আবদুস সালাম

আবদুস সালাম একুশে ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা-আন্দোলনের শহিদদের মধ্যে একজন। ১৯২৫ সালের ২৭ নভেম্বর ফেনীর দাগনভূঁইয়া উপজেলার মাতুভূঁইয়া ইউনিয়নের লক্ষ্মণপুর গ্রামে (বর্তমানে সালামনগর) তিনি জš§গ্রহণ করেন। তার পিতা মুনশি আবদুল ফাজেল মিয়া, মাতা দৌলতের নেছা। মুনশি আবদুল ফাজেল মিয়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যোগ দেন এবং ইরাকের বসরায় কর্মরত ছিলেন।

ভাষাশহিদ আবদুস সালামের শৈশব অতিবাহিত হয় লক্ষ্মণপুর গ্রামে। তার শিক্ষাজীবন আরম্ভ হয় কৃষ্ণরামপুর প্রাইমারি স্কুলে। প্রাথমিক শিক্ষা শেষে তিনি ভর্তি হন মাতুভূঁইয়া কলিমুল্লাহ মাইনর স্কুলে (বর্তমানে মাতুভূঁইয়া হাইস্কুল)। সালাম এ স্কুলে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। পরে ভর্তি হন দাগনভূঁইয়া আতাতুর্ক হাইস্কুলে। দশম শ্রেণিতে ওঠার পর আর্থিক অভাব-অনটনের কারণে তার লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়। সংসারের দৈন্যদশা লাঘবের উদ্দেশে কলকাতায় মেটিয়াবুরুজে তার জেঠাতো বোনের স্বামী আবদুল কাদেরের আশ্রয়ে আসেন। আবদুল কাদের কলকাতা বন্দরে কাজ করতেন। সেখানে তিনি সালামকে একটি কাজ জুটিয়ে দেন। ভারত বিভাগের পরপরই সালাম ঢাকায় আসেন এবং আজিমপুরে (পলাশী ব্যারাক) বসবাস শুরু করেন।

১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষা করার দাবিতে ছাত্র-জনতা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হোস্টেলের সামনের রাস্তায় সমবেত হয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। সেই বিক্ষোভে আবদুস সালামও যোগ দেন। ওইদিন আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশ বর্বরোচিতভাবে গুলিবর্ষণ করলে বরকত, জববার, রফিক, শফিউরসহ অনেকের সঙ্গে সালামও গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। প্রায় দেড় মাস পর ৭ এপ্রিল হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। তাকে আজিমপুর কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।

২০০০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ভাষাশহিদ আবদুস সালামকে সরকারিভাবে মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত করা হয়। ফলে বিশিষ্ট ভাস্কর রাসা ভাষাশহিদ সালামের প্রতিকৃতি তৈরির পরিকল্পনা ও উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তিনি এ পরিকল্পনার নাম দেন ‘অস্তিত্বের শেকড়ে আলো’।

সালামের স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য দৈনিক ফেনীর সময় পত্রিকার সম্পাদক শাহাদাত হোসেনের উদ্যোগে ২০০০ সালে গঠিত হয় ‘ভাষাশহিদ আবদুস সালাম স্মৃতি পরিষদ’। এ বছর থেকেই স্থানীয়ভাবে লক্ষ্মণপুর গ্রাম ‘সালামনগর’ নামে পরিচিত হতে থাকে এবং ২০০৯ সালে এ নাম সরকারিভাবে স্বীকৃতি লাভ করে। এ সময় সালামের বাড়ির রাস্তাটি পাকা করা হয়। দাগনভূঁইয়া উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনের নামকরণ হয় ‘ভাষাশহিদ সালাম মিলনায়তন’। তদুপরি স্থানীয়ভাবে ফেনী জেলা স্টেডিয়ামের নাম পরিবর্তন করে ‘ভাষাশহিদ সালাম স্টেডিয়াম’ নামকরণ এবং জেলা পরিষদের উদ্যোগে ফেনী শহরের মিজান রোডে সালামের নামে একটি কমিউনিটি সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হয়।

