আমাদের উন্নয়নের ক্ষুধা কখনও শেষ হবে না

 

এম মান্নান: আমাদের উন্নয়নের ক্ষুধা কখনও শেষ হবে না। অর্থাৎ এক ধাপ উন্নয়ন আরেক ধাপ উন্নয়ন-আকাক্সক্ষার জš§ দেয়। যেমন এক পদ্মা সেতু আরও পদ্মা সেতুর ভাবনা জুগিয়েছে। কারণ দেশি-বিদেশি নানা ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর অমিত শক্তি দিয়ে আমরা প্রথম পদ্মা সেতু তৈরি করতে পেরেছি। এভাবে বর্তমান সরকারের গত ১৪ বছরের টানা শাসনামলে অনেকগুলো মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। কয়েকটি শেষও হয়েছে। তবে আমরা আরও মেগা প্রকল্প নিতে চাই। অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে শেষ বলে কোনো কথা নেই। এখানে রাজনৈতিক বিবেচনা বলতে কোনো কথা নেই। গণতান্ত্রিক সরকার, তাই যা করা হয় সবই জনগণের জন্য। আমরা একটি টানেল করেছি, আরও টানেল তৈরির কথা ভাবছি। আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধি, মাথাপিছু আয় সবই বাড়ছে। এসব ক্ষেত্রে উন্নয়নের জন্য যা কিছু করা হচ্ছে, সবই বিভিন্ন ধরনের প্রকল্পের মাধ্যমেই করা হচ্ছে। আমরা চাচ্ছি বেশ কিছু মেগা প্রকল্পের সফল সমাপ্তি ঘটুক।

আমাদের উদ্যোগের মধ্যে নির্বাচন বড় কথা নয়। কেননা পরীক্ষা তো প্রতিনিয়তই হচ্ছে। আমাদের ছেলেমেয়েরা পরীক্ষা দিচ্ছে না? খেলোয়াড়রা খেলার মাঠে প্রতিনিয়ত পরীক্ষা দিচ্ছে না? কাজেই নির্বাচন হলো সাংবিধানিক প্রক্রিয়া। সেটা যখন সময় আসবে তখন হবে। এজন্য যে মেগা প্রকল্প শেষ করতে হবে তড়িঘড়ি করে, সেটি সঠিক কথা নয়।

আমরা এখন জানি, চলতি বছরেই আমাদের কয়েকটি মেগা প্রকল্প শেষ হয়ে যাবে। এজন্য এডিপিতেও (বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি) পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে রাজধানীবাসীর দীর্ঘদিনের অপেক্ষা শেষে গত অক্টোবরে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু হয়েছে। ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত এ প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ৯৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ। জুলাই থেকে মতিঝিল পর্যন্ত পরীক্ষামূলকভাবে রেল চালানো হচ্ছে। মেট্রোরেলের প্রথম পর্যায়ে (উত্তরা-আগারগাঁও) শতভাগ কাজ শেষ। এছাড়া দ্বিতীয় পর্যায়ে (আগারগাঁও-মতিঝিল) পূর্ত কাজের ৯৫ দশমিক ২০ শতাংশ শেষ হয়েছে। তৃতীয় পর্যায়ে (মতিঝিল-কমলাপুর) পূর্ত কাজ হয়েছে সাড়ে সাত শতাংশ।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণকাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে। অক্টোবরে এই টার্মিনালের উদ্বোধন হয়েছে। একই সঙ্গে বিমানবন্দর থেকে রাজধানীর ওপর দিয়ে কুতুবখালী পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের একাংশ একই সময়ে খুলে দেয়া হবে। এছাড়া রেলের চারটি বড় প্রকল্পও ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন। ইতোমধ্যে ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত  ট্রেন চলাচল চালু হয়েছে। খুলনা থেকে মোংলা পর্যন্ত ৬৪ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণের কাজ প্রায় ৯০ শতাংশ শেষ হয়েছে। আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যে এই রেলপথ খুলে দেয়া হতে পারে। এছাড়া ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের পথে আখাউড়া থেকে লাকসাম পর্যন্ত প্রায় ৭২ কিলোমিটার ডাবল রেলপথের কাজও শেষ হয়েছে। এই অংশ চালু হলে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত পুরো পথই ডাবল লাইন হয়ে যাবে। ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু ও ভাঙ্গা হয়ে যশোর পর্যন্ত রেলপথের অগ্রগতি এখন দৃশ্যমান। এই প্রকল্পের অর্ধেকের বেশি কাজ শেষ হয়েছে। ভাঙ্গা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে মাওয়া পর্যন্ত পরীক্ষামূলক ট্রেনও চলাচল করেছে। এছাড়া রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যে পুরোদমে ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে যাবে। এখন ৬৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে এ কেন্দ্রে।

