নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিন বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন দেশে একটি ‘আন্তর্জাতিক মানের’ নির্বাচন দেখতে চায় এবং নির্বাচন কমিশনও এ বিষয়ে ‘প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’। বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলারের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল গতকাল রোববার নির্বাচন ভবনে গেলে তাদের সঙ্গে বৈঠকের পর এ কথা বলেন সিইসি। তিনি বলেন, ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে নিরপেক্ষভাবে কাজ করছি আমরা।’ আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে এ বৈঠকে সিইসির সঙ্গে ইসি সচিব আখতার আহমেদও উপস্থিত ছিলেন।
সিইসি বলেন, ‘তারা মূলত জানতে চেয়েছিলেন, আগামী নির্বাচনে আমাদের প্রস্তুতি আছে কি না। আমরা যা যা করছি তাদের জানিয়েছি। নির্বাচন সামনে রেখে প্রস্তুতির সবকিছু জানিয়েছি। তারা সুসংবাদের মতোই জানিয়েছেন। জানতে চেয়েছিলেন ভোটের বাজেট কত, টাকাপয়সা ঠিকমতো আছে কি না, অসুবিধা কোনো রকম আছে কি না। ‘আমরা বলেছি, আমাদের টাকাপয়সার কোনো অসুবিধা নেই। সরকারের কাছে বাজেট চেয়েছি। তবে তারা আমাদের সাহায্য করতে চান।’ ইসির কী কী সহায়তা প্রয়োজন, সে বিষয়েও বৈঠকে আলোচনা হওয়ার কথা জানান সিইসি।
তিনি বলেন, ‘আমাদের কী প্রয়োজন, সেটা জানতে চান তারা। আমরা বলেছি ইউএনডিপি এরই মধ্যে একটা নিড অ্যাসেসমেন্ট করেছে। একটা টিম পাঠিয়েছিল, কী কী সাহায্য প্রয়োজন হতে পারে, ইতোমধ্যে প্রজেক্টও বানিয়েছে। নির্বাচনের জন্য যে ধরনের সহায়তা প্রয়োজন হবে, তা দিতে প্রস্তুত আছে। নির্বাচন কমিশন শুধু নয়, বাংলাদেশ উন্নয়নেও সহায়তা করতে চান।’ আলোচনা চলমান থাকবে বলে জানিয়ে এএমএম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘তারা আগামী মাসে একটা কর্মশলা করবেন। এতে ইসি সচিব ও প্রতিনিধিরা যাবে আমাদের। সেখানে সিভিল সোসাইটি থাকবে। আমরা জোর দিয়েছি, দলের পোলিং এজেন্ট, ভোটার এডুকেশন ও স্থানীয় পর্যবেক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিতে চেয়েছেন।’
সিইসি বলেন, ‘ইসি নির্বাচনী কর্মকর্তাদের ট্রেনিং দিতে পারে। কিন্তু রাজনৈতিক দলের এজেন্টদের কীভাবে প্রশিক্ষণ দেয়া যায়, সে বিষয়ে সাহায্য চাওয়া হয়েছে। ভোটার এডুকেশন ও পর্যবেক্ষকদের ট্রেনিংয়ের ব্যাপারে সাহায্য করতে প্রস্তুত রয়েছেন তারা। আরও সহায়তা লাগলে জানানো হবে, সর্বতোভাবে সহায়তায় প্রস্তুত রয়েছেন তারা।’
ইউরোপীয় প্রতিনিধিরা আন্তর্জাতিক মানের ভোটের প্রত্যাশার কথা তুলে ধরেছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মানের নির্বাচন তারা দেখতে চান। আমরা তো প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এখানে আমাদের দ্বিমত নেই। তারা অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চান, যেটা আমাদেরও ওয়াদা। এটা আমরাও চাই। নিরপেক্ষভাবে আমরা কাজ করব, এটা তো আমরা ঘোষণা দিয়েছি। আমরা স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করছি।’
ইসি কোনো কিছু ‘লুকিয়ে-ছাপিয়ে’ করছে না এবং স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ চলছে বলে দাবি করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার।
অতীতে দেখা গেছে এজেন্টরা কেন্দ্রে যেতে পারেননি, ভোটের রাতে এলাকাছাড়া হয়েছেন। আগামী নির্বাচনে ইসি এ বিষয়ে কী উদ্যোগ নেবেÑজানতে চাইলে সিইসি বলেন, ‘অতীতে যা হয়েছে ভুলে যান। এটা বর্তমান। দয়া করে কনফাইন টু দ্য কারেন্ট সিচুয়েশন।… সবাই যাতে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারে, সে পরিবেশ আমরা তৈরি করে দেব ইনশাআল্লাহ।’
বৈঠকের পর মাইকেল মিলার সাংবাদিকদের বলেন, এটি নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে তাদের দ্বিতীয় সভা। ‘আমরা আলোচনায় এসেছি এবং বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন বর্তমানে যে কাজ করছে তা সম্পর্কে সংক্ষিপ্তভাবে জানতে পেরেছি, যেহেতু বাংলাদেশ তার রাজনৈতিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এবং গণতান্ত্রিক নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।’ বৈঠকে নির্বাচন কমিশনের সামনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের তিনটি মূল বার্তা তুলে ধরার কথা বলেন মিলার। ‘প্রথমত, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই দেশের দৃঢ় অংশীদার এবং আমরা এই গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের সময়ে আপনার পাশে আছি। দ্বিতীয়ত, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের সঙ্গে তার অংশীদারত্বকে সকল দিকে শক্তিশালী করতে চায় এবং আমরা এখানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উচ্চাকাক্সক্ষাকে সমর্থন করতে এসেছি, যাতে আপনারা গত বছর নাগরিকদের প্রকাশিত প্রত্যাশা অনুযায়ী নির্বাচন পরিচালনা করতে পারেন।
‘তৃতীয় বার্তাটি হলো, প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে বলেছি, ইউরোপীয় ইউনিয়ন আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী এই দেশে নির্বাচন পরিচালনাকে সমর্থন করবে।’ অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা দিয়ে সহায়তার পাশাপাশি আর্থিক বিষয়েও সহায়তার আশ্বাস দেন ইইউ দূত।
বাংলাদেশে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থাভুক্ত (ওআইসি) দেশগুলোর মিশনপ্রধানদের কাছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি তুলে ধরবে নির্বাচন কমিশন। আজ সোমবার এ বৈঠকে উপস্থিত হওয়ার জন্য আফগানিস্তান, আলজেরিয়া, ব্রুনেই দারুসসালাম, মিসর, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, ইরাক, কুয়েত, লিবিয়া, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, মরক্কো, ওমান, পাকিস্তান, ফিলিস্তিন, কাতার, সৌদি আরব, তুরস্ক এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের মিশন প্রধানদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।