নিজস্ব প্রতিবেদক: কাতারভিত্তিক আল জাজিরা টেলিভিশনে ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার্স মেন’ শিরোনামে সম্প্রচারিত তথ্যচিত্র নিয়ে হাইকোর্ট তার রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেছেন, রাষ্ট্রপ্রধান, সরকারপ্রধান ও সেনাবাহিনীপ্রধানের বিরুদ্ধে যে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে, তার মাধ্যমে এ মাটির সন্তান হিসেবে আমরা বিস্মিত ও অপদস্থ হয়েছি। কিন্তু গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে প্রচারিত সংবাদটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে সরাতে সরকারের যথাযথ দায়িত্বশীলদের পক্ষ থেকে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ দেখিনি।
গতকাল বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চের স্বাক্ষরের পর প্রকাশিত ৩৭ পৃষ্ঠার রায়ে এ পর্যবেক্ষণ দেয়া হয়।
হাইকোর্টের রায়ে ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম কর্তৃপক্ষ যেন প্রতিবেদনটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে অনলাইন থেকে সরিয়ে ফেলে এবং পুনরায় আপলোড না করে, সে বিষয়ে অনুরোধ জানাতে বলা হয়েছে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) তাৎক্ষণিকভাবে এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলেছেন আদালত।
বাংলাদেশ থেকে আল জাজিরার সম্প্রচার বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে গত ৮ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। একই সঙ্গে রিটে সংবাদমাধ্যমটির সম্প্রচারিত ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার্স মেন’ প্রতিবেদনটি ইউটিউব, টুইটার, ফেসবুকসহ সব অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে সরানোর নির্দেশনা চাওয়া হয়। ব্যারিস্টার এনামুল কবীর ইমন রিটটি দায়ের করেন। রিট আবেদনে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সচিব, তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিটিআরসি চেয়ারম্যান ও পুলিশের আইজিসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়।
ওই রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বাংলাদেশে আল জাজিরা টেলিভিশন নেটওয়ার্কের সম্প্রচার বন্ধে ও ভিডিও সরাতে হাইকোর্ট কোনো আদেশ দিতে পারেন কি না, সে বিষয়ে মতামত জানাতে ছয়জন অ্যামিকাস কিউরি (আদালতের বন্ধু) নিয়োগ দেন হাইকোর্ট।
পরে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি আল জাজিরা টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন’ তথ্যচিত্রটি সব অনলাইন ও যোগাযোগমাধ্যম থেকে সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। বিটিআরসিকে এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলেন আদালত। তবে বাংলাদেশে আল জাজিরার সম্প্রচার বন্ধের বিষয়ে কোনো আদেশ দেননি হাইকোর্ট।
প্রসঙ্গত, গত ১ ফেব্রুয়ারি ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার্স মেন’ শিরোনামে আল জাজিরায় একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন সম্প্রচারিত হয়। ওই প্রতিবেদনে সরকার ও সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীও এই প্রতিবেদনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে। এক বিবৃতিতে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, আল জাজিরার প্রতিবেদনটির মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা হচ্ছে। দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করার অসৎ উদ্দেশ্যে এ প্রতিবেদন করা হয়েছে। যারা আগেও দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র করেছে, তারাই এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে।