Print Date & Time : 2 August 2025 Saturday 8:10 pm

আমদানি নীতির বাস্তবায়নে স্বর্ণ চোরাচালান বন্ধ হোক

দেশের বিমানবন্দর ও স্থলবন্দর কিংবা বিভিন্ন চোরাইপথে আসা স্বর্ণ জব্দ হওয়ার খবর নতুন নয়। কখনও মণকেও ছাড়িয়ে গেছে। নিত্যনতুন কৌশল, রুট পরিবর্তনের মাধ্যমে চোরাচালান হচ্ছে। যাত্রীরা ঘোষণা না দিয়েই সঙ্গে আনা বিভিন্ন জিনিসের ভেতর করে অননুমোদিতভাবে স্বর্ণ আনছেন। অথচ দেশে বৈধ পথে এক ভরি স্বর্ণ আমদানি হয়নি কখনও। বন্দরগুলো ক্রমেই স্বর্ণ চোরাচালানের ‘নিরাপদ রুট’ হয়ে উঠছিল। স্বর্ণ জব্দ হলেও হোতারা থাকে ধরাছোঁয়ার বাইরে। এতে দেশের ভাবমূর্তি যেমন নষ্ট হচ্ছিল, ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিলেন।

অপরিশোধিত স্বর্ণ আমদানি এবং স্বর্ণ পরিশোধনাগার স্থাপনের সুযোগ রেখে বুধবার ‘স্বর্ণ নীতিমালা, ২০১৮ (সংশোধিত)’ নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এতে ব্যবসায়ীরা স্বর্ণবার, স্বর্ণালঙ্কারের পাশাপাশি অপরিশোধিত স্বর্ণও আমদানি করতে পারবেন।

নীতিমালাটি যথাযথভাবে পরিপালিত হলে স্বর্ণ আমদানি ও পরবর্তী বাণিজ্যিক প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে বলেই বিশ্বাস। বৈধভাবে স্বর্ণ আমদানি হলে ক্রেতা, স্বর্ণ ব্যবসায়ী এবং এ খাতের শ্রমিক-শিল্পীদের অংশীদারির মাধ্যমে স্বর্ণ খাতের সুষ্ঠু ও টেকসই বিকাশে সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি হবে।

বৈধপথে স্বর্ণ আমদানি বাড়লে দেশের রাজস্ব আয় বেশি হয়। এটি নিঃসন্দেহে আশাব্যঞ্জক। সব স্বর্ণ বৈধভাবে আসবে, এটি আশা করাও সঙ্গত নয়। অনুমোদিত ডিলারের মাধ্যমে আমদানির বিধান রেখে স্বর্ণ নীতিমালা পাস হওয়ার পরও অবৈধভাবে স্বর্ণ আমদানি কিংবা চোরাইপথে স্বর্ণ আসা কমেনি। অলংকার প্রস্তুত করে রপ্তানির সুযোগও রাখা হয়েছে। এখন স্টক মার্কেট ও বন্ড মার্কেটেও স্বর্ণ কেনাবেচা করা যায়। শেয়ারবাজারকে দীর্ঘমেয়াদে চাঙা রাখতে স্বর্ণ বড় প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। পুঁজিবাজার পড়ে গেলে স্বর্ণের দাম পড়ে যায় না। এ ধরনের অনেক দৃষ্টান্ত আছে।  যেমন ২০০৮-০৯ অর্থনৈতিক বছরে যখন সেনসেক্স প্রায় ৩৮ শতাংশ কমে যায়, তখন স্বর্ণ থেকেই ২৪ দশমিক ৫৮ শতাংশ রিটার্ন পাওয়া সম্ভব হয়েছিল। একই রকমভাবে ২০১২-১৩তে যখন নিফটি সমতল হয়ে পড়েছিল বা পতনোম্মুখ ছিল, তখনও ভারতে স্বর্ণের দাম দ্রুত বেড়ে গিয়েছিল। ২০০৮ সালের আর্থিক মন্দায় স্বর্ণের দাম কমলেও বছরের শেষে তা সাড়ে পাঁচ শতাংশ বেড়ে যায়।

পুঁজিবাজারের পতনের সময় সাধারণ বিনিয়োগকারীরা স্বর্ণের অস্বাভাবিক মূল্য হ্রাস যতটা হবে ভেবেছিলেন, দেখা গেছে তার চেয়ে অনেক কমই হয়েছে। যেখানে শেয়ারের লাভবান হওয়ার সহায়ক অর্থনৈতিক উন্নতি ও স্থিতি, সেখানে অর্থনৈতিক অস্থিরতার ও অনিশ্চয়তার কালেও স্বর্ণে লাভবান হওয়া গেছে।

ঝুঁকির প্রতিবন্ধক হিসেবে স্বর্ণ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ব্যবহার হয়ে আসছে। বাজারের ওপর অনিশ্চয়তার চূড়ান্ত অভিঘাত নেমে এলে যে কোনো ঘটনাই ঘটতে পারে। কিন্তু স্বর্ণের একাধিক ভূমিকা পালনের পাশাপাশি শেয়ারের খামখেয়ালির কথা মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বিশেষজ্ঞরা স্বীকার করছেন, যে কোনো পোর্টফোলিওতে যথেষ্ট পরিমাণ স্বর্ণ মজুত রাখাই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ। ভারতে স্বর্ণ কেনার বিকল্প হিসেবে সভরিন গোল্ড বন্ড (এসজিবি) প্রকল্প চালু আছে। স্টক এক্সচেঞ্জে এসজিবি বিক্রি বা ট্রেড করা যায়। বিনিয়োগকারীরা স্বর্ণের বাজারদরের ভিত্তিতে রিটার্ন পান।

স্বর্ণ আমদানি নীতিমালা কার্যকর হলে দেশে স্বর্ণ আমদানি বাড়বে। তখন আমাদের পুঁজিবাজারেও স্বর্ণের বন্ড ছাড়া যেতে পারে। অবৈধভাবে স্বর্ণ (চোরাচালান) বন্ধে আমদানি নীতিমালা সহায়ক হবে বলেই আমাদের প্রত্যাশা।