বিদায়ী অর্থবছর

আমদানি-রপ্তানি প্রবৃদ্ধিতে ধস নামে শেষ দুই প্রান্তিকে

নিজস্ব প্রতিবেদক: ডলার সংকট ও রিজার্ভ ধরে রাখার জন্য গত বছর সরকার কৃচ্ছ সাধন নীতি বেছে নেয়। এলসি খোলায় কড়াকড়ি আরোপ ছাড়াও লাগাম টানা হয় উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ ব্যয়ে। এতে বিদায়ী অর্থবছর আমদানি কমেছে প্রায় ১৬ শতাংশ। যদিও রপ্তানি আয় কিছুটা বেড়েছে। তবে সার্বিকভাবে অর্থনীতির জন্য অস্বস্তিকর সময় কেটেছে পুরো অর্থবছর জুড়েই, যা দ্বিতীয়ার্ধে (জানুয়ারি-জুন) প্রকট আকার ধারণ করে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, বিদায়ী অর্থবছর রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ছয় শতাংশের কিছু বেশি। তবে জানুয়ারি-জুন সময়ে তা ন্যূনতম পর্যায়ে নেমে যায়। যদিও অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) বেশ ভালো প্রবৃদ্ধি ছিল রপ্তানিতে। অন্যদিকে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) আমদানিতে বেশ ভালো প্রবৃদ্ধি হয়। তবে দ্বিতীয় প্রান্তিকেই (অক্টোবর-ডিসেম্বর) আমদানি প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক অবস্থায় নামে। তৃতীয় প্রান্তিক (জানুয়ারি-মার্চ) ও শেষ প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) তা আরও খারাপ হয়।

২০২২-২৩ অর্থবছর ৫২ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়। আগের অর্থবছর এর পরিমাণ ছিল ৪৯  দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ছয় দশমিক ২৪ শতাংশ। তবে প্রান্তিকভিত্তিক চিত্র বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রথম প্রান্তিকে রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি ছিল ১১ দশমিক ৮৯ শতাংশ ও দ্বিতীয় প্রান্তিকে ১০ দশমিক ৩৩ শতাংশ। তৃতীয় প্রান্তিকে এ প্রবৃদ্ধি নামে মাত্র দুই শতাংশ ও শেষ প্রান্তিকে দুই দশমিক ০৬ শতাংশে।

এদিকে বিদায়ী অর্থবছর আমদানি হয় ৬৯ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। ২০২১-২২ অর্থবছর এর পরিমাণ ছিল ৮২ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ আমদানি ব্যয়ে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ। এর মধ্যে প্রথম প্রান্তিকে আমদানি ব্যয়ে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি ছিল। ওই সময় ১১ দশমিক ৭০ শতাংশ আমদানি প্রবৃদ্ধি হয়। দ্বিতীয় প্রান্তিকেই তা ১৩ দশমিক ২৪ শতাংশ ঋণাত্মক হয়। তৃতীয় প্রান্তিকে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি আরও খারাপ অবস্থায় যায়, যা ছিল ২৯ দশমিক ৯২ শতাংশ। আর শেষ প্রান্তিকে ২৫ দশমিক ৮২ শতাংশ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

সূত্রমতে, এলসি খোলায় গত বছরের শুরু থেকেই সরকার কড়াকড়ি আরোপ করে। বিশেষত বিলাস দ্রব্যের আমদানি কঠোর করা হয়। তবে ডলার সংকট ও সরকারের নিয়ন্ত্রণের কারণে প্রায় সব ধরনের এলসি খোলাই গত অর্থবছর কমেছে। এর মধ্যে শিল্পের কাঁচামাল, মূলধনি যন্ত্রপাতি ও ভোগ্যপণ্যের এলসিও কমেছে। আবার এলসি স্যাটেলমেন্টও কমেছে এ সময়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, গত অর্থবছর প্রথম প্রান্তিকে এলসি খোলায় ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি ছিল ছয় দশমিক ৯৬ শতাংশ, দ্বিতীয় প্রান্তিকে ৩৬ দশমিক ১৫ শতাংশ, তৃতীয় প্রান্তিকে ২৭ দশমিক ৪২ শতাংশ ও শেষ প্রান্তিকে ১৪ দশমিক ০৩ শতাংশ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়। আর প্রথম প্রান্তিকে এলসি স্যালেটমেন্টে ৩০ দশমিক ২৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়। তবে দ্বিতীয় প্রান্তিকে ১০ দশমিক ১৯ শতাংশ ঋণাত্মক, তৃতীয় প্রান্তিকে ২৬ দশমিক ৫২ শতাংশ ও শেষ প্রান্তিকে ৪৫ দশমিক ৯১ শতাংশ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়।