আদানির ক্যাপাসিটি চার্জ পুনর্বিবেচনাযোগ্য

‘আদানির বিদ্যুৎ ক্রয়: ২৫ বছরে ক্যাপাসিটি চার্জ গুনতে হবে এক লাখ আট হাজার কোটি টাকা’ শীর্ষক যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে গতকালের শেয়ার বিজে, তা বিদ্যুৎ খাতের বর্তমান অবস্থা বিবেচনায় বেশ গুরুত্বের দাবি রাখে। জানা যায়, বাংলাদেশের বৈদেশিক দেনাবিষয়ক কর্মজোট (বিডব্লিউজিইডি) ও ভারতীয় গ্রোথওয়াচ যৌথভাবে ‘আদানি গড্ডা কোল পাওয়ার প্লান্ট: অ্যান অ্যাকিলিস হিল অব দ্য পাওয়ার সেক্টর অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রণয়ন করেছে। এতে বলা হয়েছে, ভারতের আদানি গ্রæপের গড্ডা কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ২৫ বছর বিদ্যুৎ কিনবে বাংলাদেশ। এ সময়ে শুধু ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে বাংলাদেশ সরকারকে গুনতে হবে এক লাখ আট হাজার ৩৬১ কোটি টাকা (১১.০১ বিলিয়ন ডলার), যা দিয়ে কমপক্ষে তিনটি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা সম্ভব।

তুলনামূলক হিসেবেও আদানি থেকে বিদ্যুৎ কেনা ব্যয়বহুল। যেমন প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের জন্য আদানিকে তিন টাকা ২৬ পয়সা ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হবে, যা বাংলাদেশের অন্য যে কোনো বিদ্যুৎকেন্দ্রের চেয়ে ১৬ শতাংশ বেশি। আদানির প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ কেনায় দাম পড়বে কমপক্ষে ৯ টাকা ৯ পয়সা, যা বর্তমানে আমদানিকৃত বিদ্যুতের তুলনায় ৫৬.৫ শতাংশ বেশি। আদানি থেকে বিদ্যুৎ কেনায় প্রতি বছর বিদ্যুৎ কেনার ব্যয় বাড়বে ৫.৫০ শতাংশ হারে। এতে ২০৪৭ সালে আদানির প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম বেড়ে দাঁড়াবে ৩৬ টাকা ৪১ পয়সা।

প্রকল্পটির সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুসারে, আগস্টে আদানির কেন্দ্রটি উৎপাদন শুরু করবে। যদিও সঞ্চালন লাইন না হওয়ায় এখনই কেন্দ্রটি থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হবে না। আগামী ডিসেম্বরে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নির্মাণ সম্পন্ন হলেও আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত চার মাসে এক ইউনিট বিদ্যুৎ না কিনেও এক হাজার ২১৯ কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হবে বাংলাদেশকে।

সব বিবেচনায় আদানি থেকে বিদ্যুৎ কেনা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে বলেই ধারণা। সবাই জানেন, দেশে প্রয়োজনের তুলনায় এখন বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের বর্তমান সক্ষমতা বিদ্যমান চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি। তা সত্তে¡ও বেশি বিদ্যুৎ কেনার কারণ আমাদের অজানা। বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘদিন ধরেই বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থে বারবার উচ্চমূল্যের ভাড়াভিত্তিক ও দ্রæত ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নবায়ন এবং কয়েক বছর ধরে বেসরকারি খাতে নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের অনুমোদন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। অবশ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনে বর্তমান সরকারের সাফল্য অস্বীকার করছেন না তারা। গত ২১ মার্চ দেশের শতভাগ মানুষ বিদ্যুতের আওতায় এসেছে। আমরা জানি, কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র বসিয়ে রেখে গুনতে হচ্ছে মোটা অঙ্কের ক্যাপাসিটি চার্জ। ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার (আইপিপি) নামীয় এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের বোঝা টানতে হবে ১৫ বছর। বিদ্যুৎ উৎপাদনের সঙ্গে মানানসই বিদ্যুৎ সঞ্চালনের সক্ষমতা না থাকায় মাশুল দিচ্ছে সাধারণ মানুষ।

ভারত থেকে কিনছে বলে নয়। দেশটি আমাদের পরীক্ষিত বন্ধু। আমরা  অন্যভাবে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক জোরদার করার চেষ্টা করতে পারি। কিন্তু প্রকৃতই রাষ্ট্রের এত খরচ করে বিদ্যুৎ কেনা কোনো বিবেচনায় সংগত নয়। তাই আদানি গ্রুপ থেকে বিদ্যুৎ কেনার বিষয়টি পুনর্বিবেনাযোগ্য বলে আমরা মনে করি।