সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: সমুদ্র ও অভ্যন্তরীণ নৌপথে আমদানিকৃত পণ্য পরিবহনে ব্যবহƒত হয় প্রায় দুই হাজার লাইটারেজ জাহাজ। এসব লাইটারেজ জাহাজে ডাল, গম, চিনি, চাল, ছোলা, সার, সিমেন্টের কিংক্লারসহ ভোগ্য ও শিল্পপণ্য পরিবাহিত হয়। সাম্প্রতিক সময়ে ডলার সংকটে আমদানির পরিমাণ ৫০ শতাংশের বেশি হ্রাস পেয়েছে। এতে জাহাজগুলোর আয় কমেছে। অন্যদিকে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় জাহাজ পরিচালনা ব্যয় বেড়েছে। ফলে লোকসান এড়াতে লাইটারেজ জাহাজ মালিকরা এগুলো স্ক্র্যাপ হিসেবে বিক্রি করে দিচ্ছেন। এরই মধ্যে গত দুই মাসে স্ক্র্যাপ ভাগাড়ে কাটা হয়েছে শতাধিক লাইটারেজ জাহাজ।
ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল ও জাহাজ মালিকদের তথ্যমতে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে গম, ভুট্টা, ডাল, চিনি, লবণসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্য, সার, সিমেন্ট ক্লিংকার, কয়লা, স্টোন ও রকমারি পণ্য নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে ভেড়ে বড় বড় মাদার ভ্যাসেল। সেখান থেকে ছোট লাইটারেজ জাহাজে করে পণ্য খালাস করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠানো হয়। মূলত দেশের পণ্য সরবরাহ নেটওয়ার্ক টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন খাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু দেশে আমদানি কমে যাওয়ায় লাইটারেজ জাহাজ খাতে সংকট দেখা দিয়েছে। পণ্য পরিবহনের ট্রিপ না পেয়ে প্রতিদিন কয়েকশ লইটার জাহাজ অলস বসে থাকে। এ কারণে দেশের পণ্য সরবরাহ নেটওয়ার্ক পুরোপুরি ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। যদিও কম খরচে পণ্য পরিবহনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে লাইটারেজ জাহাজগুলোর।
লাইটার জাহাজ ব্যবসায়ীরা বলেন, দেশের আমদানি কমে যাওয়ায় লাইটারেজ জাহাজ খাত গত কয়েক মাস ধরে সংকটে রয়েছে। জাহাজগুলো প্রয়োজনীয় ট্রিপ পাচ্ছে না। গড়ে দুই মাসে এক ট্রিপ ভাড়া না পাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এতে প্রতিদিন গড়ে শতাধিক জাহাজ অলস বসে থাকে। ফলে বসিয়ে বসিয়ে নাবিকদের বেতন-ভাতা জোগানোর পাশাপাশি ব্যাংকঋণের সুদ জোগাতে গিয়ে নাজুক অবস্থায় পড়েন বহু জাহাজ মালিক। এ কারণে অনেকটা বাধ্য হয়ে জাহাজ মালিকরা স্ক্র্যাপ ইয়ার্ডে জাহাজ বিক্রি করে দিয়ে টাকা ক্যাশ করে ফেলছেন। ভাড়া কমে যাওয়ার পাশাপাশি স্ক্র্যাপ লোহার দাম বেড়ে যাওয়ায় অভ্যন্তরীণ রুটে পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত লাইটার জাহাজ কেটে ফেলার হিড়িক পড়েছে। বিদ্যমান জাহাজ কাটা অব্যাহত থাকলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর পণ্য পরিবহনের জাহাজ পাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা। এতে পণ্য পরিবহনে সংকটে দেখা দেবে।
ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলের কর্মকর্তারা বলেন, লোকসান কমাতে স্ক্র্যাপ হিসেবে বিক্রি করে জাহাজ মালিকেরা লাভবান হচ্ছেন। সস্তায় কেনা স্ক্র্যাপ এখন চড়া দামে বিক্রি করে পুুঁজি ও মুনাফা তুলে নিচ্ছেন। কিন্তু প্রয়োজনের সময় পণ্য পরিবহনের কোনো জাহাজ পাওয়া যাবে না। তখন এই সেক্টরে আগের মতো সংকট তৈরি হবে। জাহাজভাড়া বেড়ে যাবে, বেড়ে যাবে পণ্যের পরিবহন খরচ, যার জোগান দিতে হবে সাধারণ ভোক্তাদের। বিষয়টি নিয়ে ব্যবসায়ীদের মাঝে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
বাংলাদেশ কার্গো ভ্যাসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও লাইটারেজ জাহাজের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলের (ডব্লিউটিসি) আহ্বায়ক মোহাম্মদ নুরুল হক বলেন, আমদানি কমে যাওয়ায় অনেক জাহাজ অলস বসে আছে। আর পরিচালন খরচ বেড়ে যাওয়ায় ব্যয় বেড়েছে। এতে লোকসান এড়াতে একের পর এক জাহাজ কেটে ফেলা হচ্ছে। এই সেক্টরকে রক্ষা করার জন্য যেভাবে পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া বা যে ধরনের পদক্ষেপ নেয়া দরকার ছিল, তা না করায় সেক্টরটি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।