আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরে সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত ছিল বিদ্যুৎ খাত। এ সময়ে বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী ভাড়াভিত্তিক ও দ্রুত ভাড়াভিত্তিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ফুলেফেঁপে উঠেছে। আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীরাই এ সময় সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎকেন্দ্রের লাইসেন্স পেয়েছেন। এর মাধ্যমে লুটপাট ও বিদেশে অর্থ পাচার করেছেন ব্যবসায়ীরা। গণমাধ্যমে উঠে এসেছে বিদ্যুৎ খাতের নানা অনিয়মে প্রতিবছর হাজার কোটি টাকা গচ্ছা দেয়ার খবর। দুর্ভাগ্যজনক হলেও এসব বিষয় নিয়ে সরকার গঠিত কমিটি কর্তৃক প্রকাশিত শ্বেতপত্রে কোনো তথ্য নেই। বিদ্যুৎ খাতের বিভিন্ন দুর্নীতি-অনিয়মের সঠিক কোনো বর্ণনাও নেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দেয়া শ্বেতপত্রে বিদ্যুৎ খাতের দুর্নীতির খণ্ডিত চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এতে নেই বিনা দরপত্রে বিদ্যুৎকেন্দ্রের লাইসেন্স দেয়া এবং এর সুবিধাভোগীদের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য। ক্যাপাসিটি চার্জের মাধ্যমে লুটপাটের সঠিক চিত্র উঠে আসেনি প্রতিবেদনে। এমনকি ভারতের আদানি পাওয়ারের সঙ্গে সম্পাদিত বিদ্যুৎ খাতের সবচেয়ে বিতর্কিত চুক্তি নিয়েও কোনো তথ্য ছিল না। কম ব্যয়ের কেন্দ্র বসিয়ে রেখে উচ্চ ব্যয়ের কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কেনার বিষয়েও তথ্য ছিল না।
গতকাল শেয়ার বিজে প্রকাশিত হয়েছে ‘ছয় মাসেও শেষ হয়নি চুক্তি পর্যালোচনা: সরকারের উদাসীনতায় উল্টো চোখ রাঙাচ্ছে আদানি’ শীর্ষক প্রতিবেদন। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চুক্তি পর্যালোচনার তিন মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও বিদেশি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ হয়নি, উপেক্ষিত হয়েছে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা। কয়লার দাম কমাতে রাজি নয় আদানি, বরং বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) চাওয়া কর-সুবিধা প্রত্যাখ্যান করেছে তারা। এখন উচ্চ দামেই রোজায় পুরো সক্ষমতায় আদানির বিদ্যুৎ চায় বাংলাদেশ।
আওয়ামী লীগের শাসনামলে লাইসেন্স দেয়া বড় সাতটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তি পর্যালোচনায় ৫ সেপ্টেম্বর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত জাতীয় পর্যালোচনা কমিটি করা হয়। ওই কমিটি সাড়ে পাঁচ মাসেও প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি।
আদানির সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি নিয়ে সরকার কেন এত ছাড় দিচ্ছে, এটি আমাদের দুর্বলতা কিংবা উদাসীনতা কি না, আমরা জানি না। বাস্তবতা হলো এই আদানির সঙ্গে বিদ্যুৎ সরবরাহ চুক্তি ছিল আফ্রিকার দেশ কেনিয়া এবং সার্কভুক্ত দেশ শ্রীলঙ্কার। দুটি দেশই চুক্তি বাতিল করেছে। কেনিয়া আগে বাতিল করেছে, আর শ্রীলঙ্কা বাতিল করেছে সম্প্রতি। সেখানে আমাদের যেন আদানি ছাড়া চলেই না! হয়তো অবস্থা সে রকমই। কিন্তু আমরা কেন আদানি পাওয়ার (ঝাড়খণ্ড) লিমিটেডের সঙ্গে সরকারের বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তির তদন্ত করতে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন জ্বালানি ও আইন বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠন করছি না উচ্চ আদালতের নির্দেশনা মেনে। সাবেক সরকার পতনের পর জন-আকাঙ্ক্ষা ছিল দেশের স্বার্থের পরিপন্থি সব চুক্তি পর্যালোচনাপূর্বক যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া। আমাদের বিদ্যুৎ উপদেষ্টাও বলেছিলেন, ‘চুক্তিতে অসংগতি পাওয়া গেলে তা নিয়ে পুনরালোচনা করা হবে। দুর্নীতি বা ঘুষের মতো গুরুতর অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেলে চুক্তি বাতিল করা হবে।’ কিন্তু সে কাজ শুরুর লক্ষণও নেই। সরকারের উচিত হবে দেশের স্বার্থে অতি দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া।