নিজস্ব প্রতিবেদক: স্বাস্থ্য অধিদফতরের মেডিক্যাল এডুকেশন শাখার বরখাস্ত হওয়া হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা আবজাল হোসেনের পাঁচ নিকটাত্মীয়কে তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ পাঁচজনও স্বাস্থ্য অধিদফতরে কর্মরত। গতকাল দুদকের উপপরিচালক সামছুল আলম তাদের তলব করে এ বিষয়ে চিঠি দিয়েছেন। চিঠিতে আগামী ২২ জানুয়ারি তাদের দুদকে হাজির হতে বলা হয়েছে।
তলবকৃতদের মধ্যে আবজালের দুই ভাই রয়েছেন। তারা ফরিদপুর টিবি হাসপাতালে ল্যাব অ্যাটেনডেন্ট বেলায়েত হোসেন ও জাতীয় অ্যাজমা সেন্টারে হিসাবরক্ষক লিয়াকত হোসেন। আবজালের স্ত্রী রুবিনা খানমের তিন ভাইকেও তলব করা হয়েছে। তারা হলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের গাড়িচালক রকিবুল ইসলাম, উচ্চমান সহকারী বুলবুল ইসলাম ও খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অফিস সহকারী শরিফুল ইসলাম।
দুদক সূত্র জানায়, আবজাল হোসেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মেডিক্যাল এডুকেশন শাখার হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা। দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তার স্ত্রী রুবিনা খানম স্বাস্থ্য অধিদফতরের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য জনশক্তি উন্নয়ন শাখার সাবেক স্টেনোগ্রাফার। এখন তিনি রহমান ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক হিসেবে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সঙ্গে ব্যবসা করেন।
দুদকের তথ্য অনুসারে আবজাল বেতন পান সব মিলিয়ে ৩০ হাজার টাকার মতো। অথচ চড়েন হ্যারিয়ার ব্র্যান্ডের গাড়িতে। রাজধানীর উত্তরায় তার ও তার স্ত্রীর নামে বাড়ি আছে পাঁচটি। আরেকটি বাড়ি আছে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে। রাজধানী ছাড়াও দেশের বিভিন্ন এলাকায় আছে অন্তত ২৪টি প্লট ও ফ্ল্যাট। দেশে-বিদেশে আছে বাড়ি-মার্কেটসহ অনেক সম্পদ। এসব সম্পদের বাজারমূল্য হাজার কোটি টাকারও বেশি।
আবজাল-রুবিনা দম্পতির বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নেমে গত বৃহস্পতিবার আবজালকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। রুবিনা খানমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আজ বৃহস্পতিবার দুদকে হাজির থাকতে বলা হলেও তিনি সময়ের আবেদন করেছেন বলে দুদক সূত্র জানিয়েছে।
অনুসন্ধান শুরু হওয়ার পরই ধারাবাহিকতায় রোববার আবজালকে সাময়িক বরখাস্ত করে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালককে চিঠি দিয়েছে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ। সে অনুসারে স্বাস্থ্য অধিদফতর ব্যবস্থা নিয়েছে বলে অধিদফতর সূত্র জানিয়েছে। এর আগে আবজাল ও রুবিনার বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দুদক।
উল্লেখ্য, তার স্ত্রী রুবিনা খানম স্টেনোগ্রাফার হিসেবে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজে যোগ দেন ১৯৯৮ সালে। ২০০০ সালে স্বেচ্ছায় অবসরে গিয়ে রহমান ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নামে প্রতিষ্ঠান গড়ে ব্যবসা শুরু করেন। মূলত স্বামী-স্ত্রী মিলে স্বাস্থ্য অধিদফতরে একচেটিয়া ব্যবসা করার জন্য তারা প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, নিয়োগ-বদলি বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ, কাজ না করে বিল তুলে নেওয়ার মতো কাজগুলো করেছেন আবজাল। এর মাধ্যমে বিপুল বিত্তবৈভব গড়ে তুলেছেন বলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অভিযোগ।
