আলুর দামে ধস বিপাকে জয়পুরহাটের কৃষক ব্যবসায়ী ও হিমাগার মালিক

 

শামীম কাদির, জয়পুরহাট:জয়পুরহাটে আলুর বাজার ধসের কারণে ঋণ দিয়ে বিপাকে পড়েছেন হিমাগার মালিক। ফলে হিমাগার মালিকদের প্রায় ১৮ কোটি টাকা লোকসানের আশঙ্কা করা হচ্ছে। অন্যদিকে সংরক্ষিত আলুর বিপরীতে হিমাগার থেকে নেওয়া ঋণের টাকা ও ভাড়া পরিশোধের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন আলু ব্যবসায়ী ও কৃষক।

জেলা কৃষি বিভাগ জানায়, আলু সংরক্ষণের জন্য এ জেলায় ১৬টি হিমাগার আছে, যেখানে অন্তত ১৬ লাখ বস্তা আলু সংরক্ষণ করা সম্ভব। হিমাগার মালিকরা জানান, অধিক লাভের আশায় ব্যাংক থেকে কোটি কোটি টাকা ঋণ নিয়ে তা আলু সংরক্ষণকারী ব্যবসায়ী ও কৃষকদের মধ্যে বস্তাপ্রতি ৫০০-৭০০ টাকা ১৬ শতাংশ সুদে বিতরণ করা হয়। কিন্তু ব্যাপক হারে আলুর দরপতনের কারণে হিমাগার থেকে গৃহীত ঋণ পরিশোধের ভয়ে ব্যবসায়ী ও কৃষকরা গা-ঢাকা দিয়েছেন। এ পরিস্থিতিতে তাদের প্রায় ১৮ কোটি লোকসান গুনতে হবে।

জানা যায়, উৎপাদন মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আলুর বাম্পার ফলন হয়। আলুচাষি ও ব্যবসায়ীরা অধিক লাভের আশায় সে সময় বাজারে আলু বিক্রি না করে এলাকার হিমাগারগুলোয় সংরক্ষণ করেন। তাছাড়া আলু ব্যবসায়ীরা অধিক মুনাফা লাভের আশায় নিজেদের মূলধন ছাড়াও হিমাগারে সংরক্ষিত আলুর বিপরীতে মোটা অঙ্কের ঋণ নেন। ঋণের টাকায় অতিরিক্ত আরও আলু কিনে হিমাগারে সংরক্ষণ করেন। কিন্তু আলুর দর পতনে চাষি ও ব্যবসায়ীরা হিমাগার থেকে আলু তুলছেন না।

বর্তমানে গ্র্যানোলা (সাদা) জাতের আলু প্রতি বস্তা ১২০-১৫০ টাকায়, কার্ডিনাল ও স্টিক (লাল) জাতের আলু প্রতি বস্তা ৩৭০-৫০০ টাকায়, ডাইমন্ড (সাদা) জাতের আলু প্রতি বস্তা ৪৫০-৪৮০ টাকায়, দেশি পাকরি (লাল) জাতের আলু প্রতি বস্তা ৪০০-৪২০ টাকায়, রুমানা (পাকরি) জাতের আলু প্রতি বস্তা ২৮০-৩০০ টাকায় এবং ক্যারেজ আলু প্রতি বস্তা ২০০-২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

গত বছর এ সময়ে প্রতিটি হিমাগারে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের সংরক্ষণকৃত আলুর বস্তা বের করে দিতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়েছিল শ্রমিক ও কর্মচারীদের। কৃষক ও ব্যবসায়ীরা গত বছর এ সময় তাদের সংরক্ষণকৃত আলুর বস্তা বের করে নেওয়ার জন্য ভিড় করলেও এ বছর চিত্র অন্যরূপ। বিভিন্ন হিমাগারে আলু সংরক্ষণকারী কৃষক ও ব্যবসায়ীদের উপস্থিতি অপ্রতুল। ফলে হিমাগারগুলোয় সংরক্ষিত আলুর সিকি পরিমাণ অংশও এখন পর্যন্ত বের হয়নি।

এক আলু ব্যবসায়ী জানান, চলতি মৌসুমে তিনি এক হিমাগারে ৩০ হাজার বস্তা আলু সংরক্ষণ করে ঋণ নিয়েছেন। আলুর দর পতনের কারণে এখনও তার ১২ হাজার বস্তা আলু অবিক্রীত রয়েছে। ঋণ পরিশোধের ভয়ে তা তুলতে যাননি।

আরবি স্পেশালাইজড হিমাগারের ব্যবস্থাপক গোলাম মোস্তফা জানান, চলতি বছর এ হিমাগারে এক লাখ ৬৫ হাজার ৩২০ বস্তা সংরক্ষণ করা হয়। সংরক্ষিত আলুর বিপরীতে কোম্পানি ব্যাংক থেকে সাত কোটি টাকা ঋণ নেয়। হিমাগারে সংরক্ষিত আলুর বিপরীতে ব্যবসায়ী ও কৃষকদের মধ্যে পাঁচ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়। ঋণ শোধের ভয়ে ব্যবসায়ী ও কৃষকরা পলাতক রয়েছেন। তাই বাধ্য হয়ে অত্যন্ত কম দরে আলু বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে করে কোম্পানির প্রায় তিন কোটি টাকা লোকসান হবে।