রাজধানীর বেশিরভাগ আবাসিক এলাকায় শিশু-কিশোরদের খেলার মাঠ নেই। অনেক এলাকায় খোলা মাঠে গড়ে উঠেছে স্থাপনা। খেলার মাঠ না থাকায় শিশুরা এখন এজন্য প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে পড়েছে। কল্যাণপুর বস্তির ৫২ শতাংশ, ধানমন্ডি আবাসিক এলাকার ১২ শতাংশ, মিরপুর এলাকার ২১ শতাংশ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার ৯ শতাংশ শিশু ভিডিও গেমসে আসক্ত। সেভ দ্য চিলড্রেন এমনটি জানিয়েছে।
এসব শিশুর মা-বাবা কাজকর্মে চলে যাওয়ার পর অভিভাবকহীন হয়ে পড়ে তারা। এ সময়ে তারা সঠিক নির্দেশনা পায় না। অভিভাবকহীন এসব শিশু মূলত খেলাধুলার জন্য খোলা জায়গা না পেয়ে ভিডিও গেমসে আসক্ত হয়ে পড়ছে। এ বিষয়ে সংস্থাটির ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে গতকাল শেয়ার বিজে ‘খোলা জায়গার অভাবে ভিডিও গেমসে আসক্ত বস্তির শিশুরা’ শীর্ষক খবর প্রকাশ হয়।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় পর্যাপ্ত খোলা জায়গা থাকায় এখানকার শিশুরা খেলার কিছু সুযোগ পায়। ধানমন্ডিতে কিছু খেলার মাঠ থাকায় এ এলাকার শিশুরাও খেলাধুলার সুযোগ পায়। অন্যদিকে কল্যাণপুরে মাঠের অভাবে বস্তির শিশুরা ভিডিও গেমসকেই খেলা মনে করে সময় কাটাচ্ছে এবং এ ভার্চুয়াল জগতে আসক্ত হয়ে পড়ছে। গবেষণায় বলা হয়েছে, মেয়ে শিশুদের প্রিয় খেলাগুলোর মধ্যে রয়েছে ব্যাডমিন্টন, দড়ি টানাটানি, দোলনা ও সাঁতার। কিন্তু জরিপে দেখা গেছে, ৩৯ শতাংশ ছেলেমেয়ে ভিডিও গেমস খেলতে পছন্দ করে।
বস্তি নাগরিক জীবনের একটি সমস্যা বলে বিবেচিত হলেও এখানে বসবাসকারীরা সচ্ছল পরিবারেই সহায়ক কাজকর্মে নিয়োজিত। এসব গরিব ও নি¤œ আয়ের মানুষ নাগরিক জীবনেরই অঙ্গ। নগরীতে কেন্দ্রীভূত শিল্প ও বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে তারা। তাই বস্তিবাসী ও তাদের সন্তানদের এর অবিচ্ছেদ্য অংশ বিবেচনা করেই নাগরিক পরিকল্পনা নেওয়া প্রয়োজন।
আমাদের পরিকল্পনাবিদরা সাধারণভাবে নগর পরিকল্পনায় খোলা জায়গা বা খেলার মাঠের বিষয়টিকে কম গুরুত্ব দেন। বিশেষত বেসরকারিভাবে গড়ে ওঠা আবাসিক এলাকায় খোলা জায়গা রাখা হয় না বললেই চলে। বাণিজ্যিক মনোভাব প্রাধান্য পাওয়ায়ই
এ সমস্যা দেখা দিচ্ছে।
শিশুরা আমাদের ভবিষ্যৎ। শিশু যেখানেই বেড়ে উঠুক, তার জন্য ন্যূনতম সুষ্ঠু পরিবেশ প্রয়োজন। তাদের সুষ্ঠু বিকাশের জন্য পারিবারিক পরিচর্যা যেমন প্রয়োজন, তেমনি চাই সামাজিক পরিচর্যা। সুষ্ঠু সামাজিক পরিবেশ ব্যতীত শিশুদের সঠিক বিকাশ ঘটে না। সচ্ছল পরিবারের শিশুরা পারিবারিকভাবে ভালো পরিবেশ পেলেও বস্তির শিশুরা তা থেকেও বঞ্চিত। এর মধ্যে খেলাধুলার পরিবেশ পেলে তাদের জন্য কিছুটা সুযোগ অন্তত নিশ্চিত হয়। তা না থাকায় বস্তির শিশুরা নানা খারাপ কাজেও জড়িয়ে যায়। খোলা জায়গা না থাকায় তাদের অনেকে ভিডিও গেমসে আসক্ত হয়ে পড়ছে। এ বিষয়ে সরকারকে গভীরভাবে চিন্তা করতে হবে। বিশেষত গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে কার্যকর উদ্যোগ নিয়ে নগরীর প্রতিটি এলাকায় খেলার মাঠ বা খোলা জায়গা বের করতে হবে। অন্যথায় এসব শিশু সমাজের জন্য নিছক বোঝা হয়ে উঠতে পারে।
