নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর উত্তরা থেকে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ১১ কোটি ২৫ লাখ টাকা লুটের ঘটনায় আটজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ, উদ্ধার করা হয়েছে আরও দুই কোটি ৫৪ লাখ টাকা। এর আগে উদ্ধার করা হয়েছিল তিন কোটি ৮৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা। তাতে সব মিলিয়ে মোট ছয় কোটি ৪৩ লাখ ৪৮ হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ।
গতকাল রোববার রাজধানীর মিন্টো রোডে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, শনিবার রাতে ঢাকা ও সুনামগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ওই আটজনকে গ্রেপ্তার করেন তারা।
গত বৃহস্পতিবার সকালে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের এটিএম বুথে টাকা পৌঁছে দিতে যাওয়ার সময় তুরাগ এলাকায় বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থা মানি প্ল্যান্ট লিংক প্রাইভেট লিমিটেডের একটি মাইক্রোবাস আটকে চার ট্রাঙ্ক টাকা ছিনিয়ে নেয় একদল ডাকাত। ওই ট্রাঙ্কগুলোয় ব্যাংকের ১১ কোটি ২৫ লাখ টাকা ছিল বলে মানি প্ল্যান্টের তরফ থেকে সেদিন জানানো হয়। সেদিন দুপুর থেকে বিকালে খিলক্ষেত এলাকায় অভিযান চালিয়ে তিনটি ট্রাঙ্ক উদ্ধার করা হয়। সেখানে তিন কোটি ৮৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা ছিল।
ডিবি কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, শনিবার রাতে বনানী থেকে সানোয়ার হাসান নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেন তারা। তার কাছ থেকে এক কোটি ১৪ লাখ ৫১ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। পরে মিলন ওরফে ইমনকে গ্রেপ্তার করা হয় বনানী এলাকা থেকে। এরপর তার জোয়ার সাহারার বাসায় পাওয়া যায় আরও ৩২ লাখ ৪৭ হাজার ৫০০ টাকা।
মানি প্ল্যান্ট লিংকের গাড়ি ছিনতাইকারীদের কবলে পড়েছিল। উদ্ধারের পর মাইক্রোবাসটিকে নেয়া হয় তুরাগ থানায়।
আকাশ ও সাগর নামে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয় উত্তরা থেকে। তাদের বাসা থেকে এক কোটি সাত লাখ টাকা এবং ডাকাতির কাজে ব্যবহƒত প্রাইভেটকারটি জব্দ করা হয় বলে জানান হারুন।
এছাড়া গোয়েন্দা পুলিশের আরেকটি দল সুনামগঞ্জ এলাকায় অভিযান চালিয়ে ডাকাতিতে জড়িত থাকার অভিযোগে মো. বদরুল আলম, মো. মিজানুর রহমান, মো. সনাই মিয়া ও মো. এনামুল হক বাদশাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মাইক্রোবাসটি তারা ভাড়া নিয়েছিল সিলেটে যাওয়ার কথা বলে। ৯ মার্চ ভোর সাড়ে ৫টায় কুর্মিটোলা যাত্রীছাউনির সামনে গাড়িটি এলে তারা চালককে পেছনের সিট ঠিক করতে বলে। চালক পেছনে গেলে তার হাত-পা ও চোখ বেঁধে ফেলে গাড়িটির নিয়ন্ত্রণ নেয় তারা। পরে তারা ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের টাকা লুটের জন্য ডিওএইচএস এলাকায় ওত পেতে থাকে। আগের
তথ্যমতো নির্দিষ্ট নম্বরের ডাচ্-বাংলার গাড়ি আসতেই অনুসরণ করে তারা ওই লুটের ঘটনা ঘটায়। পরে টাকাসহ গাড়ি ৩০০ ফিট এলাকায় নিয়ে যায়। পথে পাঁচজনকে তারা নামিয়ে দেয়। দুই ট্রাঙ্ক টাকা বের করে তারা সেখানে দুটি চালের বস্তা এবং পাঁচটি ব্যাগ ভর্তি করে। সঙ্গে আর ব্যাগ না থাকায় তারা বাকি টাকা ফেলে রেখে চলে যায়। যাওয়ার সময় চালকের আসনে আরও একটি ব্যাগ তারা রেখে যায়।
হারুন বলেন, ওই গাড়ির চালক সুস্থ হয়ে টাকার ব্যাগটি নিজের কাছে নেয়। ট্রাংক থেকে অবশিষ্ট টাকা বের করে সে তার ভাইয়ের কাছে দেয়। পরে তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী তাদের বাসা থেকে টাকা উদ্ধার করা হয়।
ঘটনাটি পর্যালোচনায় দেখা যায়, তাদের ভাষ্যমতে, ১১ কোটি টাকা পরিবহনের সময় পাহারার জন্য অস্ত্রসহ কোনো গার্ড ছিল না। অধিকাংশ সময় তারা ওইভাবে টাকা পরিবহন করত। টাকা পরিবহনের সময় স্থানীয় থানাকেও তারা অবহিত করেনি।
এ ঘটনায় মানি প্ল্যান্টের পরিচালক (অপারেশন্স) আলমগীর হোসেন বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার অজ্ঞাতনামা ১০ থেকে ১২ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ১৩ এপ্রিল দিন রেখেছেন আদালত।
এক প্রশ্নের জবাবে গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ বলেন, ঘটনার দিন মানি প্ল্যান্টের কয়েকজন কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য আটক করা হয়েছিল। প্রয়োজন তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আবার ডাকা হবে।