কাজী সালমা সুলতানা: সেদিন ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে সাফিয়া খাতুন, সুফিয়া আহমেদ, রওশন আরা বাচ্চু ও শামসুন্নাহার আহসানের নেতৃত্বে কয়েকটি দল রাস্তায় নামে। নারীদের প্রথম দলটির নেতৃত্ব দিয়েছেন সাফিয়া খাতুন। এসব দলে ছিলেন সারা তৈফুর, সোফিয়া করিম, সুফিয়া আহমেদ, হালিমা খাতুন, চমেনআরা, মনোয়ারা ইসলাম, আমেনা আহমেদ, জুলেখা নুরী, সুরাইয়া প্রমুখ। ছেলেদের দল বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ তাদের ধরে ট্রাকে তুলছিল; ফলে তারা ব্যারিকেড ভাঙতে পারেনি। ব্যারিকেড ভাঙার কাজ করেছে ছাত্রীরাই। সেদিন পুলিশের লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেলে অনেক ছাত্রী আহত হন। আমতলা থেকে মেডিকেল কলেজ গেট পর্যন্ত রওশন আরা বাচ্চু পুলিশের লাঠির আঘাতে এবং সুফিয়া ইব্রাহিম, সারা তৈফুরসহ আটজন মেয়ে পুলিশ কর্তৃক ছোড়া ইটের আঘাতে মারাত্মকভাবে আহত হন। অনেক মেয়েকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের ভ্যানে নিয়ে যাওয়া হয়। একর্পযায়ে পুলিশ নির্বিচারে ছাত্রদের ওপর গুলি করে। ২১ ফেব্রুয়ারি এ বর্বরতার খবর গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়লে ঢাকাসহ সারা দেশে পরদিন থেকে বিক্ষোভ প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠে। ঢাকার অভয় দাস লেনে অনুষ্ঠিত এক সভায় বেগম সুফিয়া কামাল, নূরজাহান মুরশিদ, দৌলতুন্নেসা খাতুন প্রমুখের নেতেৃত্বে অসংখ্য নারী ছাত্রদের মিছিলের ওপর গুলি চালানোর প্রতিবাদে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন এবং নিন্দা প্রস্তাব আনেন। ২৮ ফেব্রুয়ারি বেগম নূরজাহান মুরশিদ ও লায়লা সামাদের নেতেৃত্বে আহূত এক সভায় মিছিলে গুলি চালানোর প্রতিবাদে নিন্দা প্রস্তাব আনা হয়। নারায়ণগঞ্জরে হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা মমতাজ বেগম রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনকে স্থানীয় পর্যায়ে সংগঠিত করেন। ২৯ ফেব্রুয়ারি তাকে গ্রেপ্তার করে কোর্টে আনা হলে সর্বস্তরের জনগণ কোর্ট প্রাঙ্গণে সমবেত হয় এবং বিনাশর্তে তার মুক্তি দাবি করে। তখন তাকে নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকায় স্থানান্তর করতে চাইলে জনতা চাষাঢ়ার কাছে রাস্তায় গাছ ফেলে ব্যারিকেড সৃষ্টি করে। পুলিশ কোনোভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে না পেরে ঢাকা থেকে আরও বাহিনী নারায়ণগঞ্জে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করে। সন্ধ্যা পর্যন্ত চেষ্টা করেও কোনোভাবেই তাকে আনতে না পেরে পুলিশি লাঠিচার্জ করে। জনতা ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলে পুলিশ তাকে ঢাকায় নিয়ে আসতে সক্ষম হয়। কারাবন্দি অবস্থায় বন্ড দিয়ে কারাগার থেকে মুক্তি লাভে অস্বীকৃতি জানালে মমতাজ বেগমকে স্বামী তাকে তালাক দেন।