চলতি অর্থবছর দুই লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকার এডিপির মধ্যে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৭৫ হাজার ৯৪৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা। সদ্যসমাপ্ত অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৬১ হাজার ৮১০ কোটি ২১ লাখ টাকা। তুলনামূলকভাবে বরাদ্দ বেড়েছে ১৪ হাজার ১৩৪ কোটি ৪১ লাখ টাকা। এছাড়া শিক্ষায় ২৯ হাজার ৮৮৯ কোটি ১২ লাখ টাকা, গৃহায়ন ও কমিউনিটি সুবিধাবলিতে ২৭ হাজার ৪৫ কোটি ৬৫ লাখ টাকা, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়নে ১৮ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা, স্বাস্থ্যে ১৬ হাজার ১৬ হাজার ২০৪ কোটি টাকা এবং কৃষিতে ১০ হাজার ৭০৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। অন্যান্য খাতের মধ্যে সাধারণ সরকারি সেবায় দুই হাজার ১১৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা এবং প্রতিরক্ষায় এক হাজার ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। জনশৃঙ্খলা ও সুরক্ষায় তিন হাজার ৪৩৬ কোটি ২৮ লাখ টাকা, শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবায় পাঁচ হাজার ৩৬২ কোটি ২২ লাখ টাকা, পরিবেশ-জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ খাতে আট হাজার ৯৯৫ কোটি ২১ লাখ টাকা, ধর্ম-সংস্কৃতি ও বিনোদনে দুই হাজার ২৯০ কোটি ২০ লাখ টাকা, বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তিতে পাঁচ হাজার ৩২১ কোটি ৩৭ লাখ টাকা এবং সামাজিক সুরক্ষা খাতে প্রস্তাব করা হয়েছে তিন হাজার ৩১৮ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। এসব খাতে মোট বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে দুই লাখ ৫৪ হাজার ৯১৩ কোটি ১৮ লাখ টাকা। এগুলো সবই সরকারি বিনিয়োগ। এখানে বৈদেশিক ঋণের অংশীদারিত্বও থাকবে।

তবে সরকার চায় সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব বৃদ্ধি পাক। এজন্য চলতি অর্থবছরের এডিপিতে পাইপলাইনে নতুন ১৩টি মেগা প্রকল্প রাখা হয়েছে। এখানে আছে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া সম্ভাব্য স্থানে দ্বিতীয় পদ্মা সেতু ও মেট্রোরেল-২ নির্মাণ করার মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। এসব বাস্তবায়নে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে এক লাখ ৫১ হাজার ৯৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। তবে চলমান ও নতুন মিলে মোট ৭৯টি উন্নয়ন প্রকল্প যুক্ত হয়েছে পিপিপির তালিকায়। সবগুলো মিলে বাস্তবায়নে প্রয়োজন হবে প্রায় দুই লাখ ৩৬ হাজার ৮২১ কোটি টাকা। এডিপির তালিকায় থাকা পিপিপি প্রকল্পের মধ্যে ১৫টি রয়েছে প্রকিউরমেন্ট (কেনাকাটা) পর্যায়ে। এছাড়া চুক্তি স্বাক্ষর-পরবর্তী শর্ত প্রতিপালনাধীন পর্যায়ে রয়েছে সাতটি, অপারেশনাল পর্যায়ে দুটি, বিস্তারিত সমীক্ষা চলছে ২৭টির এবং চুক্তি স্বাক্ষর পর্যায়ে রয়েছে একটি প্রকল্প। আরও আছে নির্মাণাধীন পর্যায়ে সাতটি, অপারেশনাল পর্যায়ে একটি, পরামর্শক নিয়োগ পর্যায়ে পাঁচটি এবং নীতিগত অনুমোদন-পরবর্তী প্রাথমিক পর্যায়ে আছে ১০টি উন্নয়ন প্রকল্প। পিপিপির তালিকায় থাকা ১৩টি নতুন মেগা প্রকল্প হলোÑদ্বিতীয় পদ্মা সেতু তৈরি করা হবে প্রায় সাড়ে ৫ কিলোমিটার। এটির প্রস্থ হবে ১৮ দশমিক ১ মিটার। দুই প্রান্তে সংযোগ সড়ক হবে ১৫ কিলোমিটার। এছাড়া নদীশাসন কাজ দুই প্রান্ত মিলে ১৮ দশমিক ৪ কিলোমিটার। এটির সম্ভাব্যতা সমীক্ষার কাজও শুরু হয়েছে।

