আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সম্পৃক্ত করুন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীর ওপর সেদেশের সশস্ত্র বাহিনী নির্মম নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ চালায়। ওই দিনটিকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করেছেন বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গারা। বুকফাটা কান্না আর চোখের পানিতে বৃহস্পতিবার কক্সবাজারের উখিয়ায় ২২টি স্থানে গণহত্যা দিবস উপলক্ষে ‘হোপ ইজ হোম’ সমাবেশ করেন তারা। দিবসটি পালনে শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কাছ থেকে আগেই অনুমতি নিয়েছিলেন রোহিঙ্গারা। সমাবেশে রোহিঙ্গা নেতারা জš§ভূমি আরাকানে ফিরে যাওয়ার জন্য আকুতি জানিয়েছেন। শরণার্থী জীবনের পাঁচ বছর পার করলেও প্রত্যাবাসনে এখনও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন তারা। অবশ্য নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের পাঁচ বছর ধরে আশ্রয় দেয়ায় বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন তারা। তবে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের জন্য আর বোঝা হয়ে থাকতে চান না, সে কথাও তারা জানিয়েছেন। দ্রুত রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফিরে যেতে আন্তর্জাতিক সম্প্র্রদায়ের কাছে উদ্যোগ নেয়ার জন্য তারা দাবি জানান।

রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশের পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও তাদের প্রত্যাবাসন শুরু করতে না পারা এক ধরনের ব্যর্থতা, এটি স্বীকার করতেই হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্র্রদায় বলছে, রাখাইনে এখনও প্রত্যাবাসনের পরিবেশ তৈরি হয়নি। বিশ্ব সম্প্রদায়কে বোঝাতে হবে, প্রত্যাবাসনের পরিবেশ তৈরির দায়িত্ব আমাদের নয়। 

বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজ (সিজিএস) ‘রোহিঙ্গা সংকট প্রত্যাবাসনের পথ’ শীর্ষক আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার হচ্ছে প্রত্যাবাসন। তবে মিয়ানমার এখন পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত নেয়নি। এই সংকটের শুরু মিয়ানমারে, সমাধানও মিয়ানমারে।’

মর্যাদাপূর্ণ ও নিরাপদ মনে করলেই রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় নিজ দেশে ফিরবেন। মিয়ানমার নিজেই এখন জ্বলন্ত কড়াই। এ অবস্থায় এখন বা নিকট ভবিষ্যতে রোহিঙ্গাদের টেকসই, নিরাপদ ও সম্মানজনক প্রত্যাবাসন সম্ভব নয়। রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের ওপর আস্থা রাখতে পারছে না।  তাই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, জাতিসংঘ ও আসিয়ানকে মিয়ানমারে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে হবে।

কক্সবাজারের শিবিরে প্রতিবছর অস্থায়ী কাঠামো তৈরির বদলে স্থায়ী কাঠামো তৈরি করার ওপর জোর দিতে বলেছেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের শরণার্থীবিষয়ক আঞ্চলিক সমন্বয়ক। কেন তিনি এ পরামর্শ দিলেন, তা বোধগম্য নয়। আমরা তো রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন চাই।  

জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে কক্সবাজারের আশ্রয়শিবিরে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা দ্রুত মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ফিরতে চান। রাখাইন রাজ্যের যে গ্রাম থেকে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ঠেলে দেয়া হয়েছিল, নাগরিকত্বসহ স্বাধীনভাবে চলাফেরার অধিকারের জন্য ওই গ্রামেই পুনর্বাসন চান তারা।

বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের যুক্তরাষ্ট্রে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তবে কবে থেকে কী পরিমাণ রোহিঙ্গাকে যুক্তরাষ্ট্রে নেয়া হবে, সে বিষয়ে তিনি কিছু বলেননি। রোহিঙ্গদের নিজ জš§ভূমিতে ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের চুক্তি হলেও এখনও তা কার্যকর হয়নি। রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট দপ্তরসহ অন্যরা আমাদের কেবলই ধন্যবাদ জানায়। আমরা চাই রোহিঙ্গাদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে এবং তাদের নিরাপত্তা ও সম্মানের সঙ্গে মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কার্যকর উদ্যোগ নেবে।