক সেতু নির্মাণের প্রস্তাব রাখা হয়। এর চূড়ান্ত নকশা করেন সেøাভেনিয়ার প্রকৌশলী মারজান পাইপেনবাহার। এটি তৈরিতে খরচ হয় ৫৪ কোটি ডলার। প্রায় ৩৬ কোটি ডলার দিয়ে সহায়তা করেছে ইইউ। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এই চার লেন সেতুর উচ্চতা ৫৫ মিটার। দ্য চায়না রোড অ্যান্ড ব্রিজ করপোরেশন সেতুটি নির্মাণের জন্য ২০১৮ আন্তর্জাতিক দরপত্রে জিতে যায়। সেতুটির চূড়ান্ত পর্যায়, ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ বাইপাসের কাজ শেষ হবে ২০২৩ সালের শেষের দিকে। তখন দুব্রোভনিকের কাছে স্টন শহরের সঙ্গে যুক্ত হবে সেতুটি। সেতুর নির্মাণকালে সংযোগকারী সড়কগুলো সংস্কার করা হয়।

ক্রোয়েশিয়ার প্রেসিডেন্ট অ্যান্দ্রেজ প্লেকোভিক স্থাপনাটিকে ‘বিলাসবহুল নয়, কিন্তু প্রয়োজনীয়’ বলে উল্লেখ করেন।

ইইউ সমন্বয় ও সংস্কার বিষয়ক কমিশনার এলিসা ফেরেইরা বলেন, দক্ষিণ ডালমাটিয়া ও ক্রোয়েশিয়ার সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখবে পেলজেসাক সেতু। দেশটির আঞ্চলিক সমন্বয় উন্নত করবে সেতুটি।

কমিশনার আরও বলেন, এই সেতুটি ক্রোয়েশিয়ার আর্থিক ও রাজনৈতিক উন্নয়নে প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সংহতি ও সমর্থনের প্রতীক। এটি ক্রোয়েশিয়ার নাগরিকদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করবে এবং দেশটির উন্নয়নে ইতিহাস হয়ে থাকবে।

ক্রোয়েশিয়ার অর্থনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে পেলজেসাক সেতু। এটি আঞ্চলিক ও জাতীয়ভাবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াবে। পর্যটন, কৃষি, শিল্প-প্রতিষ্ঠান, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারে অর্থনীতিতে অনন্য মাত্রা যোগ করবে সেতুটি।

ক্রোয়েশিয়া ও বসনিয়াসহ ছয়টি প্রজাতন্ত্র সাবেক যুগোশ্লোভিয়ার অংশ ছিল। ১৯৯১ সালে স্বাধীনতার পর ক্রোয়েশিয়ার অ্যাড্রিয়াটি সমুদ্র উপকূলরেখার দুইটি অংশ ৯ কিলোমিটার বসনিয়ার নিউম করিডোর অঞ্চল দ্বারা বিভক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৬ সালে বসনিয়া অ্যান্ড হারজেগভিনা ও ক্রোয়েশিয়ার মধ্যে নিউম চুক্তি হয়। এর আওতায় ক্রোয়েশিয়ার নাগরিকদের নিউম ব্যবহারের সুযোগ দেয়া হলেও তা সেতু নির্মাণের আগে স্বীকৃতি পায়নি।