নিজস্ব প্রতিবেদক: শীতের সবজি বাজারে এলেও দাম এখনও সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে আসেনি। গত সপ্তাহের তুলনায় কয়েকটি সবজির দাম কমলেও বিদায়ী ঋতুর সবজির দাম বেড়ে চলেছে। আর বাজারে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা কেজি দরে, যা গত মাসে ৫৫-৬০ টাকা ছিল। ১১০-১২০ টাকার দেশি পেঁয়াজের দাম উঠেছে ১৪০-১৫০ টাকায়। তবে ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ কেনা যাচ্ছে ১২০ টাকার মধ্যে। রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজারে গতকাল শুক্রবার সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ভারতীয় টমেটো ১০ টাকা কমে ১৩০-১৪০, কাঁচা টমেটো ১০০, চায়না গাজর ১৫০, শিম কেজিতে ২০ টাকা কমে ১০০, লম্বা বেগুন ৮০, সাদা গোল বেগুন ৮০-১০০, কালো গোল বেগুন ১০০-১২০, শসা ৬০-১২০ এবং উচ্ছে ও করলা ১০০ টাকায় বিক্রি হয়।
এছাড়া কাঁকরোল ১২০ টাকা, পেঁপে ৫০, মূলা ৬০, ঢ্যাঁড়শ ৮০-১০০, পটোল ৮০-১০০, চিচিঙ্গা ৮০, ধুন্দল ৬০, ঝিঙা ৮০, বরবটি ১০০, কচুর লতি ৮০, কচুরমুখী ৮০, মিষ্টিকুমড়া ৬০, কাঁচা মরিচ ১৬০ এবং ধনেপাতার দাম ৫০ টাকা কমে ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়।
আর মানভেদে প্রতিটি লাউ ৮০ টাকা, চালকুমড়া ৮০, ফুলকপি ৬০ ও বাঁধাকপি ৬০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি হালি কাঁচকলা ৪০ টাকা ও প্রতি হালি লেবু বিক্রি হয় ৩০-৫০ টাকা করে। গত সপ্তাহের বাজার পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, প্রতি কেজিতে লম্বা বেগুনের দাম বেড়েছে ২০ টাকা, কাঁকরোলের দাম বেড়েছে ২০, দেশি শসার দাম বেড়েছে ২০, করলার দাম বেড়েছে ২০, ঢ্যাঁড়শের দাম বেড়েছে ২০, দেশি পটোলের দাম বেড়েছে ২০, চিচিঙ্গার দাম বেড়েছে ২০ ও বাঁধাকপির (প্রতিটি) দাম বেড়েছে ১০ টাকা। এছাড়া অন্যান্য সবজির দাম রয়েছে অপরিবর্তিত।
সবজির দাম বেড়ে যাওয়ার প্রসঙ্গে সবজি বিক্রেতা আল আমিন বলেন, এখন যেসব সবজির সিজন শেষ সেগুলোর দাম বাড়তি। কারণ এগুলো এখন পাওয়া যাবে না। শীতকালীন সবজির দামও কেন কমছে না জানতে চাইলে তিনি বলেন, বন্যার কারণে উৎপাদন ঠিকমতো হয়নি বলে এখনও সবজি ঠিকমতো ওঠেনি। তাই এখনও দাম কিছুটা বেশি। আরেক বিক্রেতা সাদিক হোসেন বলেন, সবজির দাম অনেকটাই কমে গেছে, আরও কমবে। নতুন সবজি ঠিকঠাকভাবে আসা শুরু করলেই আরও দাম কমে যাবে। এদিকে বাজার করতে আসা কুদ্দুস হোসেন বলেন, ব্যবসায়ীদের দাম বাড়াতে অজুহাত সবসময় প্রস্তুতই থাকে। কোনো না কোনো অজুহাত তাদের থাকবেই।
আরেক ক্রেতা মহসিন মিয়া বলেন, কবে শেষ ৫০ টাকার নিচে সব সবজি কিনতে পেরেছি, সেটা আমরা ভুলে গিয়েছি। যারা গরিব মানুষ তারা ভালো নেই। গত সপ্তাহের তুলনায় দেশি ও ভারতীয় পেঁয়াজের দাম কমেছে প্রতি কেজিতে ১০ টাকা করে। চায়না আদার দাম কমেছে ২০ টাকা। অপরদিকে ভারতীয় আদার দাম ২০ টাকা কমেছে। এছাড়া অন্যান্য পণ্যের দাম রয়েছে অপরিবর্তিত।