এছাড়া মিরসরাইয়ে দ্বিতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরিতে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ছয় হাজার ২৪৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা। কমলাপুর মাল্টিমোডাল হাবের ব্যয় হবে ২২ হাজার ৫৭ কোটি টাকা। সার্কুলার রেলওয়ে লাইন নির্মাণে সাড়ে আট হাজার কোটি টাকা। চট্টগ্রামে বে-টার্মিনাল তৈরিতে ১৭ হাজার ৭৫৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে পানি সরবরাহে ১৫ হাজার কোটি টাকা। ঢাকা ইস্ট ওয়েস্ট এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে ১৭ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা। মেট্রোরেল লাইন-২ নির্মাণে ২৯ হাজার ৫৭১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ইমপ্রুভমেন্ট অব ঢাকা (জয়দেবপুর)-ময়মনসিংহ হাইওয়ে এক্সপ্রেসওয়েতে তিন হাজার ৩৫৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা। কনস্ট্রাকশন অব আউটার রিংরোডের ব্যয় ১২ হাজার ৯৯৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা। আপগ্রেডেশেন অব গাবতলী-সাভার-নবীনগর চার লেন এক্সপ্রেসওয়েতে দুই হাজার ৮৯০ কোটি টাকা এবং খুলনা খানজাহান আলী বিমানবন্দর উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে দুই হাজার ৫৫০ কোটি টাকা। এসব প্রকল্প নীতিগত অনুমোদন এবং সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পর্যায়ে আছে।

চলতি অর্থবছরের এডিপিতে যুক্ত হওয়া পিপিপি প্রকল্পগুলোর মধ্যে আরও কয়েকটি হলোÑহাতিরঝিল-রামপুরা-বনশ্রী আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ-আমুলিয়া-ডেমরা হাইওয়ে সড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ, কক্সবাজারে সমন্বিত পর্যটন গ্রাম তৈরি এবং ঝিলমিল আবাসিক এলাকায় নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের জন্য সুউচ্চ আবাসিক ভবন নির্মাণ প্রকল্প। এছাড়া পূর্বাচল নতুন শহরে পানি সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নয়ন, পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে সুউচ্চ আবাসিক ভবন নির্মাণ এবং চট্টগ্রামের নাসিরাবাদে আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন আবাসিক ভবন নির্মাণ প্রকল্প। আরও আছে সিলেটে পাঁচ তারকা মানের হোটেল ও পর্যটন কমপ্লেক্স তৈরি, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের পরিচালন ও ব্যবস্থাপনা, ধীরাশ্রম রেলওয়ে স্টেশন-সংলগ্ন একটি নতুন কনটেইনার ডিপো তৈরি, চট্টগ্রামে মেডিকেল কলেজ ও আধুনিক রেলওয়ে হাসপাতাল নির্মাণ এবং নারায়ণগঞ্জ শহরে বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট সিস্টেম চালুকরণ প্রকল্প।

আমাদের ভবিষ্যৎ তালিকায় চলতি অর্থবছরের এডিপিতে বৈদেশিক ঋণপ্রাপ্তির জন্য রাখা আছে ১৫৪টি উন্নয়ন প্রকল্প। এগুলোর মধ্যে উচ্চ অগ্রাধিকারে আছে ১২৫টি, মধ্যম অগ্রাধিকারে ২৮টি এবং নিম্ন অগ্রাধিকারে একটি প্রকল্প। এগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে দুই লাখ ৪০ হাজার ৪৬৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে বৈদেশিক ঋণ দরকার এক লাখ ৩২ হাজার ৮২৯ কোটি টাকা। বৈদেশিক অর্থায়নের জন্য তালিকায় থাকা এ প্রকল্পগুলোকে আমরা অগ্রাধিকার দিচ্ছি। সরকারের অগ্রাধিকারের সঙ্গে উন্নয়ন-সহযোগীদের অগ্রাধিকার মিলে গেলে তারা ঋণ দেয়ার জন্য উৎসাহী হবে। তাদের সামনে আমাদের চাওয়াটা আমরা তুলে ধরেছি। এখন এগুলোর মধ্য থেকে কতটা প্রকল্পে ঋণ পাওয়া যাবে, সেটির জন্য অপেক্ষা করতে হবে। বৈদেশিক সাহায্য পাওয়ার সুবিধার্থে অনুমোদনহীন এসব নতুন প্রকল্পের জন্য সব ধরনের ঋণই সম্ভাব্য উৎস হিসেবে ধরা হয়েছে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সহজ শর্তের ঋণ হিসেবে বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এবং জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থাকে (জাইকা) ধরা হয়েছে। পাশাপাশি আছে অনমনীয় শর্তের চীন, ভারত, এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) এবং কোরিয়াসহ বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় উন্নয়ন-সহযোগী। এসব প্রকল্পের মধ্যে সাধারণ সরকারি সেবা খাতে প্রকল্প রয়েছে চারটি। এছাড়া জনশৃঙ্খলা ও সুরক্ষায় পাঁচটি, শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবায় পাঁচটি, কৃষিতে ১১টি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানিতে ২২টি এবং পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে রয়েছে ২৭টি প্রকল্প। আরও আছে স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন খাতে সাতটি, পরিবেশ-জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদে ১২টি, গৃহায়ন ও কমিউনিটিতে ৩২টি, স্বাস্থ্যে ছয়টি, ধর্ম-সংস্কৃতি ও বিনোদনে চারটি এবং শিক্ষায় ১৩টি প্রকল্প। এছাড়া বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তিতে তিনটি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে তিনটি এবং সামাজিক সুরক্ষা খাতে রয়েছে তিনটি প্রকল্প।

