নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যার তৃতীয় বার্ষিকীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) সমাবেশের আয়োজন করে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ। সেই সমাবেশে অতর্কিত হামলা চালিয়েছেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এসময় তারা সমাবেশস্থলে থাকা চেয়ার ও মাইক ভাঙচুর করেন। পুড়িয়ে দেওয়া হয় ব্যানার-ফেস্টুনও। এতে পণ্ড হয়ে গেছে ছাত্র অধিকার পরিষদের ডাকা সমাবেশ।
আজ শুক্রবার বিকেল পৌনে ৪টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য এলাকায় এ হামলার ঘটনা ঘটে। হামলার ঘটনায় অন্তত ১২ জন আহত হয়েছেন বলে দাবি ছাত্র অধিকার পরিষদের।
হামলায় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি এম. এম মহিন উদ্দিন, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব খান, সাংগঠনিক নাজিম উদ্দীন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সম্পাদক আল আমিন রহমান, উপ-দপ্তর সম্পাদক শিমুল খান, আব্দুর রাহিম, জুহুরুল হক হল ছাত্রলীগের সভাপতি কামাল উদ্দীন রানা, সাধারণ সম্পাদক রুবেল হোসেনসহ কেন্দ্রীয়, বিশ্ববিদ্যালয় ও হল শাখা ছাত্রলীগের শতাধিক নেতাকর্মীরা অংশ নেয়।
ছাত্রলীগের অনুষ্ঠানে হামলার ঘটনায় জড়িত ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব খান বলেন, তারা (ছাত্র অধিকার) ক্যাম্পাসে বহিরাগত, মৌলবাদীদের নিয়ে কর্মসূচি পালন করে। আমরা তাদের জিজ্ঞাসা করতে আসি তারা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র কি-না। এসময় তারা কিছু না দেখিয়ে আমাদের ওপর হামলা করে। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতিরোধ করে।
তবে আবরার ফাহাদ স্মৃতি সংসদের আহবায়ক আখতার হোসেন বিষয়টি পুরোপুরি অস্বীকার করে বলেন, আমাদের পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী স্মরণসভা শুরু করার পরপরই প্রক্টরিয়াল টিমের উপস্থিতে আমাদের ওপর বিনা উসকানিতে হামলা চালায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এতে আমাদের অন্তত ১০ জন আহত, দুইজন গুরুতর আহত হয়েছে। একজন রিকসা চালকেরও মাথা ফেটে গেছে। আহতদের ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসা হয়েছে। আমরা কোনো দলীয় ব্যানারেও এই প্রোগ্রাম করিনি, আমরা প্রোগ্রাম করেছি আবরার ফাহাদ স্মৃতি সংসদের ব্যানারে। আমরা এই ন্যাক্কারজনক হামলার ধিক্কার জানাই।
এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব খানের নেতৃত্বে শতাধিক নেতাকর্মী হামলা চালায়। ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা প্রথমে এসে কর্মসূচিতে অংশ নেয়া সবাই ঢাবি শিক্ষার্থী কি-না জানতে চায়। এ নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। পরে তারা অতর্কিত হামলা চালায়। এ সময় ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। স্মরণসভার জন্য আনা অর্ধশতাধিক চেয়ার ভাঙচুর করা হয় ও ব্যানার জ্বালিয়ে দেয়া হয়।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ কে শেরে বাংলা হলের তার ১০১১ কক্ষ থেকে ডেকে নিয়ে যান বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। পরে তারা ২০১১ নম্বর কক্ষে নিয়ে গিয়ে আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করে। পরে রাত ৩টার দিকে শেরে বাংলা হলের সিঁড়ি থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় ওই বছরের ৭ অক্টোবর রাজধানীর চকবাজার থানায় আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে ১৯ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন।