আমেরিকান নাগরিকের মৃত্যুর মামলায় স্ত্রীর প্রেমিক গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক: স্ত্রীর ও তার প্রেমিকের মানসিক নির্যাতন সইতে না পেরে আত্মহত্যা করেছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত শেখ সোহেব সাজ্জাদ নামের যুক্তরাষ্ট্রের এক নাগরিক। গত ৩০ এপ্রিল বনানী ডিওএইচএসের মসজিদ রোডে শ্বশুরের বাড়িতে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি।
এই ঘটনায় গতকাল শুক্রবার রাজধানী ওয়ারী এলাকা থেকে সাজ্জাদের স্ত্রী সাবরিনা শারমিনের (৩০) প্রেমিক ও আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলার দুই নম্বর আসামী কাজী ফাহাদকে গ্রেপ্তার করেছে ক্যান্টনমেন্ট থানা পুলিশ। এই মামলায় এক নম্বর আসামি সাবরিনা পলাতক রয়েছে।
মামলার বাদী ও সাজ্জাদের ভাই শেখ সোহেল সায়াদ আহমেদ জানান, কাজী ফাহাদের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়ান সাবরিনা। এতে বাধা দেওয়ায় ফাহাদ ও সাবরিনা তার ভাইকে প্রতিনিয়ত মানসিক নির্যাতন করতেন। তাকে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দিয়েছেন তারা। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত-পূর্বক সাবরিনা ও ফাহাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তিনি।
সাজ্জাদের স্বজনরা জানান, সাজ্জাদ যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। তিনি বিশ্বের নামকরা অনলাইন মার্কেটপ্লেস অ্যামাজনে চাকুরি করতেন। তার বাবার নাম শেখ তৌফিক আহমেদ। তাদের বাড়ি ওয়ারীর ওয়ারস্ট্রিট রোডে। বনানীর ডিওএইচএসের শাখাওয়াত হোসেনের মেয়ে সাবরিনা শারমিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করতেন। সে দেশে সাজ্জাদ ও সাবরিনার পরিচয় হয় এবং ২০১৭ সালে তারা বিয়ে করেন। ২০১৮ সালের মে মাসে সাবরিনা একা দেশে ফিরে শ্বশুরবাড়ি ওয়ারীতে বসবাস শুরু করেন। ওই বাড়ির পাশের বাসার ভাড়াটে কাজী ফাহাদের সঙ্গে পরিচয় হয় সাবরিনার। এক পর্যায়ে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন তারা। সাজ্জাদ ও তার পরিবারের সদস্যরা বিষয়টি জেনে গেলে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য শুরু হয়। স্ত্রীকে ফাহাদের কাছ থেকে ফেরাতে না পেরে গত ১৬ মার্চ সাজ্জাদ দেশে ফেরেন।
এরপর বনানী ডিওএইচএসের মসজিদ রোডে বাবার বাসায় চলে যান সাবরিনা। সেখানেই স্ত্রীকে নিয়ে সাজ্জাদ বসবাস করছিলেন। এ সময় কৌশলে স্বামীর আমেরিকান পাসপোর্ট ও মোবাইল ফোন নিয়ে নানাভাবে মানসিক নির্যাতন করতেন সাবরিনা। পরবর্তীতে সেগুলো স্ত্রীর কাছ থেকে ফেরত পাননি সাজ্জাদ। এসব ফেরত না দিয়ে ১৫ এপ্রিল সাবরিনা বাসা থেকে চলে যান, পরবর্তী সময় বাসায় ফেরেননি। সাজ্জাদ ও তার শ্বশুর শাখাওয়াত সাবরিনা এবং কাজী ফাহাদের কাছে ফোন করে পাসপোর্ট ও ফোন ফেরত চান। কিন্তু তারা সেসব না দিয়ে সাজ্জাদের ওপর নানা ধরনের চাপ সৃষ্টি করেন। ৩০ এপ্রিল শ্বশুরের বাসায় সিলিং ফ্যানের সঙ্গে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন সাজ্জাদ। পরে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে সাবরিনা ও ফাহাদের বিরুদ্ধে ১ মে ক্যান্টনমেন্ট থানায় মামলা হয়।
ক্যান্টনমেন্ট থানার পরিদর্শক (তদন্ত) তাসলিমা আক্তার জানান, আজ শনিবার আসামি কাজী ফাহাদকে আদালতে হাজির করে রিমান্ড চাওয়া হবে। অপর আসামি সাবরিনাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।