২০০৮ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সহযোগিতায় সালামনগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘ভাষাশহিদ আবদুস সালাম গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর’। তার পরিবার ও এলাকাবাসী সম্মিলিতভাবে ১৯৮৮ সালে লক্ষ্মণপুরে সালামের বাড়ির কাছে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করে। ১৯৯১ সালে বিদ্যালয়টির ‘লক্ষ্মণপুর কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়’ এবং ২০০৯ সালে ‘লক্ষ্মণপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়’ নামকরণ হয়। [সংগৃহীত]

শিশুদের অতিরিক্ত লালা নিঃসরণ

লালা, থুতু বা স্যালাইভা মুখের ভেতর নিঃসৃত অতি জরুরি তরল, যা মুখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে অন্যতম ভূমিকা রাখে। তবে কিছু শিশুর ক্ষেত্রে এ লালা নিঃসরণের মাত্রা বেশি দেখা যায়। কথা বলার সময়, ঘুমের মধ্যে বা এমনিতেই তাদের লালা গড়িয়ে পড়ে। সাধারণত বয়স দুই বছর হওয়ার পরও লালা পড়াটা অস্বাভাবিক হতে পারে।

সম্ভাব্য কারণ: শিশুদের সাধারণত ছয় মাস বয়সের পর দাঁত ওঠা শুরু হয়। তখন তারা হাতের কাছে যা পায়, তা-ই কামড়াতে চায়। এ সময় তারা শূলশূল ভাব বা অস্বস্তি অনুভব করে, জ্বরও আসতে পারে। হয়ে থাকে অতিরিক্ত লালা নিঃসরণও। শিশুরা সহজেই ঠান্ডা-সর্দিতে আক্রান্ত হয়। এ সময় নাক দিয়ে পানি পড়ে, শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, অ্যালার্জি হতে পারে। এসব অবস্থায় অতিরিক্ত লালা নিঃসরণ হতে পারে।

মুখের মধ্যে কোনো ক্ষত, সাইনাস বা টনসিলে প্রদাহসহ কিছু সংক্রমণ থেকে অতিরিক্ত লালা পড়তে পারে। লোভনীয় বা টকজাতীয় খাবারেও লালা বেশি পড়ে। জিবের অস্বাভাবিকতা, ঠোঁট বন্ধ না হওয়া, ঠোঁট ও তালুকাটা, বদভ্যাস, কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা, দাঁতের নতুন ফিলিং করানো, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু, এলোমেলো ও ফাঁকা দাঁতের কারণেও লালা পড়ে বেশি।

কী হতে পারে: সামাজিকভাবে বিব্রত হওয়া, মানসিক চাপ অনুভব করা, সহপাঠী বা বন্ধুদের দ্বারা এড়িয়ে চলার শিকার হওয়া। মুখ ও কাপড়ে দুর্গন্ধ ও দাগ লেগে থাকা। কথা বলা, হাসি এবং উচ্চারণ করে পড়ার সময় লালা বেরিয়ে আসা। খাবার গ্রহণকালে লালা বেরিয়ে আসা, গিলতে সমস্যা হওয়া ও অপুষ্টি। লালা অনেক সময় শ্বাসতন্ত্রে ঢুকে কাশি হয়, ইনফেকশন থেকে নিউমোনিয়াও হতে পারে।

করণীয়: ডেন্টাল চিকিৎসকের পরামর্শে সঠিক কারণ খুঁজে বের করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। অতিরিক্ত লালা নিঃসরণ হয়, এমন খাবার থেকে বিরত থাকতে হবে। যে পজিশনে থাকলে বেশি লালা নিঃসৃত হয়, শিশুকে সেভাবে না রেখে মাথা ও ঘাড় ঠিকভাবে রাখার অভ্যাস করানো দরকার। মুখের পরিচর্যায় কোনো অবহেলা নয়। নরম টুথব্রাশ দিয়ে দাঁত মাজা ও ফ্লোরাইডযুক্ত টুথপেস্ট ব্যবহার করতে হবে। চুষনি, আঙুল চোষা, অত্যধিক টিভি/ইন্টারনেট ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।  ডিহাইড্রেশন রোধে অল্প অল্প করে পানি পান, আদা চিবানো, পেঁপের জুস পান করাতে হবে। এ ছাড়া বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মতামতে স্পিচ থেরাপি ও ক্ষেত্রবিশেষে মেডিকেশন দরকার হতে পারে।

ডা. মো. আসাফুজ্জোহা রাজ

রাজ ডেন্টাল সেন্টার, কলাবাগান, ঢাকা