নিজস্ব প্রতিবেদক: যুবলীগের বহিষ্কৃত দফতর সম্পাদক কাজী আনিছুর রহমানের ১২ কোটি ৮০ লাখ টাকা ও তার স্ত্রী সুমি রহমানের এক কোটি ৩১ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদের প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল দুপুরে দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১-এ সংস্থাটির উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদী হয়ে এ বিষয়ে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছেন। সংস্থাটির জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আসামি কাজী আনিছুর রহমানের নিজ নামে ও বেনামে অর্জিত পাঁচ কোটি ৭৩ লাখ ৫৬ হাজার ৬০০ টাকার স্থাবর সম্পদ এবং এক কোটি ৭২ লাখ ৩৬ হাজার ৮২১ টাকার অস্থাবর সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ঢাকার এলিফ্যান্ট রোডের মাল্টিপ্ল্যান সেন্টার লেভেলে একটি ফ্ল্যাট, গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর রসুলপুরে ২৪ দশমিক ৫০ শতাংশ জমি, ঢাকার আরকে মিশন রোডে আমিন ভবনের পঞ্চম তলায় ১৩০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট, ঢাকার স্বামীবাগ রোডে ৮২০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট, ধানমন্ডি রোড নং-৭ এ একটি ফ্ল্যাট, ঢাকার শুক্রাবাদের শেরেবাংলা নগরে ৭৫০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট, ধানমন্ডি ১৫নং রোডে একটি ফ্ল্যাটসহ সর্বমোট পাঁচ কোটি ৭৩ লাখ ৫৬ হাজার ৬০০ টাকা স্থাবর সম্পদের তথ্য পাওয়া যায়। অনুরূপভাবে আরফিন এন্টারপ্রাইজ কোম্পানির শেয়ারমূল্য ৮৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা, স্টেশনের শেয়ারমূল্য ৩৬ লাখ টাকা, প্রাইজবন্ডে তিন লাখ টাকা, গাড়ির মূল্য ১১ লাখ ২৫ হাজার টাকাসহ সর্বমোট এক কোটি ৭২ লাখ ৩৬ হাজার ৮২১ টাকার অস্থাবর সম্পদের তথ্য পাওয়া যায়।
বিএফআইইউ থেকে প্রাপ্ত রেকর্ডপত্র অনুসারে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ব্যাংকে রক্ষিত যা পাওয়া গেছে তার মধ্যে রয়েছেÑব্যাংক এশিয়া, প্রাইম ব্যাংক, মার্কেনটাইল ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক ইউসিবিএল ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক ও ডাচ্-বাংলা ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংকের কারেন্ট অ্যাকাউন্ট, সেভিং অ্যাকাউন্ট, এফডিআর এইচটিসি-সহ বিভিন্ন ফর্মে পাঁচ কোটি ৩৪ লাখ ৬৭ হাজার ৪৯৯ টাকার অস্থাবর সম্পদের তথ্য, যা তার আয়কর নথিতে উল্লেখ নেই। সব মিলিয়ে ১২ কোটি ৮০ লাখ ৬০ হাজার ৯২০ টাকার সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে, যার সপক্ষে কোনো সুনির্দিষ্ট বৈধ উৎস নেই।
অন্যদিকে আসামি সুমি রহমানের নামে এক কোটি ২৫ লাখ ৫০০ টাকার স্থাবর ও ৫৬ লাখ ছয় হাজার ৫০০ টাকার অস্থাবর টাকার অবৈধ সম্পদের প্রমাণ পাওয়ায় দুদক আইন ২০০৪-এর ২৭(১) ধারায় মামলা করা হয়। মামলার ঘটনার সময় ২০০৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের ১ অক্টোবর পর্যন্ত বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।
এর আগে ২৭ অক্টোবর অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়া ও অনলাইন ক্যাসিনো ব্যবসায়ী সেলিমের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। মামলায় ক্যাসিনো ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত লোকমান হোসেন ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে চার কোটি ৩৪ লাখ টাকার ও সেলিম প্রধানের বিরুদ্ধে ১২ কোটি ২৭ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়। ২৩ অক্টোবর অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে গেণ্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এনামুল হক এনু ও তার দুই সহযোগী এবং তার ভাই গেণ্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রুপন ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে দুই মামলা হয়।
এছাড়া ২১ অক্টোবর জিকে বিল্ডার্সের স্বত্বাধিকারী কথিত যুবলীগ নেতা এসএম গোলাম কিবরিয়া শামীম ও তার মা এবং বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে ৩০২ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের অভিযোগে মামলা করে সংস্থাটি। গত ১৮ সেপ্টেম্বর ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু করেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এর পরপরই গত ৩০ সেপ্টেম্বর অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজ শুরু করে সংস্থাটির পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের টিম। টিমের অপর সদস্যরা হলেন উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গির আলম, সালাউদ্দিন আহমেদ, সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরি ও মোহাম্মদ নেয়ামুল আহসান গাজী।