Print Date & Time : 7 August 2025 Thursday 1:19 pm

আন্তর্জাতিক জলবায়ু অর্থায়ন বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ

রেজাউল করিম খোকন: জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় একটি মাত্র পৃথিবীকে বাঁচাতে প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হয় জলবায়ু সম্মেলন বা কনফারেন্স অব পার্টিজ (কপ)। আফ্রিকার দেশ মিসরের পর্যটন নগরী শারম-আল-শেখে জলবায়ু সম্মেলনের ২৭তম আসর গত ৬ থেকে ১৮ নভেম্বর সময়পর্বে অনুষ্ঠিত হয়। এটি (কপ-২৭) এমন একসময় অনুষ্ঠিত হয়েছে যখন জ্বালানি ও খাদ্য সংকটের সাথে মুদ্রাস্ফীতি ও অর্থনৈতিক মন্দায় পৃথিবীব্যাপী অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। অর্থনৈতিক ও ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপট অনেকটা জটিল হলেও জলবায়ু অর্থায়ন সম্মেলনের আলোচনার কেন্দ্রে ছিল। বাংলাদেশের উপকূলে ঘূর্ণিঝড় ও লবণাক্ততা, উত্তরাঞ্চল খরা, উত্তর-পূর্বাঞ্চল পাহাড়ি ঢল, মধ্যাঞ্চল বন্যা এবং পূর্বাঞ্চল পাহাড়ধসের এক নিদারুণ যন্ত্রণার মুখোমুখি হচ্ছে প্রতিদিন। কেবল গ্রামীণ উৎপাদন ও খাদ্যব্যবস্থা নয়; ভেঙে পড়ছে সামাজিক-সাংস্কৃতিক বহুমুখী সম্পর্ক। আবহাওয়ার উল্টাপাল্টা আচরণ কৃষিসহ প্রকৃতিনির্ভর প্রতিটি পেশায় দুঃসহ সংকট তৈরি করছে। মানুষ গ্রামে থাকতে পারছে না জš§। মাটি ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে। ছোট-বড় শহরে প্রতিদিন লম্বা হচ্ছে জলবায়ু-উদ্বাস্তু মানুষের মিছিল। পুরুষের গন্তব্য হচ্ছে ইটভাটা, রিকশা চালানো বা দিনমজুরিতে। নারীর গন্তব্য হচ্ছে গৃহকর্মী বা করপোরেট গার্মেন্টস কারখানায়। আর শিশুদের গন্তব্য হচ্ছে প্লাস্টিক, ব্যাটারি ভাঙা, বর্জ্য কুড়ানো কিংবা রাসায়নিক কারখানার মতো ঝুঁকিপূর্ণ কাজে। বিস্ময়করভাবে জলবায়ু উদ্বাস্তু এই মানুষদের কেউ জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার করেনি। বছরে এদের খুব কম পরিবারেই খাবারের পাতে মাংস জোটে। এক বিগত বিলাসিতা নেই জীবনে। গ্রিন হাউস গ্যাস আর কার্বন নির্গমনের জন্য এরা দায়ী নয়। কিন্তু এই নির্গমনই বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়ছে, জলবায়ুর আচরণ বিগড়ে দিচ্ছে। বাঁচার জন্য লড়ছে মানুষ, আবার নিরুদ্দেশও হচ্ছে বহুজন। ‘এনভায়রনমেন্টাল জাস্টিস ফোরাম’-এ প্রতিবেদনে জানা যায়, বাংলাদেশে প্রতিদিন ১০০০ থেকে ২০০০ মানুষ স্থানান্তর করে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের প্রায় ৬০ লাখ মানুষ স্থানচ্যুত হয়েছে। জলবায়ু নিয়ে ধনী দেশ ও করপোরেট এজেন্সিগুলো আজ যে নির্দয় জুয়া খেলা মাতিয়ে রেখেছে তা বন্ধ হওয়া দরকার। একই পৃথিবীতে কেউ ঘণ্টায় ঘণ্টায় বার্গার গিলে কার্বন নিঃসরণ বাড়াচ্ছে, আর এ কারণে লবণপানিতে তলিয়ে যাচ্ছে অন্য কারও সংসার। একই দুনিয়ায় বিক্রি হচ্ছে ‘অ্যাকোয়া ডি ক্রিস্টালো টিবেটোর’ মতো ৪০ লাখ টাকার পানির বোতল, আবার শহরের বস্তিতে এক কলস পানির জন্য লাইন দিতে হচ্ছে ৩৬৫ দিন। মানুষের দশাসই কার্বন দূষণে পৃথিবী আজ মুমূর্ষু। এখনও উত্তর-দক্ষিণ বিবাদ, কাঠামোগত বৈষম্য আর নিদারুণ দ্বন্দ্ব থামছে না। চীন, মার্কিন না রাশিয়া কী ভারত কে হবে অধিপতি; এই দরবার প্রতি মুহূর্তে বিদীর্ণ করছে পৃথিবীর শরীর। রক্তাক্ত করছে ঐতিহাসিক প্রাকৃতিক বিবর্তন। বাংলাদেশ আশা করেছিল, মিসর জলবায়ু সম্মেলন পৃথিবীব্যাপী ঘুমন্ত ও জেগে থাকা জলবায়ু-জিজ্ঞসাগুলোকে জানা-বোঝার মতো মর্যাদার ক্ষেত্র উš§ুক্ত করবে। জলবায়ুর চলতি ২৭তম আসর দুনিয়াকে বেঁচে থাকার এক নতুন বার্তা দেবেÑএই আওয়াজ নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল জলবায়ু-দুর্গত বাংলাদেশের গ্রাম-শহরের নিন্মবগের্র মানুষ। