মফিজ জোয়ার্দ্দার, চুয়াডাঙ্গা: চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা ভেটেরিনারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের জরাজীর্ণ ভবন ও জনবল সংকটে শিক্ষা কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সমস্যা সমাধানের আবেদন জানালেও এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।
ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা যায়, আলমডাঙ্গা উপজেলা শহর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে কুমারী ইউনিয়নে তৎকালীন জমিদার শৈলেন্দ্রনাথ সাহার বাড়িতে ১৯৭৮ সালে ১০ দশমিক চার একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয় ভেটেরিনারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট। সে সময় ডেনমার্ক সরকারের সহযোগিতায় দুই কোটি ৬৮ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয় অবকাঠামো। কিন্তু তারপর এ যাবৎকাল ওই প্রতিষ্ঠানটিতে একটি ইটও গাঁথা হয়নি। পুরোনো একটি প্রশাসনিক ভবন, ৩০০ আসনের জরাজীর্ণ মিলনায়তন, পাঁচ কক্ষবিশিষ্ট শিক্ষায়তন ও প্রাণী হাসপাতাল, ৩৯ কক্ষবিশিষ্ট দ্বিতীয় ও তৃতীয়তলা ছাত্রাবাসসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এ ইনস্টিটিউটটি।
বর্তমানে এখানে অবস্থান করার মতো পরিবেশ নেই। এ প্রতিষ্ঠানে রয়েছেন অধ্যক্ষ। ছয়জন সহকারী অধ্যাপক থাকার কথা থাকলেও আছেন তিনজন। ভেটেরিনারি সার্জনের দুটি পদই খালি। একজন প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা, ছয়জনের মধ্যে দুজন প্রভাষক, একজন স্টেনোগ্রাফার, একজন সহকারী লাইব্রেরিয়ান, একজন ডেইরি টেকনিশিয়ান, একজন মেকানিক, একজন ড্রাইভার, একজন মিলকার, একজন ড্রেসার, একজন হসপিটাল অ্যাটেনডেন্ট, একজন এনিমেল অ্যাটেনডেন্ট, একজন ডেইরি অ্যাটেনডেন্ট, একজন পোলট্রি অ্যাটেনডেন্ট, দুজন মালীর পদ খালি রয়েছে। সূত্র আরও জানায়, বর্তমানে প্রি-সার্ভিস প্রশিক্ষণরত ছাত্রছাত্রী রয়েছে ১৮৫ জন ও ইনসার্ভিস মেকআপ প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন ২০ জন ছাত্রছাত্রী।
প্রশিক্ষণার্থী পার্থ ভট্টাচার্য জানান, নানা সমস্যার মধ্যে তাদের ছাত্রাবাসে থাকতে হচ্ছে। প্রত্যেকটি কক্ষে প্লাস্টার খসে পড়ছে। একটি কক্ষে পাঁচ-ছয়জন করে থাকতে হচ্ছে। কক্ষের জানালা ও কাচ ভাঙা। গোসলখানার মান ভালো না। আবাসন ব্যবস্থার কারণে গোসলখানার সংখ্যা বাড়ানোর প্রয়োজন থাকলেও সেটা করা হয়নি। তাছাড়া প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে কক্ষগুলোয় যে বৈদ্যুতিক পাখাগুলো লাগানো ছিল সেগুলো এখনও ঝুঁকিপূর্ণভাবে চলছে। শ্রেণিকক্ষ না থাকায় জরাজীর্ণ একটি মিলনায়তন কক্ষে ক্লাস নেওয়া হয়। ক্লাস চলাকালে ভবনের ছাদের পলেস্তারা খসে শিক্ষার্থীদের মাথায় পড়ে। সেই ভাঙা অংশ সরিয়ে আবারও সেখানেই চলে ক্লাস। এতে যে কোনো মুহূর্তে বড় রকম দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
প্রশিক্ষণার্থী মাসুদ রানা জানান, এখানকার ডাইনিংয়ের অবস্থা ভালো নয়। রান্নাঘরের সঙ্গে ডাইনিং এক হওয়ায় ধোঁয়ার মধ্যেই খাওয়া-দাওয়া সারতে হয়। বিকল্প বিদ্যুৎ ব্যবস্থা না থাকায় খাওয়ার সময় বিদ্যুৎ চলে গেলে অসুবিধায় পড়তে হয়। তাছাড়া পানি সরবরাহের অবস্থা খুবই খারাপ। কিছুদিন পরপর পানির পাইপ ফেটে গিয়ে পানি সরবরাহের বিঘœ ঘটে। ইনস্টিটিউট চত্বর ঝোপঝাড়ে পরিপূর্ণ থাকায় এখানে সাপের উপদ্রব দেখা যায়। এত বড় ইনস্টিটিউটে বিনোদনের কোনো ব্যবস্থা নেই। প্রত্যেক আবাসন এলাকায় দুটি করে গোসলখানা রয়েছে। কিন্তু সেখানে থাকে ৪০-৪৫ জন প্রশিক্ষণার্থী। এ কারণে তাদের কষ্ট পেতে হয়।
প্রশিক্ষণার্থী রাফিয়া আক্তার জানান, তাদের আবাসন ব্যবস্থা ঝোপঝাড়ের মধ্যে অবস্থিত। এখানকার কক্ষগুলো খুবই ছোট। ওই ছোট কক্ষে পাঁচ-ছয়জন করে থাকতে হয়। এছাড়া গোসলখানা খুবই ছোট। এক কথায় আবাসনসহ অন্য অনেক সমস্যার মুখোমুখি হয়ে আমাদের প্রশিক্ষণ নিতে হচ্ছে।
আরেক প্রশিক্ষণার্থী পাপড়ি রায় জানান, এখানে হাঁটার পথগুলো জঙ্গলে পরিপূর্ণ থাকার কারণে হাঁটা যায় না। এত বড় এলাকায় মেয়েদের জন্য বসা বা বিনোদনের কোনো ব্যবস্থা নেই। এছাড়া পানি সংকটে থাকতে হয় সপ্তাহের বেশিরভাগ দিন। ডাইনিংয়ে খাবার খেতে রাতের অন্ধকারে জঙ্গলের ওপর দিয়ে যেতে হয়, যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ ডা. শিশির কুমার বিশ্বাস জানান, নানা সমস্যা নিয়ে এ ইনস্টিটিউট চলছে। ১৯৭৮ সালের পর থেকে কোনো নির্মাণকাজ এ প্রতিষ্ঠানে হয়নি। ভগ্নদশা মিলনায়তনেই ছাত্রছাত্রীদের ক্লাস নেওয়া হয়। আবাসনের জন্য নতুন কোনো ভবন নির্মাণ না হওয়ায় বেশ কষ্টে ছাত্রছাত্রীদের থাকতে হচ্ছে। এতজন ছাত্রছাত্রীর থাকার জায়গা সংকুলান হয় না। ছাত্রীদের জন্য আলাদা কোনো আবাসন ব্যবস্থা না থাকায় তাদের থাকার সংকট রয়েই যাচ্ছে। কোনোভাবে এটা পূরণ করা যাচ্ছে না। জরাজীর্ণ আবাসনেই তাদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রাণিসম্পদ অধিদফতরে আলমডাঙ্গা কুমারী ভেটেরিনারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের বিভিন্ন সমস্যাগুলো লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। ভবন সংস্কার না করে নতুন ভবন নির্মাণের দাবি জানান তিনি।
