Print Date & Time : 27 July 2025 Sunday 9:48 am

আন্তর্জাতিক গন্তব্যে জাহাজ ভাড়া কমেছে ৫০ শতাংশ

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধসহ নানা কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে বিভিন্ন পণ্যের চাহিদা কমছে। একই সঙ্গে দেশে দেশে ভোক্তা মূল্যস্ফীতির কারণে ভোগব্যয় কমছে। ফলে ভোক্তার ভোগ ও চাহিদা কমে যাওয়ায় আমদানিকারক দেশ থেকে পণ্য বুকিং কমতে শুরু করেছে। এ অবস্থায় সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহনও কমছে। তাই বড় শিপিং কোম্পানিগুলো অনেকটা প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে ভাড়া কমিয়ে বুকিং নিচ্ছে, যার ফলে কমে এসেছে পণ্য পরিবহনের খরচ। অর্থাৎ করোনার আগের মতো দামে সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহন ব্যয়ে ফিরছে।

শিপিং খাত-সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা যায়, বর্তমানে ১৫০টিরও বেশি দেশ থেকে পণ্য সমুদ্রপথে বাংলাদেশে আমদানি করা হয়। এর মধ্যে বাংলাদেশের জন্য বড় রপ্তানিকারক দেশ চীন। চীন থেকে সমুদ্রপথে জাহাজে পণ্য আসে মূলত দক্ষিণ চীন সাগর, মালাক্কা প্রণালী ও আন্দামান সাগর হয়ে বঙ্গোপসাগর দিয়ে বাংলাদেশে। বড় বড় জাহাজে করে শিল্পের কাঁচামাল, উৎপাদিত ফিনিশড পণ্য, বড় বড় প্রকল্পের যন্ত্রপাতি, মূলধনি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি সবচেয়ে বেশি আমদানি হয়। আর দেশের প্রধানতম শিপিং রুট চীন থেকে কনটেইনার পরিবহনের খরচ কমেছে সবচেয়ে বেশি। ২০২০ সালে করোনার সংক্রমণের পর থেকে গত বছর চীন থেকে কনটেইনারে পণ্য পরিবহনে আট-দশ হাজার ডলার পরিশোধ করতে হতো। এখন সে খরচ কমে আড়াই থেকে তিন হাজার ডলারে নেমে এসেছে। অর্থাৎ দেশের আমদানিকারক ও শিল্পোদ্যোক্তাদের পণ্য আমদানি পরিবহন ব্যয় কমেছে ৭০ শতাংশের মতো।

একই অবস্থা সমুদ্রপথে রপ্তানির প্রধান দুই রুট চট্টগ্রাম থেকে ইউরোপ এবং চট্টগ্রাম থেকে যুক্তরাষ্ট্র। এ দুই রুটে জাহাজ ভাড়া কমেছে ৫০ শতাংশের মতো। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ইউরোপের দেশগুলোয় গত বছর ৪০ ফুটের একটি কনটেইনারে পণ্য পরিবহনের ভাড়া ছিল ১৪ থেকে ১৬ হাজার ডলার। বর্তমানে এ ভাড়া ছয় থেকে আট হাজারে নেমেছে। অন্যদিকে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সমুদ্রপথে ১৫ হাজার ডলার থেকে কমে জাহাজ ভাড়া সাত-আট হাজার ডলারে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ পণ্য পরিবহনের ভাড়া অর্ধেক কিংবা তারও নিচে নেমে এসেছে। করোনা সংক্রমণের আগের সময়ের মতো মূল্য হারের শিপিং লাইনগুলো বুকিং নিচ্ছে।

আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্যে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বৈশ্বিক অর্থনীতিতে নাজুক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধসহ নানা কারণে বিশ্বের নানা দেশে তৈরি হয়েছে ডলার সংকট। এ সংকটের কারণে বিশ্বব্যাপী পণ্যের চাহিদা কমছে। আর চাহিদা কমায় ভোজ্যতেল, ইস্পাত, ক্লিংকার, পুরোনো জাহাজ, গমসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম কমছে। অন্যদিকে প্রত্যাশিত জাহাজ ভাড়া না পেয়ে কমছে জাহাজ ও কনটেইনার ভাড়া। সব মিলিয়ে অর্থনীতিতে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে কমে যাওয়ায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। কিন্তু ডলার সংকটের কারণে এর সুফল পাওয়া যাচ্ছে না।

জাহাজ ও কনটেইনার ভাড়া কমে যাওয়ার বিষয়ে রিল্যান্সেস নেভিগেশন লিমিটেডের চেয়ার‌্যমান মোহাম্মদ রাশেদ শেয়ার বিজকে বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধসহ নানা কারণে বৈশ্বিক সংকট তৈরি হয়েছে। এতে জীবনযাত্রার ব্যয়ে বেড়েছে। অন্যদিকে বিলাসসহ শিল্পপণ্যের চাহিদা কমেছে। এ কারণে বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থায় পণ্য পরিবহন চাপ কমতে শুরু করেছে। গত তিন মাসে গড়ে ৫০ শতাংশ জাহাজ ভাড়া কমেছে। আর কমার ধারা অব্যাহত রয়েছে। বর্তমানে জাহাজ ভাড়া কমতে থাকার মূল কারণ বৈশ্বিক ভোগ কমে আসা। এতে আন্তর্জাতিক ক্রেতা দেশগুলো থেকে পণ্যের বুকিং কমে গিয়েছে। তবে অসম প্রতিযোগিতার কারণে ছোট শিপিং লাইনগুলো দেউলিয়া হবে। কারণ জাহাজ পরিচালনায় লোকসান শুরু হচ্ছে।

উল্লেখ্য, গত সেপ্টেম্বর মাসে চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি পণ্য ভর্তি এক লাখ এক হাজার ৪৯৩ টিইইউএস কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে, যা আগের মাসের এক মাস আগে গত আগস্টে বন্দরে এক লাখ ১৪ হাজার ৯২০ টিইইউএস কনটেইনারভর্তি পণ্য আমদানি করা হয়েছিল। এক মাসের ব্যবধানে আমদানি পণ্যভর্তি কনটেইনারের সংখ্যা কমেছে ১৩ হাজার ৪২৭ টিইইউএস বা ১১ দশমিক ৬৮ শতাংশ। আর ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছিল এক লাখ ২০ হাজার ৪৭০ টিইইউএস। এক বছরের ব্যবধানে ১৮ হাজার ৯৭৭ টিইইউএস বা প্রায় ১৬ শতাংশ কনটেইনার হ্যান্ডলিং কমে গেছে। আমদানির মতো নেতিবাচক প্রভাব রপ্তানি খাতেও পড়েছে। সদ্য সমাপ্ত সেপ্টেম্বর মাসে চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে ৬৩ হাজার ৮০৩ টিইইউএস কনটেইনার পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এক মাস আগে আগস্টে রপ্তানি হয়েছিল ৭৫ হাজার ৬৯৭ টিইইউএস কনটেইনার পণ্য। এক মাসের ব্যবধানে রপ্তানি পণ্যভর্তি কনটেইনারের সংখ্যা কমেছে ১১ হাজার ৮৯৪ টিইইউএস বা ১৬ শতাংশ। আর ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে রপ্তানি হয়েছিল ৬৮ হাজার ৮৯১ টিইইউএস কন্টেইনার পণ্য।