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধানরা যেসব অঙ্গীকার করেন, তার বাস্তবায়ন আমরা দেখি না। এটি এই আয়োজনের অন্যতম বড় সমালোচনা। যত দিন পর্যন্ত না বাস্তবায়ন হবে, তত দিন সমালোচনা থাকবেই। বিশ্বনেতারা যেসব প্রতিশ্রুতি সম্মেলনে দেন, সেসব বাস্তবায়ন না করার জন্য পরে তাদের কারও কাছে জবাবদিহি করতে হয় না। ফলে জলবায়ু সম্মেলন অনেকটা প্রহসনে পরিণত হয়েছে।

২০২১ সালের জুন মাসে, পরিবেশগত প্রভাব বিবেচনায়, বাংলাদেশ নতুন ১০টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা থেকে সরে আসার ঘোষণা দেয়। এর আরেকটি কারণ ছিল, কয়লাভিত্তিক প্রকল্পে অর্থায়নের অনিশ্চয়তা। পরবর্তীতে, আগস্ট মাসে, জাতিসংঘের জলবায়ু বিষয়ক উইং বাংলাদেশের দাখিল করা পরিমার্জিত ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ড কন্ট্রিবিউশনে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাসে উচ্চাকাক্সক্ষার প্রতিফলন দেখা যায়। লক্ষ্যমাত্রা হলো, নিজস্ব সক্ষমতায় ২০৩০ সাল নাগাদ, জ্বালানি, শিল্প, কৃষি, বন ও বর্জ্য খাতে, সর্বসাকুল্যে ৬.৭৩ শতাংশ গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমানো। তবে আর্থিক, প্রযুক্তি ও সক্ষমতা বৃদ্ধিতে উন্নত বিশ্বের সহায়তা পেলে, বাংলাদেশ আরও ১৫.১২ শতাংশ গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমাতে সক্ষম হবে। এদিকে নভেম্বর ২০২১-এ বাংলাদেশ সরকার ঘোষণা দেয় ২০৪১ সালের মাঝে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৪০ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। বলে রাখা ভালো, নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ১০ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদনের ২০২০ সালের লক্ষ্যমাত্রা এখনও পূরণ হয়নি। যে কারণে, নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্প বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত ও নতুন  লক্ষ্যে পৌঁছতে, সরকার উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোর থেকে প্রযুক্তি ও আর্থিক সহায়তা আশা করছে। ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে চলমান যুদ্ধের ফলে অস্থিতিশীল জীবাশ্ম জ্বালানির বাজারের প্রভাব অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও পড়েছে। ব্যয়বহুল তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস এবং তেলের কারণে, সরকার জ্বালানি আমদানি কমাতে বাধ্য হয়েছে। ফলে অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্র বসিয়ে রাখতে হচ্ছে এবং বিদ্যুতের সংকট জনজীবনে প্রভাব ফেলার পাশাপাশি শিল্প খাতকেও ক্ষতিগ্রস্ত করছে। মাত্রাতিরিক্ত আমদানিনির্ভরতায় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে, যা পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী ৩০ হাজার ২৫১ কোটি টাকা। পরিবেশবান্ধব জ্বালানি বাস্তবায়নে বাংলাদেশের নিজস্ব কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। আর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ফলে বিশেষত আমদানি ব্যয় মেটাতে গিয়ে তৈরি হওয়া আর্থিক চাপ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। কাজেই নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রসারে আন্তর্জাতিক সহায়তা যেমন জলবায়ু অর্থায়নের গুরুত্ব আরও সুস্পষ্ট হচ্ছে। গড়পড়তা হিসাব করলেও ২০৪১ সাল নাগাদ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৪০ শতাংশ বিদ্যুৎ পেতে, এখন থেকেই প্রতি বছর ১.