আবগারি শুল্ক মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা: সংসদে কৃষিমন্ত্রী  

 

নিজস্ব প্রতিবেদক: ‘আবগারি শুল্ক মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ বলে মন্তব্য করেছেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী। গতকাল বৃহস্পতিবার সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনাকালে ব্যাংক হিসাবে বাড়তি আবগারি শুল্ক ও সঞ্চয়পত্রের সুদ কমানোর সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে একথা বলেন কৃষিমন্ত্রী।

মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘ব্যাংক আমানতে বাড়তি আবগারি শুল্ক থেকে সরকার কত পাবে? আয় আসবে ২০০ কোটি টাকার মতো। এজন্য বিপুল লোকের আয় কমিয়ে দেব? রবীন্দ্রনাথের সেই দাদুর কথা মনে পড়ছে। যে নিজের নাতিকে খুন করে যক্ষ বানিয়ে ধন পাহারা দিয়েছিল। অর্থমন্ত্রী কি আমাদের যক্ষের ধন পাহারাদার বানাচ্ছেন? ব্যাংকের সুদ নি¤œপর্যায়ে, ব্যাংক সার্ভিস চার্জ কাটে। এর মধ্যে এ আবগারি শুল্ক হবে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। এটা তো মহারানি ভিক্টোরিয়ার আমলের টাকা না, যে ঘি দিয়ে প্রদীপ জ্বালাবো।’

তিনি আরও বলেন, ‘পুরো প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নিলে ক্ষতি হবে ৩৫৫ কোটি টাকা। এটা অর্থমন্ত্রীর জন্য, আমাদের বাজেটের জন্য পিনাট। সেখানে কেন উনি (অর্থমন্ত্রী) হাত দিচ্ছেন? সঞ্চয়পত্রের ওপর সুদ কমানো ঠিক হবে না। ১০ শতাংশ সুদ ধরলে হয়তো হবে এক হাজার কোটি টাকা। এর সুবিধা পাবে লাখ লাখ লোক, যাদের জন্য কোনো সামাজিক নিরাপত্তা প্রকল্প নেই। তারা ট্রাকের সামনে দাঁড়াতে পারেন না, হাত পাততে পারেন না। এদের অনেকে সিনিয়র সিটিজেন। নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। আমরা অনেক শ্রেণির মানুষকে ভর্তুকি দেই, যার প্রাপ্য নয়। তার চেয়ে বড় কথা, ঋণখেলাপিদের বিশাল বোঝা নিতে পারলে আমরা কেন মধ্যবিত্ত, নি¤œবিত্তের সামান্য বোঝা নেবো না। প্রবলেম একটাই, এদের প্রেসার গ্রুপ নেই, থাকলে লেজ গুটায়ে মেনে নেওয়া হতো।  ব্যাংকের কাছ থেকে বা বিদেশি ঋণের চেয়ে সঞ্চয়পত্রের ঋণ ভালো ও সহজ।’

এ সময় চালের দাম বাড়ার বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘মোটা চালের দাম বাড়লে কৃষক দাম পাবে। আমরা কৃষককে বাধ্য করতে পারি না। আবার চালের দাম রাজনৈতিকভাবে স্পর্শকাতর বিষয়। তাই ঝুঁকি নিয়ে ব্যালেন্স করে আগাতে হচ্ছে।

উল্লেখ্য, অর্থমন্ত্রী গত ১ জুন তার বাজেট প্রস্তাবে ব্যাংক হিসাবের ওপর বাড়তি হারে আবগারি শুল্ক আরোপের প্রস্তাব দিলে এ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। প্রস্তাবে বলা হয়, বছরের যে কোনো সময় ব্যাংক হিসাবে এক লাখ টাকার বেশি স্থিতি থাকলে আবগারি শুল্ক বিদ্যমান ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০০ টাকা করা হবে। পাশাপাশি ১০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত ১ হাজার ৫০০ টাকার বদলে দুই হাজার ৫০০ টাকা, এক কোটি থেকে পাঁচ কোটি টাকা পর্যন্ত সাত হাজার ৫০০ টাকার বদলে ১২ হাজার টাকা এবং পাঁচ কোটি টাকার বেশি লেনদেনে ১৫ হাজার টাকার বদলে ২৫ হাজার টাকা আবগারি শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। তবে সাধারণ নাগরিকদের পাশাপাশি ব্যবসায়ী, ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিদরা আবগারি শুল্ক বাড়ানোর এ সিদ্ধান্তকে যৌক্তিক মনে করেছেন না। শুল্ক বাড়লে লেনদেনের অবৈধ মাধ্যম উৎসাহিত হবে। এদিকে ক্ষমতাসীন ও বিরোধীদলীয় কয়েক সংসদ সদস্যও জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাব প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন। গত বুধবার অর্থমন্ত্রী এ শুল্কের হার পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছেন।