আবারও ভয়াবহ আকারে ফিরছে লোডশেডিং

ইসমাইল আলী: বর্তমানে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২৩ হাজার ৩৩২ মেগাওয়াট। তবে এ সক্ষমতার এক-তৃতীয়াংশই কাজে লাগানো যাচ্ছে না। উৎপাদন সক্ষমতা নেমে গেছে ১৫ হাজার মেগাওয়াটের নিচে। জ্বালানি সংকটে অর্ধশতাধিক কেন্দ্র বসে থাকছে। অপরদিকে তাপমাত্রা অস্বাভাবিক বৃদ্ধিতে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে গেছে। এতে লোডশেডিং তীব্র আকার ধারণ করেছে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঈদুল ফিতরের পর বিভিন্ন জায়গায় বৃষ্টি হওয়ায় চাহিদা কমে ১০ হাজার মেগাওয়াটের নিচে চলে এসেছিল। তবে চলতি সপ্তাহে তাপমাত্রার হঠাৎ বৃদ্ধিতে বিদ্যুতের চাহিদা অনেক বেড়েছে। গত ২-৩ দিনে চাহিদা ১৫ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে গেছে। তবে জ্বালানি সংকটে বন্ধ রয়েছে বিভিন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র। এতে উৎপাদন সক্ষমতা কমে যাওয়ায় বিদ্যুতের বর্ধিত চাহিদা পূরণ করা যাচ্ছে না। লোডশেডিং করতে হচ্ছে দেড় থেকে দুই হাজার মেগাওয়াট।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, গত ৬ মে রাত ৯টায় (পিক আওয়ার) বিদ্যুতের চাহিদা ছিল সর্বোচ্চ ১৪ হাজার ১৬০ মেগাওয়াট। তবে ওই সময় বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় ১৪ হাজার ৯৭ মেগাওয়াট। ফলে সে সময় ৬৩ মেগাওয়াট ঘাটতি ছিল। যদিও গ্রাহক পর্যায়ে লোডশেডিং ছিল আরও বেশি। ওই দিন সর্বোচ্চ লোডশেডিং হয় রাত ১২টায়। সে সময় লোডশেডিংয়ের পরিমাণ ছিল ৫৩৪ মেগাওয়াট।

পরের দিন ৭ মে রাত ৯টায় বিদ্যুতের চাহিদা ছিল সর্বোচ্চ ১৪ হাজার ৭৮১ মেগাওয়াট। তবে ওই সময় বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় ১৪ হাজার ৩৩১ মেগাওয়াট। এতে সে সময় ৪৫০ মেগাওয়াট ঘাটতি ছিল। তবে ওইদিন সর্বোচ্চ লোডশেডিং হয় রাত ১২টায়। সে সময় লোডশেডিংয়ের পরিমাণ ছিল এক হাজার ৬৭ মেগাওয়াট। আর ৮ মে রাত ৯টায় বিদ্যুতের চাহিদা ছিল সর্বোচ্চ ১৫ হাজার ৩২১ মেগাওয়াট। তবে ওই সময় বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় ১৩ হাজার ৯৬৫ মেগাওয়াট। এতে সে সময় এক হাজার ৩৫৬ মেগাওয়াট ঘাটতি ছিল। তবে ওইদিন সর্বোচ্চ লোডশেডিং হয় রাত ১২টায়। সে সময় লোডশেডিংয়ের পরিমাণ ছিল এক হাজার ৫৮২ মেগাওয়াট।

পিডিবির তথ্য জানাচ্ছে, ৭ মে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ছিল (আমদানিসহ) সর্বোচ্চ ১৪ হাজার ৬৩৫ মেগাওয়াট। পরের দিন (৮ মে) এ সক্ষমতা ছিল ১৪ হাজার ৮২৮ মেগাওয়াট এবং ৯ মে এ সক্ষমতা ছিল ১৪ হাজার ৭২৭ মেগাওয়াট। অর্থাৎ ওইদিন আট হাজার ৬০৫ মেগাওয়াট সক্ষমতা বসে ছিল। যদিও গত মাসে (রোজায়) বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ১৬ হাজার মেগাওয়াটের ওপরে ছিল। ওই সময় টানা কয়েকদিন সর্বোচ্চ উৎপাদনের রেকর্ড করা হয়। এর মধ্যে ১৯ এপ্রিল সর্বোচ্চ ১৫ হাজার ৬৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। তবে জ্বালানি সংকটের কারণে বর্তমানে সক্ষমতা আরও কমে গেছে।

গত ৯ মে ৫৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র গ্যাস, কয়লা ও জ্বালানি তেল সংকটে আংশিক বা পূর্ণাঙ্গ বন্ধ ছিল। এর মধ্যে কয়লা সংকটে তিনটি, গ্যাস সংকটে বন্ধ ছিল ১৬টি এবং জ্বালানি তেল সংকটে ৩৪টি কেন্দ্র বন্ধ ছিল। এছাড়া রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ৩৮টি কেন্দ্র বন্ধ ছিল। সব মিলিয়ে উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় ৩৭ শতাংশই বন্ধ হয়ে গেছে।

পিডিবির কর্মকর্তারা বলছেন, বিদ্যুৎ সংকটের এখানেই শেষ নয়। ডলার সংকটে জ্বালানি তেল ও কয়লা আমদানি বাড়ানো যাচ্ছে না। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র দুই সপ্তাহ ধরে বন্ধ। পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের বকেয়া বিলও পরিশোধ করা যাচ্ছে না। এতে ১৫ মের পরে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে গেলে লোডশেডিং কোথায় গিয়ে ঠেকবে তা ধারণা বাইরে।