Print Date & Time : 6 July 2025 Sunday 4:22 am

বিল বকেয়া: আদানির বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধের হুমকি

শেয়ার বিজ ডেস্ক : ভারতের ঝাড়খণ্ডে স্থাপিত আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাওয়া ১,৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাংলাদেশে সরবরাহ বন্ধ করার হুমকি দিয়েছে আদানি কর্তৃপক্ষ। এর পেছনে কারণ হলো প্রায় ১০ হাজার ৮৬ কোটি টাকার বকেয়া বিলের বিতর্ক। সূত্র: জাস্টএনার্জি২৪.কম

স্থানীয় পাওয়ার প্ল্যান্টগুলো, যেমন ১,২২৪ মেগাওয়াট এস আলম-সমর্থিত বাঁশখালী প্ল্যান্ট এবং ১,৩২০ মেগাওয়াট বাংলাদেশ-ভারত যৌথ উদ্যোগের রামপাল প্ল্যান্ট, বিদ্যুৎ উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দিয়েছে, যার ফলে ১,০০০ মেগাওয়াট-এরও বেশি লোডশেডিং হচ্ছে।

আদানি পাওয়ার (ঝাড়খন্ড) লিমিটেডের প্রতিনিধি ও যৌথ সমন্বয় কমিটির সভাপতি এম.আর. কৃষ্ণ রাও এক চিঠিতে উল্লেখ করেছেন যে, বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (বিপিডিবি) বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক থেকে ১৭০.০৩ মিলিয়ন ডলারের জন্য প্রয়োজনীয় এলসি প্রদান করেনি এবং ৮৪৬ মিলিয়ন ডলারের (১০,০৮৬ কোটি টাকা) বকেয়া পরিমাণও মেটায়নি।

তিনি উল্লেখ করেছেন, সময়মতো এলসি না দেওয়া এবং বকেয়া পরিমাণ পরিশোধ না করার ফলে পাওয়ার পারচেজ অ্যাগ্রিমেন্টের আওতায় “মেটেরিয়াল ডিফল্ট” ঘটেছে, যা আদানি পাওয়ারের সরবরাহ বজায় রাখতে বাধা দিচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, “বহু বকেয়া পরিশোধ ও এলসির অভাবে আমরা কয়লা সরবরাহকারী এবং অপারেশন ও রক্ষণাবেক্ষণ কন্ট্রাক্টরদের জন্য কাজের মূলধন নিরাপদে রাখতে পারছি না, আমাদের ঋণদাতারাও সহায়তা প্রত্যাহার করছে।”

আদানি তাদের চিঠিতে বিপিডিবিকে ৩০ অক্টোবর ২০২৪-এর মধ্যে এই ডিফল্টগুলো সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে, অন্যথায় ৩১ অক্টোবর ২০২৪ থেকে সরবরাহ বন্ধ করার ব্যবস্থা নেবে। চলতি আলোচনার মধ্যেও আদানি প্রতিনিধিরা বকেয়া বিলের সমস্যা এবং ঝাড়খন্ড প্ল্যান্টের জন্য অতিরিক্ত কয়লা শুল্ক সম্পর্কিত সমঝোতার বিরোধ সমাধানে অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন। বর্তমানে আদানি অফ-পিক সময়ে ১,১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে।

এদিকে, এস আলম গ্রুপের ১,২২৪ মেগাওয়াট বাশখালী পাওয়ার প্ল্যান্ট ২,০০০ কোটি টাকার বকেয়া পরিশোধের সমাধান খুঁজছে। এসএস পাওয়ার ১-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক তান ঝেলিং একটি চিঠিতে বিপিডিবিকে জানিয়েছেন যে, বকেয়া পরিশোধ দ্রুত করা হলে সরবরাহকারীদের জন্য এলসি জারি করা সম্ভব হবে, যা বিদ্যুৎকেন্দ্রটির চালু রাখার জন্য প্রয়োজনীয়।

বাংলাদেশ-চীন পাওয়ার কোম্পানির ১,৩২০ মেগাওয়াট প্ল্যান্টও ৩১ অক্টোবর ২০২৪ থেকে ইউনিট ২’র দুই মাসের সংস্কারের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ.এম. খোরশেদুল আলম জানিয়েছেন যে, তারা ৫,৮০০ কোটি টাকার বকেয়া পরিমাণের কারণে কার্যকরী চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছেন।

এছাড়া, বাংলাদেশ-ভারত যৌথ উদ্যোগের ফ্রেন্ডশিপ প্ল্যান্টও কয়লা সংকটের কারণে ইউনিট ২ বন্ধ করে দিয়েছে, যদিও ইউনিট ১ বর্তমানে ৫৩৯ মেগাওয়াট উৎপাদন করছে।

যদিও বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা ২৭,০০০ মেগাওয়াট-এর বেশি, শীর্ষ চাহিদা ১৭,৮০০ মেগাওয়াট।

বিপিডিবির তথ্য অনুযায়ী, বিদ্যুৎ টারিফ এবং খরচের মধ্যে ব্যবধানের কারণে প্রতিমাসে ৩,৫২১ কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। বিপিডিবি চেয়ারম্যান রেজাউল করিম জানিয়েছেন, জুন মাসের হিসাবে তাদের বকেয়া বিদ্যুৎ ক্রয় দায় ৩২,০০০ কোটি টাকায় পৌঁছেছে এবং এই পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।