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা তার বেশি বিনিয়োগ করে যেতে হবে। আর এনডিসি অনুযায়ী গ্রিনহাউস গ্যাস প্রশমনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে, ২০৩০ সাল পর্যন্ত অনুমিত ব্যয় ১৭৬ বিলিয়ন ডলার। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বন্যার হার, তীব্রতা এবং স্থায়িত্ব বাংলাদেশে বেড়েই চলেছে। এতে মানুষের জীবন ও জীবিকার সঙ্গে বিভিন্ন অবকাঠামোর ক্ষতি হচ্ছে। প্রায় প্রতি বছর, সংঘটিত হওয়া ঘূর্ণিঝড়ের ফলে, বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকার পানিতে মাত্রাতিরিক্তভাবে লবণাক্ততা বেড়েছে। এতে সীমান্তবর্তী প্রায় ২ কোটি মানুষ সুপেয় পানির সমস্যায় রয়েছে এবং কৃষিকাজেরও ক্ষতি হচ্ছে। যদিও বাংলাদেশ বন্যা ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় অনেক অগ্রগতি করেছে এবং স্থানীয়ভাবে পরিচালিত অভিযোজনে বিশ্বে নেতৃত্বও দিচ্ছে,  তবে তা যথেষ্ট নয়। কেননা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে প্রতি বছর বিপুল আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে দেশ। সম্প্রতি স্টকহোম এনভায়রনমেন্ট ইনস্টিটিউটের প্রতিবেদনে জানা যায়, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সংঘটিত ক্ষতি মোকাবিলায় ও মেরামতে বাংলাদেশের গ্রামীণ পরিবারগুলো  বছরে প্রায় ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ করে। উল্লেখ্য, এ ব্যয় বার্ষিক সরকারি ব্যয়ের প্রায় দ্বিগুণ এবং বহুপাক্ষিক সংস্থাগুলোর অবদানের ১২ গুণের বেশি। এ থেকে সহজেই অনুমেয়, আন্তর্জাতিক জলবায়ু অর্থায়ন বাংলাদেশের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ।

ধনী বিশ্বই জলবায়ু সংকট সৃষ্টি করেছে। কিন্তু তুলনায় খুবই কম মাত্রায় কার্বন নিঃসরণ করা দরিদ্র বিশ্ব অত্যধিক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় দরকার অর্থায়ন। সম্মেলনে উপস্থাপিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উন্নয়নশীল দেশগুলোয় জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করতে হলে ২০৩০ সালের মধ্যে বছরে প্রায় ২ ট্রিলিয়ন ডলারের প্রয়োজন হবে। দরিদ্র দেশগুলোকে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমাতে এবং চরম আবহাওয়ার প্রভাবগুলোর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে সাহায্য করার জন্য ২০২০ থেকে বছরে ১০০ বিলিয়ন দেয়ার অঙ্গীকার করা হয়েছে। এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। ধনী দেশগুলো তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণে যত দীর্ঘ সময় ধরে ব্যর্থ হতে থাকবে, উন্নত দেশগুলোর ওপর উন্নয়নশীল বিশ্বের আস্থা তত কমতে থাকবে। জলবায়ু অর্থায়নে উন্নত বিশ্ব যে অর্থ দেয়, তার বেশির ভাগই মধ্যম আয়ের দেশগুলোর নিঃসরণ কমানোর প্রকল্পে ব্যয় হয়। ফলে সবচেয়ে কম কার্বন নিঃসরণকারী দরিদ্র দেশগুলো সবচেয়ে কম সহায়তা পেয়েছে। চরম আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়ার উপায়গুলোর জন্য এসব দেশের সহায়তার বেশি প্রয়োজন। যেমন দরকার নতুন করে বনায়ন বাড়ানো, বন্যা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা তৈরি করা এবং আগাম সতর্কতার ব্যবস্থা স্থাপন করা। বর্তমানে এসব খাতে তথা অভিযোজনের জন্য জলবায়ু অর্থায়নের মাত্র এক-পঞ্চমাংশ দেয়া হচ্ছে। গত বছর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে এটি দ্বিগুণ করা হবে। ধনী দেশগুলোর ঔপনিবেশিক শোষণ ও লুণ্ঠনের শিকার দরিদ্র দেশগুলো। চরম জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা করার জন্য প্রশ্নে তারা অসহায় অবস্থায় পর্যবসিত। কারণ, তাদের অর্থসংস্থান নেই। প্রয়োজনীয় অর্থ ছাড়া আগামী কয়েক দশকে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতিতে আক্রান্ত দেশগুলো টিপিং পয়েন্টের দিকে দ্রুত ধাবমান হবে। টিপিং পয়েন্ট এমন এক অবস্থা, যা ছোট ছোট ক্ষতি বা নেতিবাচক পরিবর্তনগুলো বড় আকারের বিপর্যয়ের মুখে দাঁড় করানো। সংকট প্রলম্বিত হলে জলবায়ু বিশৃঙ্খলাকে অপরিবর্তনীয় হয়ে উঠতে পারে।

জলবায়ু সংকটের কারণে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলো একটি সমাধান সামনে নিয়ে এসেছে। তারা বলছে, যারা মূলত এই সংকট সৃষ্টি করেছে, তাদের তৈরি অপূরণীয় ক্ষয়ক্ষতির জন্য একটি তহবিল গঠন করতে হবে, নাম ‘অপূরণীয় ক্ষয়ক্ষতি অর্থায়ন তহবিল’। ‘অপূরণীয় ক্ষয়ক্ষতি’ জলবায়ু সংকটের বিধ্বংসী প্রভাবকে বোঝায়। এগুলো এমন ক্ষয়ক্ষতি, যা অভিযোজন প্রক্রিয়ায় তথা বর্তমান ও ভবিষ্যতের জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবগুলোর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিরসন করা সম্ভব নয়। প্রশান্ত মহাসাগরীয় জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশ ভানুয়াতু ১৯৯১ সালে প্রথমে এ ধরনের আর্থিক সহায়তার প্রস্তাব করেছিল। কিন্তু বিষয়টি বছরের পর বছর তথাকথিত টেকনিক্যাল আলোচনায় আবদ্ধ করে রাখা হয়। অবশেষে অপূরণীয় ক্ষতি ও এর অর্থায়নের বিষয়টি অবশেষে অনিবার্য হয়ে উঠছে। কেউ কেউ বলতে পারেন যে খাদ্য, জ্বালানি ও জীবনযাত্রার সংকটের মধ্যে এ ধরনের অর্থায়ন অসম্ভব। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় কাজ করা গ্রুপ দ্য লস অ্যান্ড ড্যামেজ কোলাবোরেশনের নতুন একটি প্রতিবেদন বলছে, ২০২২ সালের প্রথমার্ধে মাত্র ছয়টি জীবাশ্ম জ্বালানি কোম্পানি উন্নয়নশীল দেশগুলোতে চরম আবহাওয়া ও জলবায়ু-সম্পর্কিত ইভেন্টগুলোর খরচ বহন করার জন্য যথেষ্ট অর্থ উপার্জন করেছে। অন্য এক হিসাবে, তেল কোম্পানিগুলো প্রতিদিন ১ বিলিয়ন ডলার লাভ করে। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস লস অ্যান্ড ড্যামেজ বা জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগ থেকে সৃষ্ট ক্ষতি বাবদ অর্থ দেয়ার জন্য জীবাশ্ম জ্বালানির বড় কোম্পানিগুলোর ওপর ‘উইন্ডফল ট্যাক্স’ আরোপের আহ্বান জানিয়েছেন। লস অ্যান্ড ড্যামেজ চলতি সম্মেলনের অফিশিয়াল অ্যাজেন্ডা বা মূল আলোচ্যসূচিতে দৃঢ়ভাবেই এসেছে। তবে এ সম্মেলনে এর নিষ্পত্তি হয়নি। অপূরণীয় ক্ষয়ক্ষতি আলোচনার কেন্দ্রে থাকলেও সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর প্রতিনিধিদের তুলনায় তেল ও গ্যাস কোম্পানিগুলোর লবিস্ট ছিল বেশি।

অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার, কলাম লেখক