এই তালিকায় থাকা সাসটেইনেবল অ্যান্ড ইন্টিগ্রেটেড রুরাল ট্রান্সপোর্ট প্রকল্পটির জন্য মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে বৈদেশিক ঋণ হিসেবে ১০ হাজার কোটি এবং সরকারি তহবিল থেকে তিন হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের লক্ষ্য রয়েছে। ঋণ পাওয়া গেলে ২০২৩ সালের জুলাই থেকে শুরু করে ২০২৮ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। এছাড়া বাপবিবোর বৈদ্যুতিক বিতরণ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন ও ক্ষমতা বর্ধন (চট্টগ্রাম-সিলেট বিভাগ) প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে আট হাজার ৯৯৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা। এর মধ্যে বৈদেশিক ঋণ থেকে পাঁচ হাজার ৫২১ কোটি এবং সরকারি তহবিল থেকে এক হাজার ৬২৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা ব্যয় হবে। ঋণ মিললে ২০২৭ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এটি বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে। উচ্চ অগ্রাধিকারে থাকা বাপবিবোর বৈদ্যুতিক বিতরণ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন ও ক্ষমতা বর্ধন (রাজশাহী-রংপুর বিভাগ) প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে পাঁচ হাজার ৫৫৩ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে বৈদেশিক ঋণ থেকে তিন হাজার ৬৩৯ লাখ ৯৯ হাজার টাকা খরচের লক্ষ্য রয়েছে। উচ্চ অগ্রাধিকারে থাকা আরও কয়েকটি প্রকল্প হলোÑ চট্টগ্রাম বন্দর একসেস সড়ক উন্নয়ন, ভাঙ্গা-যশোর-বেনাপোল মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীতকরণ এবং চট্টগ্রাম-দোহাজারী মিটারগেজ রেলপথকে ডুয়েলগেজ রেলপথে রূপান্তরকরণ প্রকল্প। এছাড়া রয়েছে প্রোগ্রাম অন এগ্রিকালচার অ্যান্ড রুরাল ট্রান্সফরমেশন ফর নিউট্রিশন এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ অ্যান্ড রেজিল্যান্স ইন বাংলাদেশ প্রকল্প। আরও আছে কক্সবাজার জেলার মাতারবাড়ীতে ৫০ মেগাওয়াট গ্রিড টাইড সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প, তিনটি পার্বত্য জেলায় বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তন-সহিঞ্চু নগররায়ণের জন্য ভূ-তাত্ত্বিক তথ্য ব্যবহার এবং ট্রান্সপোর্ট মাস্টারপ্ল্যান অ্যান্ড প্রিলিমিনারি ফিজিবিলিটি স্টাডি ফর আরবান মেট্রোরেল ট্রানজিট কনস্ট্রাকশন অব চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এরিয়া প্রকল্প। এসব বৃহৎ কার্যক্রম বাস্তবায়নে প্রয়োজন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং প্রশাসনিক ধারাবাহিকতা। কয়েক বছর ধরে পরিকল্পিতভাবে যেভাবে দেশকে আওয়ামী লীগ সরকার এগিয়ে নিচ্ছে, সেটি আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ ও সম্ভাবনা দুটো একসঙ্গে কাজে লাগিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকারের ধারাবাহিকতার বিকল্প দেখছি না।

মন্ত্রী

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়