গতকাল বাজারে আকার ও মানভেদে ক্রস জাতের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়। এর মধ্যে ছোট পেঁয়াজ ও বড় সাইজের পেঁয়াজ একই দামে বিক্রি হচ্ছে। আর মানভেদে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয় ১৫০ টাকা ও ভারতীয় পেঁয়াজ ১০০-১১০ টাকা করে। এছাড়া লাল আলু ৭০ টাকা, সাদা আলু ৭০ টাকা, বগুড়ার আলু ৮০ টাকা, দেশি রসুন ২৬০ টাকা, চায়না রসুন ২৪০ টাকা, চায়না আদা ২৬০ টাকা ও নতুন ভারতীয় আদা ১৪০ টাকা দরে বিক্রি হয়। আলু-পেঁয়াজের দাম কেন কমছে নাÑজানতে চাইলে বিক্রেতা শরীফ বলেন, নতুন আলু-পেঁয়াজ না ওঠা পর্যন্ত এগুলোর দাম কমার সম্ভাবনা নেই। নতুনগুলো এলেই এগুলোর দাম অনেকটা কমে যাবে। তিনি বলেন, যদিও এখন বাজারে ভারতীয় নতুন আলু পাওয়া যাচ্ছে, তবে সেগুলোর দাম এখন অনেক বেশি।
এছাড়া গতকাল বাজারে গরুর মাংস বিক্রি হয় ৭৫০ টাকা কেজি দরে। খাসির মাংস বিক্রি হয় এক হাজার ১০০ টাকা কেজি দরে। এছাড়া ওজন অনুযায়ী ব্রয়লার মুরগি ১৮০-২০৫ টাকা, কক মুরগি ২৯০-৩০০, লেয়ার মুরগি ২৮৫-৩০০ ও দেশি মুরগি ৫৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ফার্মের মুরগির প্রতি ডজন লাল ডিম ১৪৪-১৪৫ ও সাদা ডিম ১৪০-১৪৫ টাকা। এক্ষেত্রে দেখা যায়, গত সপ্তাহের তুলনায় ব্রয়লার মুরগি দাম বেড়েছে সাত টাকা, কক মুরগির দাম কমেছে দুই টাকা, লেয়ার মুরগির দাম কমেছে তিন থেকে ১০ টাকা এবং দেশি মুরগির দাম বেড়েছে ৫০ টাকা। আর প্রতি ডজনে ফার্মের মুরগির লাল ও সাদা ডিমের দাম বেড়েছে চার-পাঁচ টাকা।
এছাড়া বাজারে আকার ও ওজন অনুযায়ী ইলিশ মাছ ৮০০ থেকে এক হাজার ৭০০ টাকা, রুই মাছ ৩৫০ থেকে ৬০০ টাকা, কাতল মাছ ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা, কালবাউশ ৪০০ থেকে ৮০০ টাকা, চিংড়ি ৭৫০ থেকে এক হাজার ৪০০ টাকা, কাচকি মাছ ৬০০ টাকা, কই মাছ ২০০-৬০০ টাকা, পাবদা মাছ ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, শিং মাছ ৪০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকা, টেংরা ৪৫০ থেকে ৬০০ টাকা, বেলে এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টাকা, বোয়াল ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা, কাজলী মাছ ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা, শোল ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা, মেনি মাছ ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা, চিতল মাছ ৭০০ থেকে এক হাজার টাকা ও রূপচাঁদা মাছ এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়।
গতকাল বাজারে ছোট মসুরের ডাল ১৩৫ টাকা, মোটা মসুরের ডাল ১১০ টাকা, বড় মুগ ডাল ১৪০ টাকা, ছোট মুগ ডাল ১৭০ টাকা, খেসারি ডাল ১১০ টাকা, বুটের ডাল ১৪৫ টাকা, মাষকলাইয়ের ডাল ১৯০ টাকা, ডাবলি ৭৫ টাকা, ছোলা ১৩০ টাকা, প্যাকেট পোলাওয়ের চাল ১৫০ টাকা ও খোলা পোলাওয়ের চাল মানভেদে ১১০-১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। আর প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬৭ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল ১৬৫ টাকা, প্যাকেটজাত চিনি ১৩৫ টাকা, খোলা চিনি ১৩০ টাকা, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৫০ টাকা, আটা দুই কেজির প্যাকেট ১১৫ টাকা ও খোলা সরষের তেল প্রতি লিটার ১৮০ টাকায় বিক্রি হয়। প্রতি লিটারে খোলা সরষের তেলের দাম কমেছে ১০ টাকা।