শেয়ার বিজ ডেস্ক: ফিলিস্তিনের গাজায় প্রায় দেড় বছর ধরে চলমান ইসরাইলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ অব্যাহত রয়েছে। দখলদার ইসরাইলি বাহিনীর বর্বরোচিত গণহত্যার প্রতিবাদে গত শনিবার ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজন করা হয় ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচি। এতে বিভিন্ন দল-ধর্ম-বর্ণের লাখো মানুষ অংশ নেন। এই খবর দেশের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও উঠে এসেছে। এসব প্রতিবেদনে বিক্ষোভ কর্মসূচির বিভিন্ন দিক গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরা হয়েছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ‘টাইসম অব ইসরায়েল’ অ্যাসোসিয়েট প্রেসের (এপি) বরাতে ঢাকায় ইসরায়েল বিরোধী প্রতিবাদের খবর প্রকাশ করে। জায়নবাদীদের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত এই সংবাদমাধ্যমে বলা হয়, ‘গাজায় ইসরায়েলি হামলার নিন্দা জানিয়ে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় হাজার হাজার মানুষ প্রতিবাদে অংশ নিয়েছেন। আনুমানিক এক লাখ বিক্ষোভকারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা-সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমবেত হন।’
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ‘বিক্ষোভকারীরা শত শত ফিলিস্তিনি পতাকা বহন করেন এবং ‘ফ্রি, ফ্রি প্যালেস্টাইন’সহ বিভিন্ন সেøাগান দেন। ইসরায়েলকে সমর্থনের অভিযোগে অনেকেই ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর পাশাপাশি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ছবি পিটিয়ে প্রতিবাদ জানান। বিক্ষোভ মিছিলে প্রতীকী কফিন ও পুতুল বহন করা হয়, যা বেসামরিক হতাহতের প্রতীক হিসেবে প্রদর্শিত হয়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি এবং বিভিন্ন ইসলামী দল ও সংগঠন এই সমাবেশের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে। বাংলাদেশ ১৭ কোটি মানুষের একটি মুসলিমপ্রধান দেশ। ইসরায়েলের সঙ্গে তাদের কোনও কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। বাংলাদেশ সরকারিভাবে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে সমর্থন করে বলেও এতে উল্লেখ করা হয়েছে।’
এ ছাড়া মার্কিন বার্তা সংস্থা এপি, প্রভাবশালী মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট, ব্রিটেনের দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট, মধ্যপ্রাচ্যের আরব নিউজ ও আলজাজিরাসহ বিশ্বের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এই সমাবেশের খবর প্রকাশিত হয়েছে। বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, ‘প্রায় এক লাখ মানুষ ঢাকার রাজপথে ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।’ প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘বিক্ষোভকারীরা ‘স্বাধীন ফিলিস্তিন’ সেøাগান দিতে দিতে ফিলিস্তিনি পতাকা উড়িয়েছেন এবং হতাহত ফিলিস্তিনিদের প্রতীকী কফিন বহন করেছেন।’
এতে আরও বলা হয়, ‘বিক্ষোভকারীদের অনেকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর পাশাপাশি ইসরায়েলকে সহায়তার অভিযোগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ছবিতে আঘাত করেন।’ র্যালিতে তারা প্রতীকী কফিন এবং হতাহত বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের প্রতীকী লাশ নিয়ে আসেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল এবং ইসলামপন্থি দলগুলো এই সমাবেশের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে বলেও উল্লেখ করা হয়।
আরব নিউজের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ‘ঢাকার সমাবেশে ১০ লাখেরও বেশি মানুষ অংশ নিয়েছেন, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে ফিলিস্তিনের পক্ষে সবচেয়ে বড় সমাবেশ।’ প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট বাংলাদেশ আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে রাজনীতিবিদ, সেলিব্রিটি, শিল্পী, কবি এবং জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া প্রভাবশালীরা উপস্থিত ছিলেন, যারা ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের ওপর ইসরায়েলের গণহত্যার জন্য দায়ী অন্যদের বিচারের আওতায় আনার জন্য বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানান।’
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট লিখেছে, ‘সমাবেশে বিএনপি ও বিভিন্ন ইসলামি দলের সমর্থন ছিল উল্লেখযোগ্য।’ ওয়াশিংটন পোস্ট লিখেছে, ‘বাংলাদেশের মানুষ তাদের সরকারের ফিলিস্তিন-সমর্থনকারী নীতির পাশাপাশি বিশ্বনেতাদের ভূমিকারও তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন।’ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বিক্ষোভকারীরা ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রতীকী ছবিতে জুতা মেরে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
অপরদিকে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা বার্তা সংস্থা রয়টার্সের কয়েকটি ছবি প্রকাশ করেছে। এর মাধ্যমে তারা দেখিয়েছে, বাংলাদেশের মানুষ ফিলিস্তিনিদের পক্ষে আছেন।
