Print Date & Time : 6 July 2025 Sunday 3:36 am

আবারও পায়ে হেঁটে কর্মস্থলের পথে গার্মেন্টস কর্মীরা

শাহরিয়ার সিফাত, টাঙ্গাইল: সরকারের সাধারণ ছুটি আগামী ৫ মে পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হলেও দেশের উৎপাদনমুখী কলকারখানা বিশেষ করে গার্মেন্টস শিল্পের ছুটি বৃদ্ধি করা হয়নি। এখন পর্যন্ত পূর্ব নির্ধারিত ২৫ এপ্রিল পর্যন্তই ছুটি রয়েছে এই শিল্পের শ্রমিকদের।

আর এতে রোববার থেকে কারখানাগুলো খোলা থাকার কথা থাকায় কর্মস্থলের দিকে ছুটছেন গার্মেন্টসকর্মীরা। এদিকে সরকারী সিদ্ধান্তে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন তারা। ফলে বাধ্য হয়েই পায়ে হেঁটেই গন্তব্যস্থলে যেতে দেখা গেছে তাদের।

শনিবার সকাল থেকেই ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে গার্মেন্টসকর্মীদের ভোগান্তির এমন চিত্র চোখে পড়ে।

মহাসড়কে দেখা যায়, গণপরিবহন বন্ধ থাকায় পায়ে হেঁটেই শ্রমিকরা গাজীপুর-ঢাকার দিকে যাচ্ছেন। তাদের বেশিরভাগই উত্তরবঙ্গ, জামালপুর ও টাঙ্গাইলের বিভিন্ন এলাকা থেকে যাচ্ছেন। অনেকে সিএনজি-অটোরিক্সায় করে যাচ্ছেন। আবার কোন ট্রাক বা পিকআপ পেলে সেটিতে উঠার চেষ্টাও করছেন অনেকে।

শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তাদের কর্মস্থলের গার্মেন্টস থেকে বলা হয়েছে ২৬ এপ্রিল থেকে তাদের অবশ্যই কাজে যোগ দিতে হবে। সরকারী সাধারণ ছুটি বৃদ্ধি হলেও, এখনও তারা তাদের ছুটি বৃদ্ধির কোন সিদ্ধান্ত কর্তৃপক্ষের থেকে পাননি।

ফলে ঝুঁকি নিয়েই তারা বাড়ি থেকে বের হয়েছেন। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় অনেকে সেহেরী খেয়েই বাড়ি থেকে রওনা হয়েছেন। ২০-২৫ কিলোমিটার হেঁটে মহাসড়কের কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা এসে তারা যানবাহনের জন্য অপেক্ষা করছেন।

যদি তারা কাজে যোগ না দেয় তবে তাদের চাকরি চলে যাবে। আর তাছাড়া দীর্ঘ ১ মাস ঘরে থেকে তাদের জমানো টাকা শেষ হয়ে গেছে। তাই করোনা ঝুঁকি আছে জেনেও তারা কাজের জন্য যাচ্ছেন।

ভূঞাপুর থেকে গাজীপুরের পথে রওনা হওয়া রাসেল নামের এক গার্মেন্টস শ্রমিক বলেন, ‘সরকারের সাধারণ ছুটি বেড়েছে, কিন্তু আমাদের ছুটি বাড়ানো হয়নি। আবার গাড়িও বন্ধ। তাই হেঁটেই রওনা হয়েছি। গাড়ি না পেলে এভাবেই যেতে হবে। যাবার পর সেদিনের মতো আবারও যদি মধ্যরাতে ছুটির ঘোষণা দেয়া হয়, তবে হয়তো আবারও এমন করে হেঁটেই আসতেই হবে।’

জুয়েল নামের আরেক শ্রমিক বলেন, ‘অফিসের বড় স্যারদের সাথে যোগাযোগ করেছি, তারা বলেছে কাল থেকে অফিস খোলা। যেভাবেই হোক তোমাদের আসতে হবে। তাই ১০ টাকার অটোভাড়া ১০০ টাকা, ৫০ টাকার সিএনজি ভাড়া ২০০ টাকা দিয়ে কিছু পথ এসেছি। আর বাকিটা হেঁটেই যাচ্ছি।’

রব্বানী নামের আরেক শ্রমিক বলেন, ‘এর আগের বার এই শুনেছিলাম খোলা, আবার এই শুনেছি বন্ধ। এর আগে বন্ধ বলছে, অনেকে যেতে পারে নাই। পরে ৬৫ জনকে ছাঁটাই করছে। এবারও একই কথা শুনছি। যারা যেতে পারছে তারা কোনভাবে যাচ্ছে। যারা যেতে পারছেন না, দেখা যাবে তাদের ছাঁটাই করা হচ্ছে। সুনির্দিষ্ট কোন সিদ্ধান্ত আমাদের দিতে পারছে না। এতে করে আমাদের চরম ভোগান্তি হচ্ছে।’

রাবেয়া নামের এক নারী গার্মেন্টসকর্মী বলেন, ‘রাস্তায় কোন গাড়ি ঘোড়া নাই, ১০ টাকার ভাড়া ১০০ থেকে ২০০ টাকা। তারপরও একটু যাবার পরই পুলিশ নামিয়ে দেয়। হাতে কোন টাকা নাই। জামালপুর থেকে সকালে রওনা দিয়ে দুপুর পর্যন্ত ৭-৮টা গাড়ি বদল করে এলেঙ্গা পর্যন্ত আসছি। এখান থেকে এমনে করেই সাভার যেতে হবে।’

হুয়ায়ুন নামের আরেক শ্রমিক বলেন, ‘করোনার জন্য বাসা থেকে বের হতেই এখন ভয় লাগে। রাস্তায় কার শরীরের সাথে ঘেষা লাগে। কার করোনা আছে আমরা তো জানি না। কিন্তু অফিসও কাল থেকে খোলা। না গেলে হয়তো চাকরি থাকবে না। তাই ভয় ভেঙ্গেই যেতে হচ্ছে।’

রাজ্জাক নামের এক শ্রমিক বলেন, ‘আজ ২৬ তারিখ। কিন্তু এখনও গত মাসের বেতন পাই নাই। হাতে টাকা নাই। প্রতিমাসে জমানো যে সামান্য টাকা ছিলো, সেটি দিয়ে কোন রকম পরিবার নিয়ে চলেছি। এখন হাত খালি। আবার কালকে না গেলে চাকরিও থাকবে না। তাই ধার দেনা করে দ্বিগুণ অটোসিএনজি ভাড়া দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। অনেকে ট্রাক-পিকআপের ছাদে করে যাচ্ছে। কিন্তু পুলিশ ঝামেলা করায় চালকরাও নিতে চাচ্ছে না।’

এই ব্যাপারে মহাসড়কে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের সাথে কথা বলতে চাইলে তারা কোন মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

উল্লেখ্য, এর আগে গত ৪ এপ্রিল ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে এমন চিত্র দেখা গিয়েছিলো। ৫ এপ্রিল থেকে গার্মেন্টস খোলার কথা থাকায় এভাবেই ভোগান্তি সয়ে কর্মস্থলের দিকে গিয়েছিলো গার্মেন্টস শ্রমিকরা। কিন্তু ৪ তারিখ গভীর রাতে আবারও গার্মেন্টস বন্ধ ঘোষণা আসায় তাদের ফিরে আসতে হয়। এবারও গত ২২ মে সরকারী সাধারণ ছুটি ২৬ এপ্রিল থেকে ৫ মে পর্যন্ত বর্ধিত করা হলেও, গার্মেটন্স সেক্টরের ছুটি বর্ধিত করার কোন সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি।